অর্থনীতির ‘লাইফ লাইন’ খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অব্যস্থাপনার কারণে দীর্ঘা হচ্ছে যানজট। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত হলেও যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা মুক্তি পাচ্ছেন না যানজটের দুর্বিষহ যন্ত্রণা থেকে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথেই আটকে থাকছে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন। নষ্ট হচ্ছে শত শত কর্মঘণ্টা। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যানজটের কারণ অনুসন্ধানের জন্য গত কয়েকদিন সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহাসড়কটি ৮ লেন দিয়ে শুরু হয়েছে। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী প্রান্ত থেকে শিমরাইল পর্যন্ত আট লেন। এরপর চার লেনের কাঁচপুর সেতু। এই মহাসড়কে আছে দুই লেনের মেঘনা এবং মেঘনা গোমতী সেতু। আট ও চার লেনের মহাসড়কের তুলনায় সরু সেতুর কারণে বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। চালক, যাত্রী, স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুর কারণে মূলত যানজট হচ্ছে। আট ও চার লেন দিয়ে আসা দ্রুত গতির যানবাহনগুলো সেতুর মুখে এসে প্রায় থেমে যায়। চার বা দুই লেনের এসব সেতু দিয়ে আসা যানবাহন একসঙ্গে পার হতে পারে না। এতে ক্রমেই অপেক্ষায় থাকা গাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকে।
ঈদকে সামনে রেখে গরু ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল বেড়ে যাওয়ায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে কুমিল্লার গৌরীপুর পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট এখন নিত্যদিনের চিত্রে পরিণত হয়েছে। এছাড়া গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার রাস্তার ওপর ইউটার্ন রয়েছে ১৮টি। মহাসড়কের উপরে অবৈধ লেগুনা, মিসি-মারতি ট্রাকপার্কিং, হাটবাজার ও দোকানপাট বসানো হয়েছে। এছাড়া অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ এসব কারণে দীর্ঘ এই মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে চার লেনে উন্নীত হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সুফল মিলছে না। বরং উল্টো পথে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচলে মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেড়েছে। অথচ মহাসড়ক নির্মাণের সময় লক্ষ্য ও আশা ছিল যানবাহন চলাচলে গতি আনা, যানজট দূর করা, যাত্রী ও পণ্য পরিবহন দুটিই ত্বরান্বিত করে ভোগান্তি কমানো।
দাউদকান্দি থেকে আলেখারচর পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার সড়কে পথে বসেছে আটটি বাজার। এসব বাজারের কারণে চার লেন তিন লেনে পরিণত হয়েছে। মহাসড়কের শহীদনগর, গৌরীপুর, ইলিয়টগঞ্জ, কুটুম্বপুর, মাধাইয়া, চান্দিনা, কোরপাই, নিমসার বাজারে চার লেনের দুই লেনই দখল হয়ে গেছে। মহাসড়কের পাঁচটি স্থানে যাত্রী ওঠানামার জন্য বিশাল বাস বে নির্মাণ করা হলেও মূল রাস্তার ওপর দাঁড়িয়েই যাত্রী ওঠানামা করা হচ্ছে। রাস্তায় বসেছে অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড। সড়কের আশপাশের শিল্প-কারখানাগুলোর বিশাল গাড়িগুলো পার্ক করা হয়েছে সড়কের ওপর। ইউটার্ন নিতে মাত্র এক কিলোমিটার বেশি পথ চলতে হয়, তাই উল্টো পথে দু-তিন কিলোমিটার যাচ্ছে কাভার্ডভ্যান ও প্রাইমমুভারের মতো বিশালাকারের গাড়ি। আর যেখানে-সেখানে বাসস্ট্যান্ড বানিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের ঘটনা।
হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মহাসড়কের উপর গাড়ি পার্র্কিং ও উল্টোপথে গাড়ি চালকদের প্রাথমিকভাবে সতর্কতা করাসহ মামলা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। তবে মানুষ সচেতন না হলে জোর করে নিয়ম মানানো সম্ভব নয়।
কুমিল্লায় বেড়াতে এসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন মহাসড়কে ভ্রমণের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন, তিনি বলেন, চার লেনের কাজ শেষ হওয়ার পর আশাবাদী ছিলাম নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারব। কিন্তু রাস্তায় নেমে অবাক হয়েছি!
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসা যাত্রী আশিকুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা লাগে। চার ঘণ্টায় আসার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে। অবৈধ পার্কিং, বাজার ও যান চলাচল বন্ধ না হলে চার লেনের সুফল কোনোভাবেই পাওয়া যাবে না। ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য কামরুজ্জামান জানান, দীর্ঘ ১০ বছরের ভোগান্তি সহ্য করে পাওয়া চার লেনের প্রত্যাশা আজও পূরণ হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন