শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

পুরনো না নতুন

রেজাউর রহমান সোহাগ | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

অপেক্ষার পালা শেষ। মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনাল। শেষ হাসি হাসবে কে? গত ছয় বিশ্বকাপে তৃতীয়বারের মত ফাইনালে অংশ নিতে যাওয়া ফ্রান্স, নাকি রূপকথার ভেলায় চড়ে প্রথমবারের মত ফাইনালে পা রাখা ক্রোয়েশিয়া? উত্তর মিলবে আজ রাতেই।
২০ বছর আগে প্রথম ও একমাত্র বিশ্বকাপ জিতেছিল ফ্রান্স। মেসিফাইনালে সেবার ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়েই ফাইনালে ওঠে জিদান-দেশম-অঁরিদের নিয়ে গড়া লেস ব্লরা। বিশ্বমঞ্চে ঐ একবারই মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। বিশ্বজয়ী সেই দলের অধিনায়ক দিদিয়ের দেশম এই ফরাসি দলের কোচ। অসাধারণ ট্যাকটিসে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল দেখিয়ে ইতোমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছেন ৪৮ বছর বয়সী। আজ জিতলেই তার সামনে সুযোগ মারিও জাগালো (ব্রাজিল) ও ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পর তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে খেলোয়াড় ও কোচ উভয় ভুমিকায় বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার।
ক্রোয়েশিয়া কোচ জাতকো দালিচও কম চমক উপহার দেননি। মাত্র নয় মাস হলো দলের দায়ীত্বে এসেছেন। এর আগে বড় কোন দলের সঙ্গেও ছিলেন না। অখ্যাত ক্যারিয়ারকে কি দারুণভাবেই সাজিয়ে নিলেন ৫১ বছর বয়সী। আর মাত্র ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে জিতলেই তার হাতে উঠবে ফুটবল তথা ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় ট্রফি।
মাত্র ৪ দশমিক ১৭ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ ক্রোয়েশিয়া। সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে এবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে তারা। অবশ্য সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড আছে উরুগুয়ের (১ দশমিক ৭ মিলিয়ন, ১৯৩০ সালে)। তবে ফাইনালে পা দিয়েই একটা রেকর্ড গড়েছে ক্রোয়েশিয়া। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের সর্বনি¤œ (২০তম) দল ও ১৩তম জাতি হিসেবে ফাইনালে খেলার রেকর্ড। জিততে পারলে এটিই হবে বিশ্বকাপে তাদের সেরা অর্জন।
যুগোস্লোভিয়া থেকে ১৯৯১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৯৮ বিশ্বকাপে প্রথম সুযোগ পায় ক্রোয়েশিয়া। প্রথম অংশগ্রহনেই সেমিফাইনালে উঠে বিশ্ববাসীকে চমকে দেয় তারা। তবে তৃতীয় হয়েই সেবার সন্তুষ্ট থাকতে হয়। শেষ চারের ম্যাচে ফ্রান্সের কাছে হেরে শেষ হয় তাদের স্বপ্ন যাত্রা। ২০ বছর পর সবচেয়ে বড় মঞ্চে মুখোমুখি দুই দল। ক্রোয়াটদের সামনে তাই সুযোগ মধুর প্রতিশোধ নেয়ার।
ফাইনালের পথে ক্রোয়েশিয়ার রাস্তাটা সহজ ছিল না। আর্জেন্টিনার মত দলকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নক আউট পর্বের তিনটি ম্যাচই তারা জিতেছে অতিরিক্ত সময়ে এসে। মাঝমাঠে লুকা মড্রিচ, ইভান রাকিটিচদের দখল, গোল পোস্টে দানিয়েল সুবাসিচের অসাধারণ দক্ষতা, স্ট্রাইকার মারিও মানজুকিচের সময়মত জ্বলে ওঠা সবকিছু মিলে দলীয় সংহতির চূড়ান্ত ফল হিসেবে শেষ ধাপে পৌঁছে দালিচের দল। এখান থেকে খালি হাতে ফিরতে চান না ক্রোয়াট কোচ। দৃড় কন্ঠে তিনি যা বললেন তা প্রতিপক্ষ শিবির কাঁপিয়ে দেয়ার মতই, ‘এখানে পরিসংখ্যান ও রেকর্ড ভাঙা হবে। ফাইনালে আমাদের প্রতিপক্ষ কে সেটা কোন ব্যাপার না। সেরাটা দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। সমস্ত পৃথিবী ক্রোয়েশিয়াকে দেখবে। আমরা এখানে এসেছি খেলাটা উপভোগ করতে ও জিততে। আমার ছেলেরা অনেক ম্যাচ খেলেছে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালেও। কিন্তু এটাই তাদের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ম্যাচ।’
তবে টানা তিনটি ১২০ মিনিটের ম্যাচ খেলে তার দল যে কিছুটা হলেও ক্লান্ত তা তার কথাতেই স্পষ্ট, ‘কাল (আজ) বিশ্বকাপের ফাইনাল। আমার ছেলেরা জানে কি করতে হবে। প্রস্তুত না থাকলে তারা আমাকে বলবে। হ্যাঁ, কিছু খেলোয়াড় অনুশীলন করিনি। আসলে আমরা আর অনুশীলন করতে চাই না। সামান্ন কিছু সমস্যা আছে, কিন্তু আমার বিশ্বাস তা কালকের (আজ) মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।’
আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই ফরাসি শিবিরেও। শেষ চারে আসরের অন্যতম চমক বেলজিয়ামকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স। এর আগে পর্তুগাল ও উরুগুয়ের বিপক্ষেও দারুণ আক্রমণ ও রক্ষণের পরীক্ষায় পাশ করেন দেশমের শিষ্যরা। ফাইনালে জিতে ২০১৬ ইউরো ফাইনালে হারের ক্ষত বুলতে চায় দলটি। তেমনটাই বললেন দলের মিডফিল্ডার পল পগবা, ‘২০১৬ ইউরোর সেমিফাইনালে জার্মানিকে হারানোর পর ফাইনালে মনে হচ্ছিল জয়টা পেতে যাচ্ছি। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি একই ভুল আমরা আর করছি না।’
দলের এই সফলতার জন্য রক্ষণভাগের ভূমিকা অনেক বেশি বলে মনে করেন দলের আরেক তারকা অঁতোয়ান গ্রিজম্যান, ‘আমাদের রক্ষভাগ গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমাদের আক্রমণভাগ যে কোন সময় গোল করতে পারে।’ ফ্রান্স জিতলে গ্রিজম্যানের গোল্ডেন বল জয়ের সম্ভবনাও বেড়ে যাবে। তবে তা নিয়ে মোটেও ভাবছেন না ফরাসি স্ট্রাইকার, ‘এটা বিশ্বকাপ জয়ের একটা সুযোগ, গোল্ডেন বল নয়। আমি গোল্ডেন বল জিতি বা না জিতি এ নিয়ে ভাবছি না; বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য আমি পুরোটাই দেব।’
শুধু পগবা বা গ্রিজম্যান নয়, ফরাসিদের মধ্যে বড় নজর থাকবে তৃতীয় কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে অংশ নিতে যাওয়া কিলিয়ান এমবাপের দিকে। গতি ও ট্যাকটিক দিয়ে ইতোমধ্যে ভক্তদের মন জয় করেছেন ১৯ বছর বয়সী। বড় কোন অঘটন না হয়ে আসরের উদীয়মান তারকা পুরস্কার উঠতে যাচ্ছে তার হাতেই।
তবে দিনটা আসলে রূপকথা হয়ে ধরা দেবে মড্রিচ, নাকি গ্রিজম্যানের কাছে? ফাইনালের নায়ক হবেন মানজুকিচ, নাকি এমবাপের? নাকি আবারো দুই গোল প্রহরী হুগো লরিস অথবা দানিয়েল দালিচ গড়ে দেবেন ম্যাচে ভাগ্য? ইতিহাসের নতুন পাতা লিখবে ফ্রান্স, নাকি ক্রোয়েশিয়া? এমন হাজারো প্রাশ্নের উত্তর খুঁজতে অরেকটু অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
আঃ রাজ্জাক ১৫ জুলাই, ২০১৮, ১:৩৫ এএম says : 0
ফাইনালে শুভকামনা ক্রোয়েশিয়া।
Total Reply(0)
তরি ১৫ জুলাই, ২০১৮, ১:৫৫ এএম says : 0
ক্রোয়োশিয়া কাপ নিলে ইতিহাস হবে।কারন একে তারা তো যুদ্ধ বিধস্ত দেশ।বিশ্বকাপ জিতলে এটা আনন্দ সাথে বাঁচার অনুপ্রেরণা হবে।লুকা মাদ্রিচের কাছে সফল গল্প রচিত হোক।
Total Reply(0)
Tanvir Alam ১৫ জুলাই, ২০১৮, ১:৫৭ এএম says : 0
অঘটনের বিশ্বমঞ্চে ক্রোয়েশিয়া চ্যাম্পিয়ন হওয়া অবাকের কিছু না |
Total Reply(0)
Tania Jerin ১৫ জুলাই, ২০১৮, ১:৫৮ এএম says : 0
I hope this time Croatia will champion ..love u Croatia love u Luca modric
Total Reply(0)
Borhan Uddin ১৫ জুলাই, ২০১৮, ২:০০ এএম says : 0
I think France will be the champion
Total Reply(0)
M.A. Kalam ১৫ জুলাই, ২০১৮, ২:১০ এএম says : 0
আশাকরি France জিতবে।।ক্রোয়াশিয়া নয়।।franceতো argentena বা brazil মত না যে হারবে।france কে support করি এবং শেষ পযন্ত করব।।
Total Reply(0)
Rakib H. Rafin ১৫ জুলাই, ২০১৮, ২:১১ এএম says : 0
নতুন কোনো দেশের হাতে বিশ্বকাপের ট্রফি দেখতে চাই। ক্রোয়েশিয়া
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন