শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

যানজটে বিপর্যস্ত ট্রাফিক ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

রাজধানী ঢাকা ফিরেছে চিরচেনা চেহারায়। তবে বেশ কিছুদিন ধরে মহানগরীর সড়কে দেখা যাচ্ছে বিশৃঙ্খলা। তীব্র যানজটে নাকাল ঢাকাবাসী। যানজটে ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার ফলে যানজট নিরসনে পরিকল্পনা ও মহাপরিকল্পনা কাজে আসছে না। দিনের পর দিন গাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকলেও বাড়েনি সড়ক। চালকরা লাইন-লেন না মেনেই গাড়ি চালাচ্ছে, যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু ক্ষেত্রে আধুনিক সিগন্যাল লাইট বসিয়েও পুলিশ হাতের ঈশারায়ই সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করায় সড়কে নেই ডিজিটালের ছোঁয়া। এছাড়া শৃঙ্খলাহীন ট্রাফিক ব্যবস্থায় যানজট বৃদ্ধি পেলেও এক শ্রেণির ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য কিংবা মামলা দায়েরে বেশি আগ্রহ বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বর্তমানে স্বাভাবিক ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি গাড়ি ঢাকার সড়কে চলছে। দিনের পর দিন তাই যানজট নিরসনের দায় ট্রাফিক পুলিশের ঘাড়ে বর্তায়। যদিও দায় সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার। ট্রাফিক পুলিশ সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা করলেও ট্রাফিক আইন মানার ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ বিশৃঙ্খল। এছাড়া রয়েছে ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনভিজ্ঞ ও মেয়াদবিহীন লাইসেন্সের চালক সবাই যেন নেমে পড়েছে সড়কে। এসব কারণে মামলার সংখ্যা বাড়ছে।

যাত্রীরা বলছেন, রাস্তাগুলোতে একদিকে গাড়ির যানজট, অন্যদিকে এ স্থবির পরিস্থিতিতে যানবাহন চালকরাও ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনা না মানায় অবস্থা আরো প্রকট হয়ে ওঠেছে। আর নিয়ম মেনে না চলার কারণে সৃষ্ট যানজট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। বাস-মিনিবাসগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হচ্ছে। রাস্তা দখল করেও বসানো হয়েছে অস্থায়ী দোকান। সেখানে চলে চাঁদাবাজি। অনেক সময় রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে কিছু অসাধু ট্রাফিক পুলিশ টাকা আদায় করে। এছাড়াও মামলার কারণেও দাঁড় করানোর কারণে পেছনের গাড়িগুলো দীর্ঘ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একারণেও যানজট দীর্ঘ হয়।

ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে অবশেষে হেঁটেই গন্তব্যে রওয়ানা দেন তারা। সড়কের যানজটের চিত্র দেখে অনেকে আবার বাসায়ও ফিরে যান। কিছু সড়কে বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। গুলিস্তান এলাকায় প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে চাঁদাবাজির কারণে যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করে।

জানা গেছে, যানজটের একই চিত্র পুরো রাজধানীজুড়েই। যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, বাড্ডা, পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুর, গুলশান, বনানী, রামপুরা, বাড্ডা, বারিধারা, উত্তরা, মিরপুরসহ সব এলাকার চিত্র ছিল প্রায় একই।

শাহজাহানপুরের বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, বানানী থেকে অফিস ছুটির পর বাসে উঠে দেখি রাস্তায় গাড়িগুলো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর একটু একটু করে সামনে যায়। বনানী থেকে রাজারবাগ আসতে আমার তিন ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। দীর্ঘসময় বাসে বসে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। অনেকে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্য যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ঢাকা রুট ফ্রান্সাইজের যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন জরুরি। ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করা, যত্র-তত্র গাডড়ি পার্কিং, যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানো, ওভার টেকিং, পাল্টা-পাল্টি ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী ও মাল বোঝাই করা, গাড়ির ছাদে যাত্রী বহন করা, ওভার ব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস বা জেব্রা ক্রসিং থাকা সত্ত্বেও সেগুলো ব্যবহার না করার প্রবণতাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সকল মহাসড়ক এবং প্রধান সড়ককে অবশ্যই ন্যূনতম চার লেনে উন্নীত করতে হবে।

পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) আহসান হাবীব প্রামানিক ইনকিলাবকে বলেন, মূলত একটি রুটে একেক কারণে যানজট হতে পারে। কোন কোন সময় স্থানীয় কোনো কারণেও যানজট দেখা দেয়। যেমন এখন শীত বেশি থাকায় নিউমার্কেট এলাকায় লোকজন শীতের পোশাক কিনতে আসায় লোকজনের চাপ রাস্তায় এসেছে। এবং রাস্তায় যানজট বেড়েছে। যানজট নিরসনে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে রাস্তায় অতিরিক্ত গাড়ির চাপ থাকার কারণে যানজট বেড়ে যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন