চলতি অর্থবছরের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ চলতি বছর পণ্য ও সেবা রফতানির মাধ্যমে দেশ ৪৪ বিলিয়ন ডলার আয় করতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিল ৪১ বিলিয়ন ডলার। নতুন অর্থবছরের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের চেয়ে ৩ বিলিয়ন ডলার বেশি। ঘোষিত রফতানি লক্ষ্যমাত্রায় পণ্য রফতানি বাবদ ৩৯ বিলিয়ন ডলার ও সেবা রফতানি খাতে ৫ বিলিয়ন ডলারের প্রাক্কলন করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের পণ্য রফতানি খাতে ৬.৩৬ শতাংশ ও সেবা খাতে ৭.৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। নতুন অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ৭ শতাংশের সামান্য বেশি। রফতানি বাড়াতে বিগত অর্থবছরে সরকার ২৭টি পণ্য রফতানি খাতে বিভিন্ন হারে নগদ সহায়তা দিয়েছে।
এ বছর এ তালিকা আরও সম্প্রসারণ করে আরও ৯টি পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের রফতানি আয় প্রতি বছর বৃদ্ধি পেলেও এর বড় অংশ জুড়ে আছে তৈরি পোশাক খাত। তৈরি পোশাক খাতে গত অর্থবছর ৩০.৬১ বিলিয়ন ডলার রফতানি হয়েছে। এ খাতের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছর এ খাত থেকে ৩২ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। নতুন বাজারে পোশাক রফতানিতে এতদিন ৩ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা ছিল, এখন তা বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। আগামীতে পোশাক রফতানিতেও ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। দেশের মোট পণ্য রফতানির ৭৫ ভাগ জুড়ে আছে তৈরি পোশাক খাত। রফতানি আয় বহুমুখীকরণে নানা ধরনের পণ্য উৎপাদন ও বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি রফতানি বৃদ্ধির স্বার্থে অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যবসায়িক জটিলতা নিরসন, সরকারের সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল করার দাবি রয়েছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশের রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে সরকার পর্যাপ্ত কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, যা দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক রফতানি বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাংলাদেশ আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষতা অর্জন করেছে। রফতানি আয়ের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের স্থান এখন দ্বিতীয়। ভারতের পরই বাংলাদেশের স্থান। এ ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে ব্যাপক বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। রফতানি খাতকে বহুমুখী করার উদ্যোগ নেওয়াও জরুরি।
রফতানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের উন্নতি চোখে পড়ার মতো। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ ২৫টি পণ্য ৬৮টি দেশে রফতানি করে আয় করত মাত্র ৩৪৮ দশমিক ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছর অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭৪৪টি পণ্য বিশ্বের ১৯৮টি দেশে রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। আমাদের রফতানির প্রধান খাত দুটি। একটি পণ্য রফতানি আর একটি সেবা রফতানি। আমরা রফতানি বলতে শুধু পণ্যকে বোঝালেও সেবা খাতটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেবা রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ১৭৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং সার্ভিস সেক্টরে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং সার্ভিস সেক্টরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশের রফতানি সামর্থ্য বাড়াতে হলে উৎপাদন সামর্থ্য বাড়াতে হবে। তার জন্য দরকার অবকাঠামো ও দক্ষতার উন্নয়ন। এই ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাই মুখ্য। রফতানিমুখী শিল্পে ছাড় দেওয়াসহ জ্বালানি ও পুঁজিসহায়তা খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজন নতুন বাজার খোঁজায় দূতাবাসগুলোর আরও সক্রিয়তা।
বিশ্বের বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ চীন হালকা প্রাযুক্তিক পণ্য থেকে ভারী ও জটিল প্রযুক্তির পণ্য তৈরিতে মনোযোগী হয়েছে। খেলনা, সাইকেল, হালকা ইলেকট্রনিক পণ্যে চীনের বাজার নিয়ে নেওয়ার দারুণ সুযোগ তাই বাংলাদেশের সামনে। এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য ব্যাপক রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রয়োজন রফতানিসহায়ক শিল্পনীতি।
লেখক: পরিচালক, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন