শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

শিক্ষার্থীদের রাস্তা আবরোধ

যানজটে অচল ঢাকা

সায়ীদ আবদুল মালিক : | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজটে জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে রাজধানীর সাইন্স ল্যাব্রেটরি এলাকা ও বিমানবন্দর সড়কের হোটেল র‌্যাডিসনের সামনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল সোমবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নেয়। এ কারণে বনানী থেকে উত্তরা, উত্তরা থেকে বনানী, কালশি হয়ে উত্তরা, নিউমার্কেট, ফারমগেট, মগবাজার, পল্টন, মতিঝিলসহ রাজধানীর প্রায় সকল সড়ক অচল হয়ে যায়। এসব রাস্তার উভয় প্রান্তে তৈরি হয় তিব্র যানজট। এক থেকে দেড় কিলোমিটার রাস্তা পার হতেই সময় লাগছে দুই ঘণ্টারও বেশি। বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের লম্বা লাইন দেখা গেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছে হজযাত্রিসহ বিমানের যাত্রিরা। তারা সময়মত বিমান বন্দরে পৌছাতে পারেনি। শুধু তাই নয় এ কারণে গতকাল বিভিন্ন অফিস আদালত ও নানা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়েই নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে। যানজটের কারণে সময়মত পাওয়া যায়নি গাড়ি। মাঝে মধ্যে দু’য়েকটি পাওয়া গেলেও দিতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই অনেককে যেতে হয়েছে নিজ নিজ গন্তব্যে।
জানা গেছে, রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা সকালে বিমানবন্দর সড়কে মানববন্ধন করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাধা দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে।
রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্টের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আশেপাশের কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও সড়ক অবরোধের কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এগুলো হলো ভাষানটেক সরকারি কলেজ, গুলশান কমার্স কলেজ, গুলশার ডিগ্রি কলেজ, মাইলস্টোন কলেজ, বিএফ শাহীন কুর্মিটোলা, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ, বনানী বিদ্যানিকেতন কলেজ। এছাড়াও এ আন্দোলনের সাথে একত্বতা ঘোষণা করে রাজধানীর সাইন্স ল্যাব্রেটরি এলাকায়ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে। অবরোধ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা থেমে থেমে স্লোগান দিতে থাকে। ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যে উপস্থিতি ছিল।
রাজধানীর কাজীপাড়ার বাসিন্দ আব্দুস সালাম জানান, যাত্রাবাড়ী যাওয়ার জন্য প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পরও কোনো বাস পাননি। অনেকক্ষণ পরপর দুই একটা বাস মিললেও তাতে যাত্রীবোঝাই। এসব বাসে উঠতে পারছেনি তিনি। কাজীপাড়া থেকে পায়ে হেঁটে আগারগাঁও মোড় পর্যন্ত গিয়েও কোন বাস পাননি তিনি। এরইমধ্যে নেমেছে ঝুম বৃষ্টি। তাতে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
আবদুস সালামের মতো অনেকেই গতকাল দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। মহাখালীগামী যাত্রী নুর ইসলাম। সঙ্গে অসুস্থ স্ত্রী কামরুন নাহার। শ্যামলী থেকে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে আগারগাঁও পায়ে হেঁটে এসেছেন। এখানে ৩০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছেন। তবুও বাস মিলছে না। অসুস্থ স্ত্রীও পায়ে হাঁটতে পারছেন না। নুর ইসলাম বলেন, মহাখালীতে টিবি হাসপাতালে যাব, কিন্তু বাস-লেগুনা কিছু পাচ্ছি না। এর মধ্যে আবার শুরু হয়েছে বৃষ্টি। বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ থাকায় নগরীজুড়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। মহাখালীতেও হাজার হাজার যাত্রী বাসের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।
একদিকে শিক্ষার্থীদের অবরোধ অন্যদিকে বৃষ্টি ও রাস্তার বেহাল দশা। ভাঙাচোরা রাস্তায় খানাখন্দক ও পানিবদ্ধতা থাকায় চওড়া রাস্তায় একটি লেন ধরে চলছে সব পরিবহন। যে কারণে জ্যামের লাইন দীর্ঘ থেকে আরও দীর্ঘ হয়েছে বিমান বন্দরের ব্যস্ততম সড়কটি। গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা, পথচারীদের ভোগান্তি এবং তীব্র যানজটের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া গাজীপুর থেকে উত্তরা, এয়ারপোর্ট এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষমান যাত্রীদের দেখা গেছে।
এদিকে, কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি আত্মীয়কে দেখতে আসা নকীব বলেন, আমার আত্মীয় গুরুতর অসুস্থ। আমি তাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলাম। চৌরাস্তা থেকে কলেজগেট আসার পর জ্যামে এক ঘণ্টা বসে থেকে নেমে রিকশায় উঠলাম। রিকশা তো আগাতে পারছেই না আবার থেকে থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তার পাশেও যে পরিমাণ কাদা আর পানিবদ্ধতার সঙ্গে বড় বড় গর্ত। কোথায় আছে গর্ত তা তো জানা সম্ভব না। তাই আবার বাধ্য হয়ে গাড়িতে উঠে বসে থাকলাম। এক লেন ধরে গাড়ি আগাতে আগাতে আস্তে-ধীরে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এলাম। এরপর এখন রাস্তাই বন্ধ। হেঁটে যাবো বাকিটা।
এদিকে, আব্দুল্লাহপুরের পর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষমান যাত্রীদের বড় বড় জটলা লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু গাড়িতে যাত্রী নিচ্ছে না গণপরিবহনগুলো। কারণ যেখানেই ইউটার্নের সুযোগ রয়েছে সেখান থেকেই গাড়ি ঘুরিয়ে দিচ্ছে পরিবহনগুলো।
সরেজমিন দেখো গেছে, গতকাল সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর মতিঝিল-পুরানা পল্টন-শাহবাগ-কারওয়ান বাজার সড়ক, পুরানা পল্টন-ফার্মগেট-মিরপুর সড়ক, মতিঝিল-যাত্রাবাড়ী সড়ক এবং সাইন্সল্যাব-ধানমন্ডি সড়কে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। এছাড়া সাইন্স ল্যাব্রেটরি এলাকা ও বিমান বন্দর সড়কের আবরোধেরে কারণে সৃষ্ট যানজটের প্রভাব পড়েছে মহাখালী-উত্তরা ও গুলশান এলাকাসহ সারা শহরজুড়ে। এসব এলাকার সড়কের দুপাশে শত শত যানবাহন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এ সময় পুরো রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোতে ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়া গাড়িগুলো চলছিলো কচ্ছপগতিতে। বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল, উত্তরা, খিলক্ষেত, কুড়িল-বিশ্বরোড হয়ে রামপুরা-মালিবাগ, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউ, কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর, খিলগাঁও বিশ্বরোড, পান্থপথ, নয়া পল্টন, পুরানা পল্টন, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, হাতিরপুল, নিউমার্কেট, আজিমপুর, গুলশান-১ ও ২, গুলশান এ্যাভিনিউ, সাত রাস্তার মোড়, নাবিস্কো, মিরপুর রোড, রোকেয়া সরণি, আসাদ গেট, শ্যামলী, কল্যাণপুর, জিগাতলা, আজিমপুর এলাকা দীর্ঘ সময় ধরে যানজটে অবরুদ্ধ ছিল।
নগরীর ব্যস্ত সড়কগুলোর মতোই যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছিল জনজীবনও। যাত্রাবাড়ি-টঙ্গী রুটে চলাচলকারী তুরাগ পরিবহনের যাত্রী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা অলিওর রহমান মোল্লা বলেন, আধ ঘণ্টার পথ যদি ৩ ঘণ্টা ব্যয় হয়, তাহলে মানুষ সারাদিন কাজকর্ম করবে কিভাবে? পান্থপথ মোড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল মতিন। তিনি বলেন, এদেশ চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। যাওয়ার পথে ১৬০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে মতিঝিল গিয়েছি। এখন ফেরার সময় যানজটের কারণে গাড়িতে উঠে রাস্তায় বসে থাকতে আর ইচ্ছা হলো না। তাই বাধ্য হয়ে দিলকুশা থেকে পায়ে হেঁটে মোহাম্মদপুর যাচ্ছি। এই ভোগান্তি শুধু আবদুল মতিনের নয়।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী অধিকাংশ লোকজনকেই এই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে হেঁটে পরীবাগ যাচ্ছিলেন মতিঝিলের একটি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা একরামুল হক। তিনি বলেন, দিলকুশা থেকে বাসে উঠে গুলিস্তান আসতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টা। অথচ এই পথ হেঁটে আসতে সময় লাগে ১০ মিনিট। তাই সময় বাঁচাতে হেঁটেই যাচ্ছি।
সময় নিয়ন্ত্রণ পরিবহণের চালক মোহাম্মদ আলাল হোসেন বলেন, যানজটের কারণে মানুষ এখন বেশি দুরের পথ না হলে গাড়িতে উঠতে চায় না। যে কারণে আমাদের ইনকামও কমে গেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়- যাত্রাবাড়ি থেকে শনির আখড়া দীর্ঘ দুই কিলোমিটার গাড়ীর লাইন। মৌচাক, মালিবাগ, মগবাজর ও সাত রাস্তার মোড় এলাকায় যানবাহন যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। একটু সামনে গিয়ে আবার অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা। এভাবেই গতকাল রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন