একটি মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে মাসে অন্তত : একবার ঢাকা জজ কোর্টে যেতে হয় এম. তাহের উদ্দীনকে। বাসবাস ঢাকার উত্তরায়। যেদিন হাজিরা থাকে সেদিন আর কোনো কাজ রাখতে পারেন না। বেরিয়ে পড়তে হয় সকাল সকাল। ব্যক্তিগত গাড়ি হলেও দ্ইু ঘণ্টার পথ। ফিরতে লাগে ৩ ঘণ্টা। ‘হাজিরা’ সম্পন্ন হয় ১০ মিনিটেই। অথচ ১০ মিনিটের কাজের জন্য তাহের উদ্দীনকে জ্যামে বসে থাকতে হয় ৫ ঘণ্টার মতো। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের গবেষণা বলছে, ২০২২ সালে রাজধানীর সড়কে প্রতিদিন মানুষের ৮০ লাখের বেশি কর্মঘণ্টা বিনষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি টাকা।
ভয়াবহ দূষণে টানা গত ১০ দিন শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা। সার্বিকভাবে ঢাকার বাতাসে দূষণ সহনীয় মাত্রার চেয়েও পাঁচগুণ বেশি। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অন্যতম। সংস্থাটির সকাল ১০টা ১৮ মিনিটের রিয়েল টাইম (তাৎক্ষণিক) দূষ প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ২৭৬ মাইক্রোগ্রাম দূষণ নিয়ে একনম্বরে অবস্থান করে ঢাকা। এরপর দুপুর ১টা, বিকাল ৪টা ও ৫টা এবং সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৮টায় ঢাকা শীর্ষে অবস্থান করছিল। দুপুর ১টায় বাতাসে দূষিত ধূলিকণার পরিমাণ ছিল ২৫৩ মাইক্রোগ্রাম, বিকাল ৪টায় ২৪৩ এবং ৫টায় ছিল ২৩২ মাইক্রোগ্রাম। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টায় তা বেড়ে আবার ২৪০ মাইক্রোগ্রাম হয়েছে। আর রাত ৮টায় তা আরও বেড়ে ৩২৪ হয়েছে, যা সহনীয় মাত্রার চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি। সাধারণত প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম ধূলিকণা ও গ্যাসীয় পদার্থকে সহনীয় মাত্রা হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ক্রমবর্ধিষ্ণু এই যানজটের এই আর্থিক ক্ষতি হয়তো পরিমাপযোগ্য। কিন্তু যে ক্ষতি তার জীবনকেই হুমকির মধ্যে ফেলছেÑ সেটি কোন্ নিক্তিতে পরিমাপ্য? ক্ষতিটা হচ্ছে স্বাস্থ্যগত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাজধানীর যানজটে আটকে থেকে শারীরিক সমস্যা কাবু করে ফেলছে তাকে। একতো প্রেসারের রোগী। তারওপর প্রচÐ স্নায়ুচাপ। চাপ বাড়লেই চড়ে যায় সুগার। যানজটে টয়লেটে যাওয়ার সুযোগ কই? পুরো ধকলটাই যায় কিডনির ওপর। এর চেয়ে বড় স্বাস্থ্যক্ষতি আর কি হতে পারে?
গতিহীনতায় যত স্বাস্থ্যক্ষতি : ভুক্তভোগী এম. তাহের উদ্দীনের মতো যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে নানাবিধ স্বাস্থ্যগত ক্ষতির শিকার হচ্ছেন ঢাকার কর্মজীবী প্রায় সব মানুষ। বছর পাঁচেক আগে য্ক্তুরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘যিপজেট’ একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাজধানীর মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে সবচেয়ে বেশি ‘মানসিক চাপ’র শহর (স্ট্রেসফুল) বলে উল্লেখ করা হয়। এই চাপের বড় একটি কারণ বলা হয় ঢাকার রাজপথের যানজটকে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ২০ মিনিটের পথ অতিক্রম করতে লেগে যায় দুই ঘণ্টা। এতে কর্মক্ষেত্রে শতভাগ মনোযোগ বিঘিœত হয়। মানুষের উৎপাদনশীলতা কমে যায়। ফলে যানজটের কারণে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। প্রশ্রাব-পায়খানা দীর্ঘ আটকে রাখতে হচ্ছে। এটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক ও অস্বস্তিকর। ট্রাফিক-পুলিশরা দৈনিক গড়ে অন্তত: ৮ ঘণ্টা রাস্তায় থাকতে হচ্ছে। তাদের জন্য রাজধানীর কোনো কোনো ট্রাফিক সিগন্যালে ইদানিং স্থাপিত হয়েছে ট্রাফিক শৌচাগার। কিন্তু গণপরিবহণ যাত্রীদের সেই সুবিধাটুকু নেই। ফলে সময়ের হিসেব বাদ দিয়ে নগরবাসী যানজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় বাৎলে নিচ্ছেন নিজস্ব পদ্ধতি। অনেকে বাসা থেকে গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছেন খালি পেটে। কেউ কেউ বের হচ্ছেন রোজা রেখে। তবে যানজটের নিত্য শিকার নগরবাসী গলবøাডার, কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: এবিএম আব্দুল্লাহ’র মতে, যাত্রীসাধারণ দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থেকে নানাবিধ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। গরমে, ঘামে ক্লান্তি আসছে। শরীর দুর্বল ও অবসাদগ্রস্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনশন অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন’র গবেষক দলের সদস, বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ ডা: কাজী সাইফুদ্দিন বেনুন একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাকে জানান, ঢাকার যানজট বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ। তিনি বলেন, ট্রাফিক জ্যামে সৃষ্ট দূষণ ফুসফুসের ক্ষতি করে। কারণ, যানবাহন যখন এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকে তখন দূষিত ধোঁয়া ওই জায়গাকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। গাড়ি থেমে থাকলেও ইঞ্জিন চালু থাকছে। যাত্রীর নিজের গাড়ি এবং সংলগ্ন অন্যান্য গাড়ির ধোঁয়াও শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে লাঙয়ে ঢোকে। যদি চলমান থাকে তাহলে গাড়ির ধোঁয়া বাতাসে উড়ে যায়। কিন্তু ট্রাফিক জ্যামে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে মানুষ অধিক ধোঁয়া দূষণে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে ফুসফুসসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে অভিজ্ঞ এই চিকিৎসক আরও বলেন, গাড়ির ধোঁয়ায় রয়েছে সীসা। এছাড়া গাড়ি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় নির্গত ধোঁয়ায় কার্বন মনোক্সাইড, ডাইঅক্সিন, নাইট্রিক অক্সাইড, সালফার অক্সাইড এরকম নানা গ্যাস শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের ফুঁসফুঁসে প্রবেশ করছে। এতে করে সুস্থ ফুসফুসেও শ্বাসকষ্ট হয়। দীর্ঘদিন এই গ্যাস দ্বারা দূষিত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে থাকলে এসব গ্যাস রক্তে মিশে যায়। এতে লাঙয়ের স্থায়ী ক্ষতি করে। হাঁপানি, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ, ইন্টারস্টিসিয়াল লাঙ ডিজিজের প্রবণতা বেড়ে যায়। এতে ফুঁসফুঁসে ক্যান্সারও বাসা বাঁধে। এরই মধ্যে আক্রান্ত ফুঁসফুঁসের রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
ডা: কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, উচ্চ মাত্রায় সীসা মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বহুদিন সীসাযুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে আসে। কিডনি, হৃদযন্ত্র, প্রজননতন্ত্রের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
বিশেষ করে শিশুরা এতে আক্রান্ত হয় বেশি। প্রাপ্ত বয়ষ্কদের শরীরে রক্তের সীসা মস্তিষ্কে পর্যন্ত পৌঁছানো প্রতিরোধের ব্যবস্থা শক্তিশালী থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা পুরোপুরি তৈরি হয়নি। এতে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে এবং স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে। শিশুদের আই-কিউ কমতে থাকে। এতে কম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে জাতি।
এছাড়া ট্রাফিক আটকে থাকা অবস্থায় এবং হঠাৎ জট খুলেও গেলে চালকদের গাড়ির হর্ন বাজানোর প্রবণতা বেশি। এতে শ্রবণশক্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
করোনাজনিত বিশ্বের জনস্বাস্থ্যের ওপর একটি গবেষণা চালায় যুক্তরাজ্যের এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের গবেষক গুতেরেজ সিগাটের নেতৃত্বে পরিচালিত ওই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, করোনাকালে অনেকের শ্রবণেন্দ্রীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, করোনা প্রতিরোধে চিকিৎসকরা মানুষকে সারাক্ষণ মাস্ক পরিধানের পরামর্শ দিতেন। এ সময় বিশ্বে মাস্ক ব্যবহার বেড়ে যায়। আর প্রচলিতমানের মাস্ক পরিধানের ফলে শ্রবণ প্রতিবন্ধী অনেক ব্যক্তির জন্য যোগাযোগে বিপত্তি ঘটে। কারণ, মাস্ক পরে থাকা ব্যক্তিদের মুখভঙ্গি শ্রবণপ্রতিবন্ধীরা বুঁঝতে পারতেন না। ফলে করোনা মহামারিতে ৯০ ভাগ শ্রবণপ্রতিবন্ধীর স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। কারণ শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অন্যের কথা বোঝার উপায় হলো ঠোঁটের নড়াচড়া। সেইসঙ্গে মুখের ভাব-ভঙ্গি দিয়েও ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন। কিন্তু মাস্ক পরিধানের ফলে শ্রবণপ্রতিবন্ধীরা অন্যের মনোভাব বুঝতে পারেন না। এতে তাদের যোগাযোগ সমস্যা হয়।
করোনার দাপট এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে ধোঁয়া ও ধূলি-দূষণ থেকে রক্ষা পেতে ঢাকার মানুষ এখনও মাস্ক পরিধান করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে পথের মানুষ শ্রবণশক্তি হ্রাসের ঝুঁকিতেও রয়েছেন।
মানসিক প্রভাব : লক্ষ্যনীয় বিষয়, ঢাকার রাস্তায় প্রায়ই যান্ত্রিক গাড়িতে চাপা পড়ে হতাহত হচ্ছেন যাত্রী, পথচারী। এ ধরণের দুর্ঘটনার জন্য অমনোযোগী পথচারিকে দায়ী করেন গাড়ির মালিক, চালক-শ্রমিকরা। অনেক সময় দায়ী করা হয় গাড়ির ফিটনেসকেও। পথচারীরা দায়ী করেন গাড়ির স্বেচ্ছাচারি চালক, হেলপারদের। পরস্পর দোষারোপ করে যাত্রী-পথচারী হত্যাকে এক ধরণের বৈধতা দেয়ার চেষ্টা চলে। কিন্তু যে বিষয়টি সবসময় অগ্রাহ্য হয়ে আসছে তা হলো যান্ত্রিক গাড়ির চালক বা ড্রাইভারের ফিটনেস। চালকের মনস্তাত্তি¡ক অবস্থার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে যাত্রী ও পথচারির নিরাপত্তা। যানজটে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকায় ড্রাইভারের মেজাজ বিগড়ে থাকে। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছার লক্ষ্যে অন্যগাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় তারা। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনায় নিপতিত হয় গাড়ি। হতাহত হন যাত্রী,পথচারী। গাড়িতে আরোহী যাত্রীরাও এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। যাত্রীদের মানসিক চাপ বাড়ে। এছাড়া চালকসহ পরিবহন শ্রমিকরা আগে-পরে যাওয়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়ার হার, সার্ভিসের মান নিয়ে পরিবহণ শ্রমিকদের বচসা লেগেই থাকে। ঝগড়া, হাতাহাতি, মারামারি গণপরিবহনের নিত্য ঘটনা। এর কারণটিও পরিবহণ শ্রমিক ও যাত্রীদের উদ্বেগ, খিটখিটে মেজাজ, উচ্চ রক্ষচাপসহ যানজটজনিত।
‘ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার’র ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডা: ইশরাত শারমিন রহমানের মতে, নিয়মিত লম্বা সময় যানজটে বসে থাকার কারণে যাত্রীসাধারণ যথা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন না। এতে কাজের গতি কমে যায়। সময়মতো কার্যসম্পাদন করতে না পারায় ঊর্ধ্বতনের কাছে নিত্যদিন জবাবদিহি করতে হয়। এতে বিশেষত: চাকরিজীবীদের মানসিক চাপ বাড়ে। কাজের সম্পৃহা ও গতি কমে যায়। কাজের ক্ষতি হয়। সময় অপচয় হয়। আর্থিক ক্ষতি বাড়ে।
তিনি আরও জানান, যানজটের কারণে মানুষের ক্রোধ, আক্রমণাত্মক, মারমুখিনতা, অস্থিরতা বাড়ে। আচরণ খিটখিটে হয়। কারণ, ভুক্তভোগী দ্রæতযানে চড়েও দ্রæত যেতে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন না। দীর্ঘ সময় আটকে থাকার পর যখনই গাড়ি চলা শুরু করে তখনই যাত্রী, এমনকি চালক-হেলপাররা অস্থির হয়ে যায়। এক চান্সে সিগন্যাল অতিক্রম করতে না পারলে দ্বিতীয় সিগন্যাল পর্যন্ত ১৫ মিনিট থেকে ৩০-৪৫ মিনিটের জন্য আটকে যাবেন। এ কারণে পথচারি কিংবা অন্য গাড়ির চলাচল বিঘিœত করে হলেও সিগন্যাল অতিক্রমের চেষ্টা করে। আর এতে যে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন তার ওপর যেতে না পারার রাগ মাথায় চেপে বসেন। ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি ধীর গতিতে চললেও যাত্রীর মাথায় রাগ চড়ে যায়।
ডাক্তার শারমিন রহমানের মতে, যানজট ঢাকার নিত্যদিনের ঘটনা। প্রতিদিন এই ঘটনার শিকার হতে হতে মানুষের সহিষ্ণুতা হ্রাস পাচ্ছে। রাগ,অসুহিষ্ণতা, খিটখিটে মেজাজ মানুষের দীর্ঘস্থায়ী মানসিক রোগীতে পরিণত হতে পারে। এক ঘণ্টার যানজট কর্মক্ষেত্রগামী একজন মানুষকে সারাদিনের জন্য বিক্ষিপ্ত ও অমনোযোগী করে দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রের ব্যর্থতার ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে। ভুল বোঝাবুঝি ও ব্যক্তি সম্পর্কের অবণতি ঘটাতে পারে। উদ্বেগ থেকে সৃষ্টি হয় মাথাব্যথা, বমি ও পেশিব্যথা। উদ্বেগ ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীর স্ট্রোক করার ঝুঁকি অনেক বেশি। গাড়ির ড্রাইভার, রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশদের ক্ষেত্রে তো এই ঝুঁকি আরও মারাত্মক।
যানজট থেকে পরিত্রাণের চেষ্টায় ড্রাইভাররা হর্ন বাজানোর মাত্রা বাড়িয়ে দেন। এতে নগরীর শব্দদূষণই শুধু বাড়ছে না,রাস্তায় থাকা মানুষদের শ্রবণশক্তিও হ্রাস পাচ্ছে।
পথচারী, যাত্রী ছাড়াও শব্দদূষণের সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ হলেন নগরীর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপালনকারী পুলিশ সদস্য ও রিকশাচালকরা। তাদের শ্রবণেন্দ্রীয়ের ভয়াবহতার প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিটও হয়েছে। ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ’র করা রিটের প্রেক্ষিতে গত ১৬ জানুয়ারি বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি ডিভিশন বেঞ্চ সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছেন। সেইসঙ্গে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ ৫ সিটি করপোরেশন এলাকায় কর্তব্যপালন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেনÑ এমন ট্রাফিক পুলিশ এবং রেজিস্টার্ড রিকশা চালকদের তালিকা চেয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালার ৭ ও ৮ বিধি অনুসারে দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং যথাযথ স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে রিকশাওয়ালা ও ট্রাফিক পুলিশের কাজের পরিবেশ তৈরিতে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে নাÑ জানতে চাওয়া হয়েছে।
রিটের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ রিটে উল্লেখ করেন, রাজধানীতে কোটি কোটি মানুষের বসবাস। কাজের তাগিদে প্রতিনিয়ত রাস্তায় বের হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। সাধারণ মানুষ অল্পসময় রাস্তায় থাকলেও বেশি সময় রাস্তায় কাজ করতে হয় রিকশাচালক ও দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষকে। এতে তাদের হর্নের উচ্চ শব্দ শুনতে হয় দিনের পর দিন। ফলে কানের ক্ষতি হচ্ছে তাদের। কানে শুনতে পাচ্ছেন না অনেকেই। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের আইনি বাধ্যবাধকতা প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন