বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

সারাদেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং অভিযোগ দিয়েও গ্রাহকরা সেবা পাচ্ছেন না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

এবারের ঈদুল আযহার ঈদে সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুতের লোডশেডিং-এর কবলে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। লোডশেডিং এবং বিদ্যুতের বিতরণের ত্রুটির শিকার হয়েছেন রংপুর বিভাগের গ্রাহকরা। এছাড়া অনেক জেলায় বিদ্যুত থাকলেও ভোল্ট না থাকার কারণে গ্রাহকেদের ফ্রিজ নষ্ট হযেছে আবার কেউ কোরবানীর মাংস রাখতে পারেনি। গতকাল শনিবার বিভিন্ন এলাকা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে বিদ্যুৎ কোম্পানি গুলোকে অভিযোগ করেও নাগরিক সেবার পাচ্ছে না গ্রাহকরা।
ঈদুল আযহার সময় চাহিদা না থাকায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়েছে। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে বলা হয়েছে, চাহিদার সময় দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১১ হাজার মেগাওয়াটের মতো, যা চাহিদার পুরোটাই পূরণ করতে পারে। তবে উত্তর বঙ্গে আপাতত বড়পুকুরিয়া কেন্দ্রের কারণে রংপুর বিভাগে কিছুটা সংকট রয়েছে। ঈদের সময় অফিস-আদালত বন্ধ থাকার পাশাপাশি বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে চলে যাওয়াতে রাজধানীর বিদ্যুৎ চাহিদা কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়েছে।
পিডিবি’র পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, আমরা ১১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করি। কিন্তু ঈদে চাহিদা কম থাকায় ৯ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ছিল। কি কারণে লোডশেডিং হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিতরণ লাইনে ত্রুটির কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। আমাদের এখানে বিতরণ কোম্পানিগুলো যে চাহিদা দিয়েছে, তার পুরোটা সরবরাহ করা হয়েছে।
ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) হারুন অর রশীদ ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীতে এই সময় বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। ফলে লোডশেডিং হবার কথা নয়। তবে বিতরণ লাইনের সমস্যা এবং ট্রান্সফরমারের কারিগরি ত্রুটির কারণে কিছু সমস্যা হতে পারে।
সাধারণত নির্দিষ্ট বিরতিতে নিয়মিতভাবে পাঁচ মিনিট বা তার বেশি সময় বিদ্যুৎ না থাকাকে লোডশেডিং বলা হয়। আর অনির্দিষ্ট সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকাকে বিতরণ ত্রুটিজনিত সমস্যা বলেই ধরা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎগ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে বিতরণ ত্রুটির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঈদের কারণে বিতরণ কোম্পানির কর্মিরাও লাইনগুলো সংস্কার করে গ্রাহককে ভোগান্তির হাত থেকে সহজে রক্ষা করেনি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম উলিপুরে বাবার বাড়িতে ঈদ করতে গিয়েছিলেন শিল্পী আক্তার। উলিপুর পৌরসভায় ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে ৪/৫দিন বিদ্যু ছিল না। এরপর ঈদের দিন মোটামুটি বিদ্যুৎ ছিল। কিন্তু এখন আবার দিনের বেলায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করলে তারা নানা দিনাজপুরের কয়লা খনির সমস্যার কথা বলছেন।
ভোলার ঈদের ছুটিতে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে চ্যানেল ২ ফোরের এক সাংবাদিক তিনিও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। তিনি জানান, প্রতিদিনই সন্ধ্যায় এক থেকে দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ অফিসে কথা বলেও কোনও প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। গাইবান্ধার সতীতলা গ্রামে ঈদের পরের রাত থেকে প্রায় ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। এতে অনেকের ফ্রিজে থাকা কোরবানির মাংসও নষ্ট হয়ে গেছে। আরইবি’র অফিসে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, গাছ পড়ে বিতরণ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরামত করতে সময় লাগছে। ঈদুল আজহার দিনেও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ার কথা জানিয়েছে রংপুর এলাকার শত শত নাগরিক। ঈদের দিন সকাল ছ’টায় নগরীর বেশিরভাগ স্থানে বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হয়। চলে একঘণ্টাব্যাপী। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত কখনও আধা ঘণ্টা কখনও একঘণ্টা ধরে লোডশেডিং চলে। রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রামের উলিপুর, চিলমারী, রৌমারিসগ রংপুর শহরে বাইরের অবস্থা আরও ভয়াবহ, বিশেষ করে উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং ঘণ্টায় ঘণ্টায় হচ্ছে। এদিবে বিদ্যুৎ না দিতে পাড়ায় কুড়িগ্রামের উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যনকে মারধর করেছে গ্রাহকরা।
শেরপুর এলাকার বাসিন্দার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক আব্দুল মালেক ইনকিলাবকে বলেন,এবারে ঈদে যেমন গরম তেমন আবার রাতে দিনে বিদ্যুৎ খাকে না। যদি সন্ধায় আসে এক ঘন্টা থেকে চলে যায় আর আসে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরইবি’র একাধিক কর্মকর্তা জানান, তারা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তারপরও কোথাও কোথাও বিতরণ লাইনের সমস্যার কারণে বিদ্যুতের সরবরাহে বিভ্রাট হচ্ছে। তবে অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রæত তা মেরামতের নির্দেশ দেওয়া আছে। আগের তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিস্থিতি ভালো। কিন্তু বিতরণ লাইনের সমস্যার কারণে সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়ছে। বিতরণ লাইনের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে আরইবি। কেবল রাজধানীর বাইরেই নয়, এবারের ঈদে রাজধানীর অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যাবার ঘটনা ঘটেছে, এমন অভিযোগও আছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রামপুরা, গেন্ডারিয়া, মধুবাগ, মিরপুর, শাহবাগ, মতিঝিলসহ বেশ কিছু এলাকায় ঈদের ছুটির তিন দিনে বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। তবে সেটি লোডশেডিং বলতে নারাজ বিতরণ কোম্পানিগুলো। তারা বলছে, বিতরণ লাইনের ত্রুটির কারণে কোথাও কোথাও কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। কিন্তু রাজধানীতে ঈদের ছুটির সময় যে পরিমাণ চাহিদা ছিল, তার পুরোটাই সরবরাহ করেছে তারা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন