বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) পাইকারি মূল্য ৬৬ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিল। এনিয়ে গতকাল বুধবার রাজধানীতে দিনব্যাপী গণশুনানির আয়োজন করা হয়। তার প্রেক্ষিতে বিইআরসি ৫৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ মূল্য বাড়ানোর পক্ষে সুপারিশ করেছে।
বর্তমানে পিডিবি প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৫ দশমিক ১৭ টাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করে। এর আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই মূল্য বাড়ানো হয়েছিল। জানুয়ারিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে ৩ দশমিক ৩৯ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে বিইআরসির কারিগরি টিম প্রতি ইউনিট মূল্য ২ দশমিক ৯৯ টাকা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। পাইকারি বিক্রেতা পিডিবি নিজস্ব উৎপাদনের পাশাপাশি আমদানিকৃত এবং বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেনে।
এ ছাড়া ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রামের শহরাঞ্চলে পাঁচটি বিতরণ কোম্পানির কাছে সংস্থাটি পাইকারি মূল্যে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে। পিডিবির প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়, চাহিদা-অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় তেল পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ সম্প্রতি অনেক বেড়েছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতিইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য ছিল ২ দশমিক ১৩ টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে হয়েছে ৩ দশমিক ১৬ টাকা। জ্বালানি তেলের ও কয়লার মূল্যবৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে প্রতিইউনিট উৎপাদন খরচ বেড়ে ৪ দশমিক ২৪ টাকা হবে। পাইকারি মূল্য না বাড়ালে চলতি বছর ৩০ হাজার কোটি টাকা লোকসান দেবে পিডিবি।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে রফতানি ব্যয় বেড়ে যাবে, আবার না বাড়লে তারও প্রভাব রয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে ব্যালান্সিং ও সবার জন্য সহনশীল সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, আমরা যুক্তিতর্ক লিপিবদ্ধ করেছি। সব বিচার বিশ্লেষণ করা হবে। আপনাদের আরও কোনো মতামত থাকলে পোস্ট শুনানি দাখিল করতে পারবেন। আগামী ৩১ মে পর্যন্ত দেওয়া যাবে লিখিতভাবে। আমার সেগুলো বিচার বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত জানাব।
তিনি আরও বলেন, ডিমান্ড চার্জের বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন দেশ সম্প কোয়ালিটি বিদ্যুৎ দিতে না পারলে তার জন্য ইউটিলিটিকে জরিমানা দিতে হবে। ডিমান্ড চার্জ নিবেন, ফেল করলে আপনাকে জরিমানা দিতে হবে। যদি তাই হয় তাহলে আমরা পাইকারিতে ডিমান্ড চার্জ দিতে আপত্তি নেই।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হলে অর্থনৈতিক প্রভাব কি পড়বে, আপস্টিমে, ডাউনস্টিমে কি প্রভাব পড়বে, তার কোন বিশ্লেষণ প্রস্তাবে উঠে আসেনি। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে রফতানি ব্যয় বেড়ে যাবে। সবকিছু বিবেচনা করে ব্যালান্সিং ও সবার জন্য সহনশীল সিন্ধান্ত দেওয়া হবে। বিইআরসি কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে শুনানি গ্রহণে উপস্থিত ছিলেন সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান, মোহাম্মদ আবু ফারুক ও মো. কামরুজ্জামান।
অন্যদিকে এই সুপারিশকে গণবিরোধী হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ। সংগঠনটির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্য বৃদ্ধি মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির সাথে সাথে বিদ্যুতের অবান্তর প্রস্তাব মেনে নেয়া মানে বাংলাদেশকে বিপথগামী করে সাধারণ মানুষদের মধ্যে যে ভয় ঢুকে গেছে যে শ্রীলংকার মত হয়ে বাংলাদেশ তা আরেক ধাপ বাস্তবায়ন করে দেয়ার জন্য বিদ্যুৎ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত মরন ফাঁদ হিসেবে কাজ করবে। তাই এই গণবিরোধী প্রস্তাব বাতিল করার দাবি জানাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন