সরকারের নির্বাহী আদেশ রাতেই জারি : ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর :: বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা
পঞ্চায়েত হাবিব
নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামের প্রভাবে অসহনীয় মূল্যস্ফীতির মধ্যে দেশে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিটে ৫ শতাংশ হারে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। গত ১৪ বছরে এ নিয়ে ১১ বারের মতো গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ল বিদ্যুতের দাম। দাম বাড়ানোর বিষয়ে গণশুনানি হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারের নির্বাহী আদেশ জারি করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। প্রতি ইউনিটে গড়ে ১৯ পয়সা বাড়ানো হয়। চলতি জানুয়ারি মাস থেকেই নতুন দাম কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম এবং অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, বিদ্যুতের দামবৃদ্ধিকে ‹দুরভি সন্ধিমূলক। এর আগে গত ৮ জানুয়ারি রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে সঞ্চালন সংস্থা ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়। গণশুনানি শেষে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি ইউনিটপ্রতি এক টাকা ২১ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু স¤প্রতি জানিয়েছেন, বিদ্যুতের দাম একধাপে বাড়বে না। যাতে গ্রাহকের সমস্যা না হয় এ জন্য ধাপে ধাপে বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম চার থেকে পাঁচ ভাগ বাড়তে পারে।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে সন্ধ্যায় সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
গত নভেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ দাম বাড়ায় এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এটি ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। তাই ডিসেম্বর থেকেই খুচরা দাম বাড়াতে বিইআরসির কাছে আবেদন করে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা। ২ জানুয়ারি এসব আবেদন নিয়ে শুনানি করে বিইআরসি। এরপর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে মতামত জানাতে বলা হয়। তার ভিত্তিতে নতুন দাম ঘোষণা করার কথা বিইআরসির। সরকার ওই পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আগেই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ কিনে নেয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এরপর তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে কিছুটা কম দামে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কাছে বিক্রি করে। ঘাটতি মেটাতে পিডিবি সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয়। তবে বিতরণ সংস্থাগুলো কোনো ভর্তুকি পায় না। তারা নিয়মিত মুনাফা করছে। গত অর্থবছরেও মুনাফা করেছে বিতরণ সংস্থাগুলো। আইন সংশোধন করে গত ১ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন), অধ্যাদেশ, ২০২২’ গেজেট আকারে প্রকাশ করে সরকার। এর মধ্য দিয়ে বিশেষ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সরাসরি বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা যায় সরকারের হাতে। এরপর এই প্রথম সরকার নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। এত দিন বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ করত।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী লাইফলাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বেড়ে ৩ টাকা ৯৪ পয়সা, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ১৯ পয়সা থেকে বেড়ে ৪ টাকা ৪০ পয়সা, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৫ টাকা ৭২ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ১ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৩০ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৩৪ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৬৬ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ৯ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বেড়ে ১০ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১১ টাকা ৪৯ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকা ৩ পয়সা করা হয়েছে। গেজেটে আরো বলা হয়, ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩’-এর ধারা ৩৪ক-তে দেয়া ক্ষমতাবলে সরকার ভর্তুকি সমন্বয়ে জনস্বার্থে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতাধীন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের সরবরাহ করা বিদ্যুতের খুচরা মূল্যহার এবং বিদ্যুৎ সম্পর্কিত বিবিধ সেবার জন্য চার্জ/ফি পুনর্নিধারণ করল। প্রজ্ঞাপনের কোনো বিধানের ব্যাখ্যা বা কোনো অস্পষ্টতা দেখা দিলে তা বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠাতে হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। বিদ্যুতের নতুন বিল হার ও বিবিধ সেবার ফি জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
সরকারি এক তথ্য-পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় মূল্য ছিল ৩ টাকা ১৫ পয়সা। ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ১১ দফায় দাম বাড়ানোর ফলে বর্তমানে ইউনিটপ্রতি গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৫৬ পয়সা। অর্থাৎ এরই মধ্যে বর্তমান সরকার ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১২৬ দশমিক ৪০ শতাংশ বাড়িয়েছে। এবার ইউনিটপ্রতি ১৯ পয়সা বাড়ানো হলে আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদ মিলিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ার হার দাঁড়াবে ১৬১ দশমিক ৭ শতাংশ। আগামী এক বছরে সরকার বিদ্যুতের দাম আর না বাড়ালেও প্রতি পাঁচ বছর মেয়াদে গড়ে মূল্যবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে প্রায় ৫৪ শতাংশ। গত ১৪ বছরে এ নিয়ে ১১ বারের মতো গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ল বিদ্যুতের দাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার অতীতে কোনো সরকার এত উচ্চ হারে বিদ্যুতের দাম চাপিয়ে দেয়নি বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, সরকার অযৌক্তিক ব্যয় না কমিয়ে এভাবে দাম বাড়াচ্ছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলো প্রায় ২৩ শতাংশ। এরপর স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি না এনে এলএনজিতে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার যে ঘাটতি ছিল, সেটা সমন্বয় করা হলো। সেই ঘাটতির মধ্যে সরকারের মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা ছিল। বাকি পুরোটা ভোক্তাদের পয়সা। জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে নেয়া হলো ৬ হাজার কোটি টাকা, কোম্পানিগুলোর বাড়তি সঞ্চিত মুনাফা থেকে নেয়া হলো আড়াই হাজার কোটি টাকা। এই টাকায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হলো না, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিভিত্তিক এলএনজি আনার পরিমাণও কমিয়ে দিলো। যেখানে ৭০০ বা সাড়ে ৭০০-এর উপরে আনার কথা, সেখানে ৩৫০ থেকে ৩৬০ এমএমসি গ্যাসও আনা হয়েছে। এভাবে এলএনজির আমদানি কমিয়ে গ্যাসের ভর্তুকি কমানো হয়েছে বা সমন্বয় করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার এর পেছনে যুক্তি দেবে যে তারা ভর্তুকি দিচ্ছে, সেই ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে হবে। আইএমএফও বলেছে ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে। এই ভর্তুকি কাদের দেয়া হচ্ছে, কেন দেয়া হচ্ছে এবং সেটা না দেয়ার পথ কীÑ এগুলো বিবেচনায় নেয়া হয় না। বিদ্যুৎ খাতের বড় ভর্তুকি যাচ্ছে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার কারণে। সরকারের পুরো বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা জনগণকে বিদ্যুৎ দেয়ার জন্য নয়। মানুষকে বিদ্যুৎ না দিয়ে একটি গোষ্ঠীকে টাকা দেয়ার জন্য এই পরিকল্পনা। ‹গণশুনানিটা লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন এর আগে বলেন, আমার কাছে মনে হয় এটা গ্রহণযোগ্য বৃদ্ধি। এখন তারা ১৯ শতাংশ বাড়িয়েছে। সুতরাং আমি মনে করি এটা গ্রহণযোগ্য বৃদ্ধি। তবে, বিদ্যুতের দাম দীর্ঘমেয়াদে কমাতে হবে। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ যেন বেশি থাকে, সেটার ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য আবু মো. ফারুক বলেন, সরকার নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে পারে। আমরা এখনও বিষয়টি জানি না।’
গত রোববার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে সঞ্চালন সংস্থা ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর বিইআরসি আয়োজিত গণশুনানি শেষে এ প্রস্তাব করা হয়। এতে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২১ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। এছাড়া পাইকারি পর্যায়ের পর এবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দর ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে এ কমিটি। শুনানির বিষয়ে ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে বিদ্যুতের দামের ওপর আদেশ ঘোষণা করবে বিইআরসি। অন্যদিকে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে এ মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে এবং এর প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে বলে দাবি করেছেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (ক্যাব)।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আবেদনের যৌক্তিকতা ও ন্যায্যতা প্রমাণের দায়িত্ব আবেদনকারীর। বিইআরসি জনস্বার্থ ও ভোক্তাস্বার্থ বিবেচনা করে আদেশ দেবে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ হলে খরচ কমে আসবে। তখন দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। তা না করে গ্রাহকের পকেট কাটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে গ্রাহকের ওপর আর বোঝা না চাপানোর দাবিও জানান তিনি। অন্যদিকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে জনগণের কষ্ট বাড়বে। ক্যাব মনে করে, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে বাজারে সব পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়ে যাবে। যেটা সাধারণ বা নি¤œ আয়ের মানুষের আয়সীমা ছাড়িয়ে যাবে। তাই এ মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত উচিত হবে না।
বিইআরসি জানিয়েছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) বিদ্যুতের খুচরা দাম পুনর্নির্ধারণের আবেদন করেছে। তাদের আবেদনের ওপরই গণশুনানি হবে। একই সঙ্গে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির সঞ্চালন মাশুল বাড়ানোর আবেদন নিয়েও শুনানি হবে।
শুনানিতে বিইআরসির কারিগরি কমিটি প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ১ টাকা ১০ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। সেই হিসেবে খুচরা বিদ্যুতের মূল্য গড়ে ৭ দশমিক ১৩ পয়সা থেকে বেড়ে ৮ দশমিক ২৩ পয়সা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে বৃদ্ধি পেতে পারে ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। শুনানিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতি টন কয়লার দাম ২৩০ ডলার এবং প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ৭০ টাকা হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন। তবে বিইআরসি পাইকারি মূল্য বৃদ্ধিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কাজেই এই মূল্য কাঠামো ধরে দাম বাড়ানো হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হবে না। গত বছরের ২১ নভেম্বর পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়েছিল বিইআরসি। নতুন দাম ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। ওই বাড়তি দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আবেদন করে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা। তাদের আবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের পর খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি। গত দুই বছরে বিভিন্ন খাতে খরচ বেড়েছে। এছাড়া এখন পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কারণে একটা ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই। পাইকারি পর্যায়ে যে দাম বাড়ানো হয়েছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে বলে আবেদনে যুক্তি তুলে ধরা হয়। দাম বাড়ানোর কারণে ভোক্তাদের ওপরে চাপ কতটা পড়তে পারে তারও ব্যাখ্যা তুলে ধরেছে বিতরণ সংস্থাগুলো। গ্রাহক বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে তাদের ওপর বাড়তি খরচের চাপ পড়বে না। গত দফায় পাইকারি দাম বাড়ানোর ঘোষণার দু’দিন পরেই ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আবেদন করে বিদ্যুৎ উয়ন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এর এক সপ্তাহের মধ্যে অন্য পাঁচ বিতরণ কোম্পানিও দাম বাড়ানোর আবেদন করে। এসব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে দেয় বিইআরসি। যে কমিটি বিতরণ সংস্থাগুলোর আবেদন যাচাই-বাছাই করে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করে। যার ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
সবশেষ ২০২০ সালের ফেব্রæয়ারিতে সব পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। সে সময় পাইকারি পর্যায়ে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোক্তা পর্যায়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন