শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

টঙ্গী-চান্দনা বেহাল

ঈদযাত্রায় মহাসড়হ-

| প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মোঃ হেদায়েত উল্লাহ, টঙ্গী থেকে : পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ইট শুরকি আর বিটি বালি দিয়ে গর্ত ভরাট করে যে জোড়াতালির সংস্কার কাজ করা হয়েছে তা গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই আবার নষ্ট হয়ে পূর্বের ন্যায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, টঙ্গী স্টেশন রোড, চেরাগআলী, গাজীপুরা সাতাইশ, বোর্ডবাজার, সাইনবোর্ড, মালেকের বাড়ি, বাসন সড়ক ও ভোগড়া বাইপাস এলাকায় অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি জমে গর্ত তৈরি হওয়ায় ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। অপরদিকে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে কর্দমাক্ত ও ময়লার ডাম্পিং স্টেশন থাকায় বড় গাড়িগুলো এক লাইন দিয়ে চলছে। এতে মহাসড়কটি সরু হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। ইতিমধ্যে ছোট বড় গর্তগুলোকে সামান্য ইট-শুরকি, বিটি বালু ও পিচ দিয়ে অস্থায়ীভাবে সংস্কার করা হয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই অস্থায়ী সেই সংস্কার কাজ ভেস্তে যাচ্ছে। তবে মহাসড়কে কিছুদিন ধরে চলা জোড়াতালির সংস্কার কাজকে লোক দেখানো বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
এদিকে ঈদ উপলক্ষে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে ভারি যানবাহন আটকা পড়ছে এবং মহাসড়কে যানজট পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কটি একটি অত্যন্ত ব্যাস্ততম সড়ক এবং এই মহাসড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করে। সেখানে ইট সুরকি আর বিটি বালু ফেলে কেন এই নি¤œমানের সংস্কার করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, এই কাজের বরাদ্ধ ও নির্দেশনা মোতাবেকই কাজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মহাসড়ক সংস্কার করার প্রয়োজন তা করা হয়েছে। সেই সংস্কার কাজ কতদিন টেকসই হবে তার গ্যারান্টিতো আমাদের কাছে নেই। উপর থেকে যেভাবে নির্দেশনা আসে আমরা সেভাবেই কাজ করি।
অন্যদিকে, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ যে গতিতে বা যে ধরণের আধুনিক ব্যবস্থাপনায় হওয়া উচিৎ তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে ভুক্তভোগিদের দাবি। বিআরটি প্রকল্পের অধিনে মহাসড়কের পাশে ড্রেন নির্মান করতে গিয়ে যত্রতত্র খোঁড়াকুড়ি করে মাসের পর মাস রেখে দিয়েছে। নতুন ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক স্থানে পুরাতন ড্রেনও বন্ধ করে দেওয়ায় ঐ স্থানে সামান্য বৃষ্টি হলেই মহাসড়কে হাটুর উপরে পানি জমে যায়। এক দুই দিন পর পানি নেমে গেলেও সেই সব স্থানে কাদামাটিতে একাকার হয়ে থাকতে দেখা যায়। যার ফলে মাইলের পরম মাইল তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এই অবস্থা টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত অন্তত ৩০-৪০ জায়গায় দেখা গেছে। বিআরটি প্রকল্পের কাজের গতিও খুবই মন্থর বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে জনদুর্ভোগ কমানো এবং করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন সমীক্ষা ও কর্মশালা করে যে সব সুপারিশ করা হয়েছিল তা মেনে চললে সাধারণ মানুষকে এত ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
স্থানীয়রা জানায়, সারা বছরই এই মহাসড়কটিতে বিভিন্ন পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী বাসের চাপ থাকলেও ঈদ এলে সেই চাপ আরও বেড়ে যায়। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। দুই একদিনের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে শুরু হবে ঘরমুখী মানুষের ঢল। কিন্তু ঈদের আগেই প্রতিনিয়ত যানজটে নাকাল হচ্ছে জনজীবন। সকাল থেকে শুরু হয় যানজট। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই যানজট রূপ নেয় তীব্র যানজটে। সন্ধ্যার পর যানজটের কারণে মহাসড়কটি প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী ব্রিজ থেকে গাজীপুর চান্দনা-চৌরাস্তা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে ব্যাপক পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানে স্থানে সৃষ্টি হওয়া খানাখন্দ আর পানিবদ্ধতায় যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। শনিবার টানা বৃষ্টির পর এই মহাসড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়িগুলো একই জায়গায় স্টার্ট বন্ধ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যাত্রীরা গাড়িতে বসে থেকে গরমে সিদ্ধ হয়ে ছটপট করলেও রাস্তায় পানি থাকায় গাড়ি থেকে নামতেও পারছিল না। এমন কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে এপথে চলাচলকারি যাত্রীদের প্রতিনিয়ত।
খানাখন্দ আর পানিবদ্ধতা ছাড়াও রয়েছে ওভারটেক, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, গাড়ি পার্কিং এবং সড়কের দুই পাশের অবৈধ দোকান-পাট, ও কাপড়ের বাজার। আর এসব কারণে কমানো যাচ্ছে না গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটির যানজট। ফলে তীব্র যানজটে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার কারণে যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগী, নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঈদের আগমুহুর্তে যানবাহনের চাপ আরো বৃদ্ধি পেলে খানাখন্দে ভরপুর এই সড়ক পাড়ি দিতে ঘরমুখি যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন সাধারণ যাত্রী ও গাড়ি চালকরা।
গাজীপুরের হাইওয়ে পুলিশ সুপার বলেন, যানজট নিরসনে গাজীপুর ট্রাফিক পুলিশ তৎপর রয়েছে, তবে রাস্তার বেহাল দশার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর-রশিদ বলেন, যানজট নিরসনের লক্ষে ফুটপাতে ও রাস্তার দুই পাশে গড়ে উঠা সব দোকান ও বাজার ইতোমধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি মহাসড়কে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন