শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮

আধুনিকতার বিস্ময় পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম

রাশিয়ায় বাংলাদেশী দর্শকদের আচরণে উদ্বিগ্ন ফিফা

রেজাউর রহমান সোহাগ | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০১৮, ১১:২৫ পিএম

কৃত্রিম সৌন্দর্যে মোড়া ৪ দশমিক ৩ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট একটা দ্বীপ- ক্রেসতোভস্কি আইল্যান্ড। এই দ্বীপেই গড়ে তোলা হয়েছে রাশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ও আধুনিকতার মোড়কে জড়ানো সবচেয়ে সুন্দর ফুটবল ভেন্যু সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম। ফিনল্যান্ড উপসাগরের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে স্টেডিয়ামটির পায়ে। ফুটবল দেখতে এসে তাই প্রথমেই প্রেমে পড়তে হল পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামের। আগামীকাল এই ভেন্যুতেই অনুষ্ঠিত হবে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের মধ্যকার রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচ।
এমনিতেই আপন সৌন্দর্য ও স্থাপত্যশৈলীতে উজ্জ্বল স্টেডিয়ামটি। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে তাকে সাজানো হয়েছে আরো নতুন রূপে। যেন বিয়ের সাজে সাজানো হয়েছে কনেকে। বিশাল স্টেডিয়ামে প্রবেশদ্বারে ঠাই দাঁড়িয়ে সাবেক সিটি মেয়রের একটি প্রতিকৃতি। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যেই প্রায় ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ব্যায়ে সম্প্রতি নির্মাণ করা হয়েছে স্টেডিয়ামটি। স্টেডিয়াম জুড়েই প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়া। মেগা এই স্থাপত্য নির্মাণের জন্য বেছে নেয়া হয় জার্মানির একটি কোম্পানিকে, স্থপতি জাপানের কিশো কুরোকাওয়া। বিশাল স্টেডিয়ামটাকে তিনি তৈরী করেছেন একটি মহাকাশজানের আদলে। আবার দুর থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল একটা পিরিচ বসিয়ে রাখা হয়েছে ফিরল্যান্ড উপসাগরের কূলে। পুরো ভেন্যুর মাথার উপর রয়েছে সঙ্কোচন ও প্রসারণক্ষম বিশাল ছাদ। ভেতরের মাঠও দুই স্তর বিশিষ্ট। ফুটবলের মাঠকে নিচে নামিয়ে নতুন ইভেন্ট পরিচালনার উপযোগী মাঠও আছে এখানে। এছাড়া পুরো স্টেডিয়ামের তাপমাত্রা +২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার ব্যবস্থাও আছে। তার মানে শুধু ফুটবল নয়, যে কোন ধরণের সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগও আছে স্টেডিয়ামটিতে। শুরুতে অত্যাধুনিক স্টেডিয়ামটি তিন স্তর বিশিষ্ট করা হয়েছিল। পরে ফিফার পরীক্ষামূলক ফুটবল ম্যাচে মাঠে কম্পনের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। পরে ঝুঁকির কথা চিন্তা করে অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকটি তুলে নেয়া হয়।
স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে পরিবহণ পরিকাঠামো। চলতি বছরের শুরুতেই নির্মাণ করা হয়েছে নভোকারেস্তোভস্কি মেট্রো স্টেশন। ১২ লেন বিশিষ্ট ২৫ কিলোমিটার লম্বা এলিগেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে তৈরী করা হয়েছে বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে। ক্রেস্তোভস্কি আইল্যান্ডের সঙ্গে উত্তরের জেলা প্রিমোরস্কির সংযোগ রক্ষার জন্য গেল বছর নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টি নন্দন ব্রিজ। স্টেডিয়ামের মাথা স্পর্শ করে ব্রিজটি উড়াল দিয়েছে দক্ষিণের জেলা ভাসিলিওস্ত্রোভস্কির দিকে। পাশেই রাশিয়ার সবচেয়ে বড় গ্যাস কোম্পানি গ্যাসপ্রমের বিশাল সুউচ্চ ভবন। স্টেডিয়ামটির কো-স্পন্সরও তারা। এককথায় এখানকার পুরো স্থাপত্যশৈলী অবাক করার মত।
স্টেডিয়ামের পশ্চিম প্রান্ত থেকে একটা সিঁড়ি নেমে গেছে সাগর পাড়ে। এখানেই এখন পর্যটক আর ফুটবলপ্রেমীদের ভিড়। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিভিন্ন বর্ণের মানুষের আনাগোনায় মুখর সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম চত্বর। কেউ সেলফি তোলায়, কেউ নয়নাভিরাম দৃশ্যকে স্থিরচিত্রে ধারণ করে রাখতে ব্যস্ত।
পুরাতন কিরোভ স্টেডিয়ামকেই নতুন রূপে গড়ে তোলা হয়েছে সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম নামে। গেল বছর ফিফা কনফেডারেশন কাপের মাধ্যমে স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন করা হয়। আসরের উদ্বোধনী ও ফাইনাল ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়েছিল এখানে। চলতি বিশ্বকাপের সাতটি ম্যাচ রাখা হয়েছে এই মাঠে। সেমিফাইনাল ছাড়াও এখানে অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচও। বিশ্বকাপের পরেই স্টেডিয়ামটির মালিকানা চলে যাবে জেনিথ ফুটবল ক্লাবের হাতে। প্রয়োজনে জাতীয় দলও ব্যবহার করতে পারবে এটি। ২০২০ উয়েফা ইউরোর তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এখানে।
সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামেই ফিফার এন্টি ডোপিং ডিপার্টমেন্টে ডিসিসি (ডোপিং কন্ট্রোল সেপেরন) হিসেবে কর্মরত ৪ জন বিশেষজ্ঞের একজন ডা. মো. আব্দুল মতিন। প্যানেলের প্রধানও তিনি। প্যানেলের একমাত্র এই বাংলাদেশির আবাসস্থল ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সদর উপজেলার সুলতানপুর থানার দক্ষিণ জঙ্গল গ্রামে। এখানে এসেই তার সঙ্গে পরিচয়। রাশিয়াতে তিনি পিএইচডিরত।
আব্দুল মতিনের মত মানুষেরা যেখানে বৈশ্বিক এমন ইভেন্ট থেকে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছেন সেখানে ফিফা ফ্যান আইডি’র সুযোগ নিয়ে অনেকে বাংলাদেশকে করছেন কলঙ্কিত। বাংলাদেশ থেকে ফিফা ফ্যান আইডি প্রাপ্ত আছেন প্রায় চার হাজার। এর মাঝে ৪০ জনের মত রাশিয়ান পুলিশের হাতে আটক হয়েছে পার্শ্ববর্তি দেশ ফিনল্যান্ড ও পোল্যন্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার কারণে। শুধু বাংলাদেশী নয়, এই তালিকায় রয়েছে নাইজেরিয়া, মেক্সিকোসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকও। রাশিয়া তো বটেই ফিফাও এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। এমনকি আগামী কাতার বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ফ্যান আইডি দেয়ার ব্যাপারে দৃড় অবস্থানে যাওয়ার আভাসও দিয়েছে ফিফা। ২২ জুলাই থেকে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য চিরুনি অভিযান চালাবে বলে জানিয়েছে রাশিয়ান পুলিশ। বাংলাদেশী হিসেবে এমন খবর নিজেকে ছোট করে দেয়। আবার আব্দুল মতিনদের কথা ভেবে গর্বে বুক ভরে ওঠে।
বিশ্বকাপের বিশাল মহাজজ্ঞ চলে এসেছে শেষ প্রান্তে। আর মাত্র চারটি ম্যাচ বাকি। ৩২ দলের মধ্যে একে একে বিদায় নিয়েছে ২৮টি দল। বাকি রয়েছে চারটি। সেন্ট পিটার্সবার্গের এই স্টেডিয়ামেই আগামীকাল বাজবে আরো একটি দলের বিদায়ের সুর। বিজয়ী দল হাসবে ফাইনালের সুরে। একই মাঠে অঙ্কিত হবে আরো একটি হাসি-কান্নার বৈপরিত্যের অদ্ভুত আবেশে জড়ানো এক ছবি। ফুটবল তো এমন-ই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Borhan kobir ৯ জুলাই, ২০১৮, ১১:৫৫ এএম says : 0
বাংলাদেশ থেকে ফিফা ফ্যান আইডি প্রাপ্ত আছেন প্রায় চার হাজার। এর মাঝে ৪০ জনের মত রাশিয়ান পুলিশের হাতে আটক হয়েছে পার্শ্ববর্তি দেশ ফিনল্যান্ড ও পোল্যন্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার কারণে
Total Reply(0)
Mehjabin khannum ৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৬ পিএম says : 1
Dear Shohag Bhai, thanks for your writing. Enjoying all of your articles very informative and interesting. End of the article informed us about some Bangladeshi miscreants are trying to flee the country illegally. It's very sad. These Bangladeshi's should be hanged. Also Fifa should take strict action against Bangladesh football association too.
Total Reply(0)
Tuma hardworking ৯ জুলাই, ২০১৮, ৩:১৪ পিএম says : 0
This is really sad for football fans.
Total Reply(0)
Jibon Sarkar ৯ জুলাই, ২০১৮, ৪:১৮ পিএম says : 0
Bhai thanks for your informative report. I am a Bangladeshi living in Italy Rome. Here a lot of our country men come every year illegally because it's not possible to come here properly. It is our government's failure to have an effective foreign policy. We are being able to export labour legally so what should we do? It's a dilemma and has to be solved.
Total Reply(0)
Toma Ali ৯ জুলাই, ২০১৮, ৪:২২ পিএম says : 0
We're ashamed of this kind of behaviour. Sorry FIFA. But all the middle Eastern countries are sending our labours back so how would we sastain? Pls write about that.
Total Reply(0)
Habib ৯ জুলাই, ২০১৮, ৪:৫৬ পিএম says : 0
বাংলাদেশী হিসেবে এমন খবর নিজেকে ছোট করে দেয়। আবার আব্দুল মতিনদের কথা ভেবে গর্বে বুক ভরে ওঠে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন