শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ফ্রান্সের সামনে যখন বেলজিয়াম

রেজাউর রহমান সোহাগ | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৩ এএম, ১০ জুলাই, ২০১৮

দেখতে দেখতে রাশিয়া বিশ্বকাপের পরিধি ছোট হয়ে এসেছে। ২৮ দলের মধ্যে টিকে আছে চারটি দল, ম্যাচও বাকি মাত্র চারটি। আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফ্রান্স-বেলজিয়ামের মধ্যকার প্রথম সেমিফাইনাল। মস্কোর লুঝনিকির ফাইনালের নাম লেখাতে তরুণে উজ্জিবীত ফরাসিদের বিপক্ষে দেখা যাবে বেলজিয়ামের সোনালী প্রজন্মকে। দিদিয়ের দেশমের বিপরীত ডাগআউটে তারই একসময়ের সতীর্থ থিয়েরি হেনরিকে। আসর জুড়ে দল দুটির উজ্জ্বল পারফর্মান্সই বলছে জমজমাট একটা ম্যাচই অপেক্ষা করছে সেন্ট পিটার্সবার্গে।
খুব বেশি দিন আগে নয়, দিদিয়ের দেশমকে নিয়ে বিদ্রুপে মেতেছিল স্বয়ং ফরাসি গণমাধ্যম। ফ্রান্স দলে হাজারো খেলোয়াড় থাকলেও কারোরই নাকি সঠিক কোন ঠিকানা নেই। এক প্রকার তোপের মধ্যে থেকেই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করতে হয়েছে দেশমকে। কিন্তু গ্রুপ পর্ব সহজে পেরুনোর পর নক আউট পর্বে আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের বিপক্ষে তার পরিকল্পনা ব্যাপকভাবে কাজে দেয়ায় সেই গণমাধ্যমগুলোই এখন দেশমের প্রসংশায় পঞ্চমুখ।
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে গতির ঝলক দেখিয়ে বিশ্বকে চমকে দেয় ফ্রান্স। উরুগুয়ের বিপক্ষে রক্ষণ ছিল ইস্পাতসম দৃড়। দুই ম্যাচে দেখা গেছে ভিন্ন ফ্রান্সকে। দল একই, শুধু পরিকল্পনা আলাদা। প্রতিপক্ষের দূর্বল জায়গাগুলোর কথা বিবেচনা করে খেলার পরিকল্পনা বদলেছেন দেশম। ফলে দলের সেমিফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব অবশ্যই তার প্রাপ্য।
অলিভার জিরুদ ও কিলিয়ান এমবাপেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবহার করছেন দেশম। আসরে তিন গোল করা এমবাপেকে নিয়ে সবার উচ্চাশা এই ম্যাচেও। পক্ষান্তরে জিরুদ এখন পর্যন্ত প্রতিপক্ষে পোস্টে কোন শটই নিতে পারেননি। তারপরও জিরুদের উপর থেকে আস্থা হারাচ্ছেন না দেশম।
চলতি আসরে একটা বিষয় লক্ষণীয়- প্রতিটা দলেরই দুর্বল দিক আছে। উদাহরণ হিসেবে জার্মানি ও স্পেনকে তুলে ধরা যায়। যেখানে বলের দখল কিংবা দলে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের উপস্থিতি কোন কিছুই কাঙ্খিত জয় নিশ্চিত করতে পারেনি। জয়ের জন্য প্রয়োজন গোলের। সেই কাজটিই বেশ দক্ষতার সঙ্গে করছেন দেশম।
বেলজিয়াম ম্যাচে আরো একটা বিষয় নিশ্চয় ভাবাবে দেশমকে। ভাবনার বিষয়বস্তু তারই ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী দলের সতীর্থ থিয়েরি হেনরি। স্বদেশি ফ্রান্সকে বধ করার জন্যই যে বেলজিয়ামকে টোটকা দিচ্ছেন হেনরি। এবং তার টোটকা যে তুরুপের মত কাজ করছে তার প্রমাণ তো মাঠেই দিচ্ছেন হ্যাজার্ড-লুকাকু-ডি ব্রæইনরা। রবার্তো মার্টিনেজ প্রধান কোচ হলেও নেপথ্যে যে সহকারীর হাত রয়েছে এটা প্রকাশ্য বিষয়। ব্যাপারটা আরো প্রকাশ্যে আসছে প্রতিপক্ষ স্বদেশি ফ্রান্স বলেই।
কালও অনুশীলনে হেনরিকে লুকাকুদের সঙ্গে হাসি-তামাশা করতে দেখা গেছে। দেদভস্কের অনুশীলনে বেলজিয়াম দলকে দেখে মনেই হয়নি সেমিফাইনালের মত মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের চোখে-মুখে আত্মবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট। আসরে চার গোল করা লুকাকুর সঙ্গে বেশ কিছু সময় খুনসুটিতে মেতে থাকেন হেনরি। হ্যাজার্ডকে নিয়ে বাড়তি টোটকা দিচ্ছেন মার্টিনেজ। পেনাল্টি শট ঠেকানোর অনুশীলন করছেন কর্তোয়া। সবাই ব্যস্ত। প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের ত্রিব নেশা যেন আরো উজ্জিবীত করেছে দলটাকে।
মার্টিনেজের দলের প্রধান শক্তি দলীয় সংহতি। রাশিয়ায় তারা পা রেখেছিল ‘কালো ঘোরা’ তকমা নিয়ে। শারিরীকভাবে যেমন দলটি শক্তিশালী তেমনি মানষিকভাবেও হার না মানার একটা প্রবণতা দলে স্পষ্ট। জাপানের বিপক্ষে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও অসাধারণ প্রত্যবর্তন ও ব্রাজিলের মত ফেভারিট দলকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে দলটির। এ পর্যন্ত আসরে সবকটি ম্যাচে জিতেছে তারা। আরেকটু পিছনে তাকালে টানা ২৪ ম্যাচে তারা অপরাজিত। দলে গোল স্কোরার আছেন নয়জন। দলের প্রত্যেক সদস্যই তাদের নিজ নিজ দায়ীত্ব সম্পর্কে অবগত।
শুধু একটা দুশ্চিন্তা তাদের আজ থাকবে। দুই হলুদ কার্ডের খাড়ায় পড়ে আজকের ম্যাচে নিষিদ্ধ হয়েছেন দলের অন্যতম আস্থাভাজন ডিফেন্ডার থমাস মুনিয়ে। একই কারণে ফ্রান্সও এদিন পবে না ব্লাইস মাইতুদিকে। তার পরিবর্তে একাদশে ফিরতে পারেন করেন্তিন তলিসো।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে দুই দল অনেক পুরোনো প্রতিপক্ষ। এ পর্যন্ত তারা ৭৩বার মুখোমুখি হয়েছে। ৩০বার জিতেছে বেলজিয়াম, ২৪বার ফ্রান্স। তবে বিশ্বকাপে তারা মুখোমুখি হয়েছে মাত্র দুবার, দুবারই জিতেছে ফ্রান্স। সর্বশেষ সাক্ষাতে ২০১৫ সালের প্রীতি ম্যাচে ৪-৩ গোলে জিতেছিল রেড ডেভিলরা।
বিশ্বকাপে অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে অবশ্য ফ্রান্সই এগিয়ে। এটি হতে যাচ্ছে তাদের ষষ্ঠ সেমিফাইনাল। শেষ দুটি সেমিফাইনালে তারা হারেনি। পক্ষান্তরে এর আগে মাত্র একবার শেষ চারে খেলার অভিজ্ঞতা আছে বেলজিয়ামের। ১৯৮৬ সালের সেই মেক্সিকো বিশ্বকাপে ডিয়েগো ম্যারাডোনার জোড়া গোলে আর্জেন্টিনার কাছে ২-০ গোলে হার মানতে হয়েছিল। তৃতীয় স্থান নির্ধরণী ম্যাচেও ফ্রান্সের কাছে হারতে হয়েছিল অতিরিক্ত সময়ের গোলে ৪-২ ব্যবধানে।
তবে সোনালী প্রজন্মের বেলজিয়ামকে ঠিকই সমীহ করছে ফ্রান্স। দলটির অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানের মতে, ‘আমরা জানি এটা কঠিন একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে। রোমেলু লুকাকু শারিরীকভাবে ডিফেন্ডারদের ভোগাতে পারে। আমরা তার মত কোয়ালিটি খেলোয়াড়কে কোন সুযোগ দিতে চাই না।’ শুধু লুকাকু নয় হ্যাজার্ডকে নিয়েও বলতে হল রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডারকে, ‘এডেন হ্যাজার্ডের জন্য বলতে হয়, আমি লিলিতে থাকাকালিন তার বিপক্ষে খেলেছি। সে অনেক পরিপূর্ণ একজন খেলোয়াড়, ভালো ড্রিবলার। আমরা তাকে কোন জায়গা দিতে চাই না। এটা দলীয় প্রচেষ্টার অংশ।’
প্রতিপক্ষকে নিয়ে স্বতর্ক ব্রাজিল ম্যাচের গোলদাতা ডি ব্রুইনও, ‘যখন আপনি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠবেন তখন সাধারণ মানের প্রতিপক্ষ নিশ্চয় পাবেন না। ফ্রান্সের মত আমরা একই পর্যায়ে আছি। আমরা শারিরীক ও মানষিকভাবে পুরোটা দিয়েই চেষ্টা করব।’
লড়াইটা হবে মুলত ডি ব্রুইন-হ্যাজার্ড-লুকাকু বনাম কন্তে-গ্রিজম্যান-এমবাপেদের মাঝে। আরো ছোট করে বললে দুই চেলসি সতীর্থ হ্যাজার্ড ও কোন্তের মধ্যে। দেখা যাক দিন শেষে কে হাসিটা ধরে রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
তামান্না ১০ জুলাই, ২০১৮, ৪:০১ এএম says : 0
best of luck
Total Reply(0)
Dulal Ahmed ১০ জুলাই, ২০১৮, ৪:০১ এএম says : 0
এমবাপ ভাল প্লেয়ার খালী মাঠে গোল দিতে জানে
Total Reply(0)
Md Saddam ১০ জুলাই, ২০১৮, ৪:১৩ এএম says : 0
Mbape better then Messi. Because Messi is for Club mbape is for national team
Total Reply(0)
Chitro Das ১০ জুলাই, ২০১৮, ৪:১৪ এএম says : 0
Belgium win world cup
Total Reply(0)
Mohammed Sofiul Azam ১০ জুলাই, ২০১৮, ৪:৩৭ এএম says : 0
We are pray to Mighty ALLAH for Team France. Don't forget world cup football 2006 with Conspiracy. Oviusly / Must be win and world cup football 2018 Champion Team France .
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন