শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮

বিদায় রাশিয়া দেখা হবে কাতারে

রেজাউর রহমান সোহাগ, রাশিয়া থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৮, ১১:০১ পিএম

রোমাঞ্চ, উত্তেজনা, অঘটন কী ছিল না এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে। চার বছর পর ফিরে আসা ফুটবল বিশ্বকাপে ঠিক এরকম উন্মাদনার জন্যেই মুখিয়ে থাকে বিশ্বের প্রায় ৭০০ কোটি মানুষ। বিশ্বকাপের পরতে পরতে থাকা উত্তেজনা-উন্মাদনায় ভাগ বসায় তারা। সেই ফুটবল পাগল মানুষদের হতাশ হতে হয়নি এবার। ফেভারিটদের পতন হলেও একটা বিশ্বকাপে ঠিক যতটা রঙ থাকা উচিৎ তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল রাশিয়ায়। এবার চলে যাওয়ার পালা। বিদায় রাশিয়া, দেখা হবে কাতারে। পর্দা নামলো ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের। গতকাল মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচের ঠিক আধঘন্টা আগে শুরু হয় রাশিয়া বিশ্বকাপের জমকালো সমাপনী অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে আটটায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের দশটি দেশের প্রেসিডেন্ট, বেশ ক’জন প্রধানমন্ত্রী ও অনেক দেশের উচ্চ পদস্থ কর্মকতারা। যাদের মধ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্রো, ক্রোয়েশিয়ার প্রেডিডেন্ট কলিনদা গ্রাবার কিতারোভিচ, আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্ট আরমেন সারকিসয়ান, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেনকো, গ্যাবনের প্রেসিডেন্ট আলি বোনগো অনদিম্বা, মলদোভার প্রেসিডেন্ট ইগোর দোদন, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির অন্যতম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নির্বাচিত ফিফার কাউন্সিল মেম্বার মাহফুজা আক্তার কিরণসহ ফিফার পুরো নির্বাহী কমিটির সদস্যরা সমাপনী দিনে উপস্থিত ছিলেন।
স্টেডিয়ামে বসে সমাপনী অনুষ্ঠান ও ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করেন অনেক বিদেশী মেহমানরাও। গত ১৪ জুন জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যে রঙ লেগেছিল বিশ্ব ফুটবলপ্রেমীদের মাঝে। কাল সেখানে বেজেছে বিদায়ের করুণ সুর। এক মাসের টান টান উত্তেজনাপূর্ণ আর অবিশ্বাস্য বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের মধ্যদিয়ে শেষ হলো সব উত্তেজনা।
রাশিয়া বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন না এবারের আসরের থিম সং ‘লিভ ইট আপ’ টিমের কেউ। তবে সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ছিলেন উইল স্মিথ, এরা এস্ত্রাফি আর নিকি জ্যাম। তাদের নাচ আর গানে মোহবিষ্ট হয়ে পড়েন লুঝনিকি স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রায় ৮০ হাজার দর্শক। এ অনুষ্ঠানে বেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠছে রাশিয়ান সংস্কৃতি। মন মাতানো গানে মঞ্চ মাতিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত কে-পপ ব্যান্ড ‘ইএক্সও’। তাদের পারফর্ম করার রাস্তটা তৈরি করে দিয়েছেন ফুটবল ফ্যানরাই। অনলাইন ভোটে ‘বিটিএস-ফেক লাভ’সহ আরো দু’টি জনপ্রিয় ব্যান্ড দলকে হারিয়েই বিশ্বকাপের সমাপনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার সুযোগ পেয়েছে তারা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে অনেক মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকায় ওই অনুষ্ঠানের কাউকেই দেখা যায়নি কাল। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না থাকতে পারলেও বিদায়ী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে পেরেই দারুণ খুশি উইল স্মিথ। মঞ্চ মাতানোর আগেই তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেন। উইল স্মিথ জানান, ‘এটি বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়া অনুষ্ঠান। যখন আমাকে এই অনুষ্ঠানে থাকার জন্য বলা হল, তখন একবারও চিন্তা করিনি আমি। সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলাম। বিশ্বকাপটা সত্যিই জাদুকরী কিছু, বৈশ্বিক এক উন্মাদনা। আর এর একটা অংশ হতে পেরে সত্যিই আমার খুব ভালো লাগছে।’
৩১ দিনের ম্যারাথন শেষে বিশ্বকাপের মশাল পাড়ি জমালো কাতারে। ২০১০ সালে জুরিখে এক ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রতাপশালী যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ করে নেয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে তখন থেকেই চলছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা।
২০১৪ সালে বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে কাতারের নাম ঘোষণার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এক পর্যায়ে মনেও হচ্ছিল হয়তো, ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে কাতারের নাম মুছে ফেলা হতে পারে। কিন্তু সবকিছুকে পাশ কাঁটিয়ে ২০২২ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক হতে পুরোদমে প্রস্তুত কাতার। যার প্রথম ধাপ তারা পাড় করেছে গতকাল ফিফার পতাকা গ্রহণের মধ্যদিয়ে। রাশিয়া বিশ্বকাপের সমাপনী অনুষ্ঠানেই ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো কাতার বিশ্বকাপ কমিটির প্রধান হাসান আল তাওয়িদি’র হাতে এই পতাকা তুলে দেন। কাতারে মোট ৮টি অত্যাধুনিক স্টেডিয়ামে খেলানো হবে ম্যাচগুলো। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই স্টেডিয়ামগুলো নির্মাণ করছে তারা। কাতার বিশ্বকাপ যে সকলের মনে ভিন্ন আলোড়ন সৃষ্টি করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে সেটা এখন থেকেই আঁচ করা যাচ্ছে।
ফিফার পতাকা গ্রহণ করে হাসান আল তাওয়িদি বলেন, ‘আমরা চাপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। বিশ্বকাপের থেকে বড় কোন প্লাটফর্ম নেই নিজেদেরকে মেলে ধরার। রাশিয়া অসাধারণ একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে। মানুষের মনে গেঁথে রাখার মত একটি বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে তারা। আমরা বিশ্বাস করি রাশিয়ার এই আয়োজনের পর মানুষের প্রত্যাশাও অনেক বাড়বে। আমরা নিজেদের নিয়ে আতœবিশ্বাসী মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবো।’
কাতার মানুষের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারে সেটা হয়তো সময় বলে দেবে কিন্তু রাশিয়া যে ফুটবলপ্রেমীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাশিয়া বিশ্বকাপের পর আবারো ৪ বছর ৪ মাসের অপেক্ষা ফুটবল অনুরাগীদের ফিরিয়ে আনছে এশিয়ার মাটিতে। ফুটবল উন্মাদনায় ছেয়ে যাক পুরো কাতার তথা সারাবিশ্ব। চার বছর পর আবারো ফুটবল বিশ্বকাপে দেখা হবে কাতারে। ততদিন না হয় বিশ্বকাপের হাসি, কান্না, আনন্দ, কষ্টের স্মৃতিতে ডুবে থাকুক ফুটবল পাগল আপামর মানুষ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
জাহিদুলইসলাম ১৬ জুলাই, ২০১৮, ১১:৪৪ এএম says : 0
কাতার পৃথিবীর বর্তমান ধনী দেশ এবং আমরা প্রবাসী বাংলাদেশী আমরা চাই ২০২২ফিফা খেলা কাতারে হোক অন্য আরব দেশ গুলো দূরনীতি না করলে হয়
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন