আল্লাহ্ তা‘আলার ঘর ‘কা‘বা শরীফ’ যেহেতু জগতের সর্বপ্রথম, মধ্যবর্তী ও কেন্দ্রস্থল। মহান আল্লাহ্র নূর ও ‘তাজাল্লী’র উৎসস্থল এবং ইসলামের পরিচয়জ্ঞাপক অন্যতম নিদর্শন বটে। তাই এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন মানে বাস্তবে মহান আল্লাহ্র প্রতি সম্মান প্রদর্শনেরই নামান্তর। বায়তুল্লাহ্ শরীফে পাপাচারণ ও বে-আদবী করা অন্যান্য স্থানের তুলনায় মারাতœক, জঘন্য।আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনÑ “আর যে ইচ্ছাপূর্বক তাতে পাপ-সীমা লঙ্ঘনে জড়িয়ে পড়ে,তাকে আমি মর্মন্তুদ শাস্তি আস্বাদন করাবো-”(২২ : ২৫)
তাফসীরে ইবনে কাসেিরর বর্ণনা মতে, এ আয়াতে ‘ইলহাদ’ মানে কবীরা গুনাহ। হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) যখন হজে যেতেন তখন দু’টি তাঁবু গাঁড়তেন। একটি ‘হারাম’ এর ভিতরে, অন্যটি ‘হারাম’ এর বাইরে। কখনও যখন নিজ পরিবার-পরিজন বা খাদেমদের এবং নিজের সঙ্গে সম্পর্কিত কাউকে কোন বিষয়ে কোনরূপ বকাঝকা করতে ইচ্ছা করতেন তখন হারাম-এর বাইরের তাঁবুতে চলে গিয়ে করতেন। লোকজন তাঁকে দু’টি তাঁবু স্থাপনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে, তিনি জবাবে বললেন, “মানুষ ভর্ৎসনা ও অসন্তোষের সময় ‘আল্লাহর শপথ! কক্ষনো নয়’/‘হ্যাঁ, আল্লাহ্র কসম!’Ñ এমন সব কড়া কথা বলে থাকে। আর এগুলোও তো ‘হারাম’ সীমার মধ্যে ‘ইলহাদ’-এর অন্তর্ভ‚ক্ত!”
হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রা) বলেন,“ হারাম এরিয়ার বাইরে অন্যান্য স্থানে, পাপের ইচ্ছা করলেই পাপ লেখা হয় না; যতক্ষণ না পাপ সংঘটন করে। কিন্তু হারাম এরিয়ায় কোন পাপের পাকা নিয়ত করলেই পাপ লেখা হয়ে যায়।”
বায়তুল্লাহ্ শরীফে বে-আদবীর বিভিন্ন পন্থা-প্রক্রিয়া:
* ‘হারাম’ সীমার মধ্যে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া বা গাল-মন্দ করা।
* হারাম-এর সীমার ভেতরে যিনা করা বা খারাপ নিয়তে ‘গায়রে-মাহ্রাম’দের প্রতি তাকানো।
* রসুন,পিয়াজ ইত্যাদি দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু খেয়ে হারাম-এর সীমানায় প্রবেশ করা।
* তামাক বা সিগারেট ইত্যাদি পান করার পর ভালোরকম কুল্লি না করে হারাম-সীমায় প্রবেশ করা।
* ঘামের দুর্গন্ধযুক্ত কাপড় পরিধান করে হারাম-এরিয়ায় প্রবেশ করা।
* কোন ভাগ্যবান ব্যক্তির যদি কাবা শরীফের ভিতরে প্রবেশ করার সৌভাগ্য হয়, তার জন্য কাবা’র ছাদের দিকে তাকানো বে-আদবী।
* কোন ওযর বা কারণ ব্যতীত বায়তুল্লাহ শরীফের ছাদে আরোহণ করা।
* হারাম শরীফের উদ্দেশ্যে যাওয়া লোকজনকে কষ্ট দেওয়া।
* জাগতিক কোন উদ্দেশ্যে-স্বার্থকে কেন্দ্র করে মক্কা শরীফ যাওয়া অথচ সম্মানীত কাবা’র যিয়ারত না করা।
* প্র¯্রাব-পায়খানা কালীন বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে মুখ করা।
* কোন মহিলা যদি ছোট বাচ্চাকে পেশাব করাবার সময় কিবলামুখী করায়, তা হলে তার এ বে-আদবীর পাপ নিজের ওপর বর্তাবে।
* বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে মুখ করে থু থু ফেলা।
* বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে পা মেলে বসা বা শোয়া।
* তাওয়াফরত অবস্থায় অকারণে বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে তাকানো।
* উযূবিহীন অবস্থায় বায়তুল্লাহ শরীফের ভেতরে প্রবেশ করা।
* ‘মসজিদুল-হারামে’ প্রবেশ করে জাগতিক বাক্যালাপে লিপ্ত হওয়া।
* ‘মসজিদুল-হারামে’ প্রবেশ করে শোরগোল বা চিৎকার করা।
* ‘মসজিদুল-হারামে’ বসে বায়ূ ত্যাগ করা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন