দেখতে দেখতে ফুরিয়ে এলো সময়। রাশিয়ায় বাজছে বিদায়ের করুণ রাগিনী। চার বছর যে অতিথির আপ্যায়নে অধীর অপেক্ষায় থাকা, সময়ের স্রোতে সেই ফুটবল বিশ্বকাপ চলে এসেছে শেষ মোহনায়। ৩২ দলের এই যাত্রায় সঙ্গী হারিয়ে কেবলমাত্র টিকে আছে ৪ দল। বাকিদের কথা না হয় বাদই দিলাম, আগের দুই আসরের মত ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই। দুইবারের শিরোপাধারী আর্জেন্টিনার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে শেষ ষোলয় এসে। আর কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে কেঁদে বিদায় নিতে হয়েছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকেও। তবে একটি জায়গা এই তিন বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে মিলিয়েছে এক বিন্দুতে। মেসি, নেইমার, ওজিলদের স্বপ্নভঙ্গের হন্তারক যে একটি ভেন্যুই, কাজান অ্যারেনা!
সুর আর ছন্দে শুরু হওয়া রাশিয়া বিশ্বকাপের ছন্দ কাটার শুরু গ্রুপ পর্ব থেকেই। এই ছন্দ পতনের সবচেয়ে সাক্ষী কাজান অ্যারেনা। বিশ্ব ফুটবলের নামী-দামি দলগুলোর স্বপ্ন ভেঙে চৌচির হয়ে যায় এখানেই। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নন্দিত খেলোয়াড়রাও এখানে নিজের দলকে জয় লাভ করাতে ব্যর্থ হয়েছেন। লিউনেল মেসি, নেইমার, ওজিলারা এখানে দেখাতে পারেননি কোন নৈপুন্য। বরং নিদারুন কষ্ট নিয়েই বিদায় নিতে হয় বিশ্বকাপের হেভিওয়েটদলগুলোকে। এই কাজান অ্যারেনাতেই কষ্টের নোনা অশ্রু মুছতে হয়েছে বিশ্বখ্যাত খেলোয়াড়দের। সেই হতাশার কান্নায় ডুবেছে তাদের দেশও।
১৬ জুন সি গ্রুপের ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে ২-১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয় অস্ট্রেলিয়া। ২০ জুন বি গ্রুপের ম্যাচে ১ গোলে স্পেনের কাছে পরাজিত হয় ইরান। ২৪ জুন এইচ গ্রুপে ৩ গোলে কলম্বিয়ার কাছে পরাজিত হয় পোল্যান্ড। ২৭ জুন এফ গ্রুপে ২ গোলে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে পরাজিত হয় সাবেক চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। তাদের আশা ছিল দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালো ২০১৩ সালে নির্মিত কাজান অ্যারেনা। ১৯৩৮ সালে সর্বশেষ প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল জার্মানি। এই কাজানেই ৮০ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে বিদায় নিতে হলো জার্মানদের।
৩০ জুন এই ভেন্যুর ৪৫ হাজার ৩ শ’৭৯ জন দর্শক সাক্ষী হয়েছেন আরেক করুণ বিদায়ের। বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট আর্জেন্টিনার স্বপ্ন হন্তারকের সাক্ষীও যে অভিশপ্ত এই কাজান। ধূঁকতে ধুঁকতে লিওনেল মেসির ষোল পর্বে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে মেসিদের হার এই কাজান স্টেডিয়ামেই। সেই ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে ১১ মিনিটে ফ্রান্সের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সামনে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয় আর্জেন্টিনা। ৫৭-৬৮ এই এগারো মিনিটেই আর্জেন্টিনার ডিফেন্স চিড়ে তিন গোল দেয় ফ্রান্স।
সেই শোক কাটিয়ে ওঠার ৬ জুলাই কোয়ার্টার ফাইনালে নেইমারদের খেলা পড়লো কাজানেই। সেই খেলায় ব্রাজিলের বিদায় নিশ্চিত করল বেলজিয়াম। যে ভেন্যুটি ফেবারিটের বিদায় ঘটাতেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। সেই ধারা অক্ষুন্ন রাখলো কাজান এরিনা। বেলজিয়ামের কাছে ব্রাজিলকে হারিয়ে দিলো ২-১ গোলের ব্যবধানে। ব্রাজিল এতগুলো গোলের সুযোগ পেলেও একমাত্র গোল ছাড়া আর কোন সুযোগই কাজে লাগাতে পারেনি। রাশিয়ার সবচেয়ে ঠান্ডা শহর বলে পরিচিতি কাজান। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানির মতো দর্শক প্রিয় দলের খেলার ভেন্যু নির্ধারিত হয় কাজান অ্যারেনা। বিশ্ব ফুটবলে সবচেয়ে জনপ্রিয় কয়েকটি দলের খেলা হয় এখানে। কাজান অ্যারেনা থেকেই এবারের বিশ্বকাপের আসরে বিদায় নিতে হয় তাদের।
এই বেদনাটা বিশ্বকাপেরও। ২০০৬ সালের পর যে এই প্রথম কোন লাতিন পরাশক্তি নেই বিশ্বআসরের সেমিফাইনালে! আগামী মঙ্গলবার সেন্ট পিটার্সবার্গে ফাইনালের টিকিত পেতে ‘ডার্ক হর্স’ বেলজিয়ামের প্রতিপক্ষ সাবেক চ্যাম্পিয়ন তারুণ্য নির্ভর ফ্রান্স। পরদিন দ্বিতীয় সেমি ফাইনালে মুখোমুখি দীর্ঘদিন পর শিরোপার স্বপ্নে বিভোর ক্রোয়েশিয়া ও ইংল্যান্ড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন