বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮

রাশিয়ার আকাশে ১০ তারা

প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৮, ১০:৫৬ পিএম | আপডেট : ২:৩৬ এএম, ১৭ জুন, ২০১৮

আরেকটি সূর্য উদয়স্তের অপেক্ষা। রাশিয়ার বেজে উঠবে ফুটবলের মতম। যে মাতমে নাজবে পুরো বিশ্ব। ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এ এক মাসের এই আয়োজনে বিশেষ নজর থাকবে দুনিয়া মাতানো বেশ কিছু তারকাদের উপর। এক্ষেত্রে সবার আগে চলে আসবে লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নেইমারের নাম। আবার মোহাম্মদ সালাহ, ইসকো, দিবালাদের মত এমন অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার আছেন জারা নিজেকে বিশ্ব মঞ্চে মেলে ধরতে প্রস্তুত। এমন কয়েকজন শীর্ষ ফুটবলারদের নিয়ে আমাদের এই আয়োজন।
লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনা
যে কোন দলের রক্ষণভাগের জন্য ভয়ঙ্কর হুমকি হিসেবে আবির্ভুত হতে পারেন লিওনেল মেসি। গোল করা ও করানোয় তার মত দ্বিতীয়জন ফুটবল ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া ভার। তবে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে এখনো বড় কোন শিরোপা অর্জন করতে পারেননি বার্সেলোনার এই ফুটবল তারকা। ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে অতিরিক্ত সময়ে পরাজয় বরণ করে তার দল। ফুটবল জাদুকরের সামনে এটাই হয়ত শেষ সুযোগ। ক্লাবের হয়ে কাটিয়েছেন দুর্দান্ত মৌসুম। ৩৪ গোল করে হয়েছেন লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ইউরোপিয়ান ফুটবল মৌসুমে সর্বোচ্চ ৪৫ গোলও তার। সতীর্থদের কাছ থেকে যোগ্য সমর্থন পেলে ভালো কিছুর আশা করতেই পারে আর্জেন্টাইন ভক্তরা।

নেইমার, ব্রাজিল
নেইমারকে নিয়ে মাতামাতির শেষ নেই বিশ্ব ফুটবল অঙ্গনে। বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন। ২৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড পিএসজির হয়ে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন। মৌসুমে ৩০ ম্যাচে ২৮ গোলের পাশাপাশি করেছেন ১৬টি গোলে সহায়তা। একঝাঁক তারকা খেলোয়াড় থাকলেও বিশ্বকাপে সেলেসাওদের স্বপ্ন নেইমারকে ঘিরেই।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, পর্তুগাল
পর্তুগালকে ইউরো ২০১৬ আসরের খেতাব এনে দেয়া এই ফুটবল তারকা আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেন। তার মধ্যে গোল করার যে আগ্রাসী প্রবণতা রয়েছে তাতে জ্বলে পুড়ে ছাই হতে পারে যে কোন প্রতিপক্ষ। ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটিয়েছেন। টানা তৃতীয়বারের মত জিতেছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। মাদ্রিদের ক্লাবে মৌসুমে করেছেন ৪৪ গোল। শুধুমাত্র তার কারণেই আসন্ন বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট দল পর্তুগাল। ক্লাবের এই ধারাবাহীকতা জাতীয় দলে বয়ে আনতে পারলে প্রথমবারের মত পর্তুগালের হাতে বিশ্বকাপ শিরোপা উঠতে দেখা মোটেও অস্বাভাবীক মনে হবে না।

মোহাম্মদ সালাহ, মিশর
নেইমারের মত ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে ‘মিসরের মেসি’ খ্যাত মোহাম্মাদ সালাহকেও। লিভারপুলের হয়ে মৌসুমের শেষ ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে কাঁধে আঘাত পেয়ে পড়েছেন বিশ্বকাপ শঙ্কায়। এ নিয়ে মিশরিয়দের চিন্তার শেষ নেই। যদিও সালাহ ও মিশর ফুটবল কতৃপক্ষের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে বিশ্বকাপ মাঠে গড়াবার আগে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন সালাহ। মিশরীয় এই ফুটবল সেনসেশন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কাঁপিয়েছেন লিভারপুলের হয়ে। জীবনী শক্তিতে ভরপুর এই ফুটবল তারকা এরই মধ্যে জিতে নিয়েছেন ইংলিশ ফুটবলের বেশ ক’টি ব্যক্তিগত পুরস্কার। হয়েছেন এক মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের সর্বোচ্চ (৩২) গোলদাতা। ১৯৯০ সালের পর মিসরকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে এসেছেন বলতে গেলে ২৫ বছর বয়সী একাই।

অঁতোয়ান গ্রিজম্যান, ফ্রান্স
খুবই ক্ষীপ্র এবং ভয়ঙ্কর ফিনিশার এই ফুটবল তারকা প্রতিটি মুহুর্তেই প্রমান করে চলেছেন নিজেকে। সর্বশেষ তার জোড়া গোলে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ লাভ করেছে ইউরোপা শিরোপা। ২০১৬ ইউরো আসরেও সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার লাভ করেছেন গ্রিজম্যান।

লুইস সুয়ারেজ, উরুগুয়ে
বিশ্বকাপ মানেই সুয়ারেজের অদ্ভুদ সব কান্ড। আগের বিশ্বকাপে উচ্ছাকৃত হ্যান্ডবল করে গোলের হাত থেকে দলকে বাঁচাতে গিয়ে দেখেন লাল কার্ড। আর গত বিশ্বকাপে ইতালীয় এক খেলোয়াড়ের কানে কামড় দিয়ে নিষিদ্ধ হন ৮ ম্যাচ। আলোচিত এই ফুটবল তারকা এখনো যে কোন দলের রক্ষণভাগের বিরুদ্ধে আতংক ছড়িয়ে যাচ্ছেন। বার্সেলোনার জার্সিতে এর প্রমাণ দিয়ে আসছেন কয়েক মৌসুম ধরেই। আসছে বিশ্বকাপে যে কোন দলের জন্যই বড় দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারেন এই স্ট্রাইকার।

হ্যারি কেন, ইংল্যান্ড
টোটেনহ্যামের সঙ্গে অসাধারণ এক মৌসুম কাটানো এই ইংলিশ তারকা দারুন আত্মবিশ্বাসী ও দক্ষ এক গোলদাতা। তার কাঁধেই নির্ভর করেছে ইংল্যান্ডের আশা ভরসা। দলের দায়ীত্ব পড়েছে তার কাধে।

কিলিয়ান এমবাপে, ফ্রান্স
বয়স এখনো ১৯, তারপরও ফুটবল ইতিহাসে দ্বিতীয় দামী খেলোয়াড়ের খাতায় নাম উঠেছে তার। আগামী দিনের ফুটবল মাতাতে সব ধরণের পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছেন এমবাপে। ফ্রান্সেরও প্রত্যাশা আসন্ন বিশ্বকাপে অসাধারণ কিছু প্রদর্শন করতে সক্ষম হবেন পিএসজি তারকা।

সার্জিও আগুয়েরো, আর্জেন্টিনা
হাঁটুর ইনজুরির কারণে ম্যানচেস্টার সিটির এই ফুটবলার মৌসুমের শেষভাগে বিশ্রামে চলে গিয়েছিলেন। তার আগে কাটিয়েছেন দুর্নান্ত মৌসুম। অতিরিক্ত বিশ্রাম আশীর্বাদ হয়েও আসতে পারে এই স্ট্রাইকারের জন্যে। দলের সঙ্গে অনুশীলন করছেন নিয়মিত। জাতীয় দলের জার্সিতে অনেকটা মিয়¤্রাণ হলেও এমন প্রতিভাধর খেলোয়াড়দের নিয়ে বাজি ধরাই যায়।

আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, স্পেন
নিজের চমক লাগানো ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছেন এই স্প্যানিশ। সর্বশেষ ২০১০ সালে তার গোলেই বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করেছির স্পেন। বর্তমান বিশ্বে মাঝমাঠে তার মত স্থপতি দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া ভার। স্পেনের সাফল্যের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন সাবেক এই বার্সা তারকা।


বিশ্বকাপের জানা-অজানা
১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে বসে বিশ্বকাপের প্রথম আসর। এখন সেটা পরিচিতি পেয়েছে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ হিসেবে। বিচিত্র সব ইতিহাস, বিচিত্র সব ঘটনা-প্রবাহের সাক্ষী
বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই
ক্রীড়া-উৎসব। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে
এমনি বিচিত্র কিছু তথ্য
থাকছে এই
পর্বে।
১ প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ আয়োজন করছে রাশিয়া।
২ এ নিয়ে দুইবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব পার হতে পারেনি চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি। বিশ্বকাপ নিশ্চিত হওয়ার পর দুজন কোচ ছাঁটাই করেছে সউদি আরব।
৩ খেলোয়াড় হিসেবে সবচেয়ে বেশিবার (৩টি) বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে।
৪ মাত্র ৪টি দল একক কোন বিশ্বকাপ আসরে সব ম্যাচ জিতেছে। উরুগুয়ে (১৯৩০, ৪), ইতালি (১৯৩৮, ৪), ব্রাজিল (১৯৭০, ৬ এবং ২০০২,৭)।
৫ এক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড রাশিয়ার ওলেগ সালেনকোর (১৯৯৪, প্রতিপক্ষ ক্যামেরুন)।
৬ স্বাগতিক হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছে ৬টি দল।
৭ বিশ্বকাপে অন্তত ১০ গোল করেছেন ৭ জন খেলোয়াড়। সবচেয়ে কম সময়ে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড। ১৯৮২ সালে এল সালভাদরের বিপক্ষে ৫৯ থেকে ৭৬ মিনিটের মধ্যে হ্যাটট্রিক করেছিলেন হাঙ্গেরির লা¯েøা কিস।
৮ এ পর্যন্ত মাত্র আটটি দল বিশ্বকাপ জিতেছে।
৯ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়। ১৯৮২ বিশ্বকাপে এল সালভাদরকে ১০-১ গোলে হারিয়েছিল হাঙ্গেরি।
১০ এশিয়ার একমাত্র দল হিসেবে ১০টি বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া।
১১ বিশ্বকাপে সবচেয়ে দ্রæততম গোল হাকান সুকুরের। ২০০২ সালে তুর্কির এই খেলোয়াড় ম্যাচের ১১ সেকেন্ডে গোল করেছিলেন।
১২ ১২টি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্বকাপের খেলা।
১৩ এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল ফ্রান্সের জাঁ ফন্টেইন।
১৪ বিশ্বকাপে সর্বশেষ ১৪ ম্যাচে স্পেন ড্র করেনি।
১৫ ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের এটি ১৫ তম বিশ্বকাপ।
১৬ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা মিরো¯øাভ ক্লোসার গোল ১৬টি।
১৭ টানা জয়হীন থাকার রেকর্ড। ১৯৬২ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত টানা ১৭ ম্যাচ কোন জয় পায়নি বুলগেরিয়া।
১৮ বিশ্বকাপে ১৮টি ম্যাচ খেলেছে কলম্বিয়া। প্রত্যেক ম্যাচেই অন্তত একটি গোল হয়েছে।
১৯ দক্ষিণ আফ্রিকা বাদে বাকি ১৯ স্বাগতিক দল দ্বিতীয় পর্ব খেলেছে।
২০ বিশ্বকাপজয়ী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হেরেছে জার্মানি (২০)। সবচেয়ে কম জয় উরুগুয়ের (২০)।
২১ একমাত্র দল হিসেবে ২১টি বিশ্বকাপেই অংশ নিয়েছে ব্রাজিল।
২২ সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের টনি মিওলা (১৯৯০, প্রতিপক্ষ চেকোস্লোভাকিয়া)।
২৩ ফাইনাল না খেলে এক টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ফ্রান্সের (১৯৫৮)। সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলে গ্রুপ পর্ব পার হতে না পারার রেকর্ড স্কটল্যান্ডের।
২৪ বিশ্বকাপের শেষ চারে ওঠা দলের সংখ্যা।
২৫ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি হার মেক্সিকোর।
২৬ ২০৩৮ সালে অনুষ্ঠিত হবে ২৬তম বিশ্বকাপ। সেটি হবে বর্তমান ট্রফিতে শেষ বিশ্বকাপ, এরপর আর বিজয়ীর নাম লেখার জন্য কোনো স্থান বাকি থাকবে না এ ট্রফিতে।
২৭ বিশ্বকাপে ডেনমার্কের গোল সংখ্যা, সবগুলোই এসেছে ডি-বক্সের মধ্য থেকে।
২৮ সবচেয়ে বেশি লাল কার্ড দেখানো হয়েছে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে।
২৯ ১৪ বিশ্বকাপে স্পেনের ম্যাচ জয়ের সংখ্যা এটি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন