পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার সাউথখালী চরে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের বসবাস। যারা সবাই দিন মজুর ও জেলে। এখানকার এক বাসীন্দা ফরিদা বেগম। বয়স তার ৩৮ বছর। সাত সন্তানের জননী তিনি। আব্দুল হক ফরাজীর দ্বিতীয় স্ত্রী সে। আব্দুল হক পেশায় একজন দিন মজুর। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরেও রয়েছে ছয় সন্তান। ১৬ সদস্যের এই পরিবারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হক। ফরিদা বেগম সাত সন্তানের পাঁচজন নিয়ে আলাদা বসবাস করেন। তিনি সাউথখালী চরের আবাসনের একটি কক্ষে থাকেন।
ফরিদার বড় মেয়ে তানিয়া। বয়স ১৩ বছর। ঢাকায় একটি বাসায় ঝিয়ের কাজ করে। তার পরের মেয়েটি ১১ বছরের মানসুরা। সেও বড় বোনের অনুসারী। তাদের উপার্জন যোগ হয় ফরিদার সংসারে। ফরিদার সবার ছোট ছেলে সন্তানের বয়স মাত্র আট মাস। স্বামী আব্দুল হক ফরিদার তেমন কোন খোঁজখবর রাখেন না। তারপরও জীবিকার দায়ে শিশু সন্তানদের নিয়ে বলেশ্বর নদে জাল দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করেন ফরিদা। এভাবেই কোনোমতে তার সংসার চলে যাচ্ছে।
ফরিদার মতো করে সাউথখালী চরের অধিকাংশ পরিবারে রয়েছে বহু সন্তান। নিম্ন আয়ের এই মানুষগুলো জন্ম নিয়ন্ত্রণে অনাগ্রহী। এখানে যেমন বহু বিয়ের প্রচলন রয়েছে। তেমনি রয়েছে তালাকের প্রবণতাও। আর এ সকল পরিবার প্রধানেরা জন্ম নিয়ন্ত্রণে অনাগ্রহী হওয়ায় তাদের পরিবারে শিশু সদস্যের সংখ্যাও বেশি। ফলে দারিদ্রতা ও অপুষ্টি যেন তাদেরকে আরো প্রবল আকারে পেয়ে বসেছে। সব মিলিয়ে সচেতনতার অভাবেই তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রে জানা যায়, সাউথখালী চরে জনসংখ্যা ৭০০ জন। ২০১৮ সালে এর কিছুটা ব্যবধান হতে পারে বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
তবে সাউথাখালী গ্রামের বাসিন্দা ইন্দুরকানী উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী জানান, সাউথখালী চরে প্রায় ১২’শ মানুষের বসবাস। সেখানের মানুষেরা রয়েছে নানামুখী সমস্যায়। ইন্দুরকানী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদটি শূন্য। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দিয়ে চলছে এই পদের কার্যক্রম। এ ছাড়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের তিনটি পদই শূন্য। আবার ১৭টি ইউনিটের চার ইউনিটে কোনো কর্মী নেই। তাই জনবল সঙ্কটে ভুগছে এই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগটি।
পরিবার কল্যাণ সহকারী মারুফা জানান, আমি প্রতি দুই মাস অন্তর এই চরে যাই। জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তাদের অনেকভাবে বোঝান হয়। কিন্তু কিছু পরিবার এ ব্যাপারে উদাস। তাদের কোনোভাবেই বোঝাতে পারি না।
এবিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মমকর্তা মো. সোহাগ হোসেন জানান, উপজেলার জেলে প্রধান এলাকার মানুষেরা জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে একটু অনাগ্রহী। আমরা নিয়মিত ওই সব এলাকা পরিদর্শন করে থাকি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন