জনশক্তি রফতানির অন্যতম দেশ সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজার নস্যাতের চক্রান্তে মেতে উঠেছে সুবিধাবাদী চক্র। বিধি বর্হিভূতভাবে রাতারাতি এনওসি লাভের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর গমনেচ্ছু কর্মীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় হাতিয়ে নিতে উঠে পড়ে লেগেছে সুবিধাবাদী চক্র। দেশটিতে বর্তমানে ১ লক্ষ ১০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সউদীসহ বিভিন্ন দেশে ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৫৮৯ জন কর্মীর চাকরি লাভ করেছে।
সিঙ্গাপুরস্থ প্রোগ্রেসিভ বিল্ডার্সের বিতর্কিত উদ্যোগে জনশক্তি রফতানিকারকরা শঙ্কিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়েসিস সার্ভিসেস রিক্রুটিং এজেন্সি সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণের তালিকাভুক্তির পর প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নানা রকম প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে। মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে ওয়েসিস সার্ভিসেসকে সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণের তালিকা থেকে বাদ দেয়। ওয়েসিস সার্ভিসেস তথ্য গোপন করে প্রায় ৩ হাজার ৩৭ জন কর্মীর বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করে সিঙ্গাপুরে প্রেরণ করে। একই সাথে এজেন্সির সিঙ্গাপুরস্থ অংশীদার প্রোগ্রেসিভ বিল্ডার্স সাথে যোগসাযস করে কর্মী প্রেরণের নামে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
ওয়েসিস সার্ভিসেস প্রোগ্রেসিভ বিল্ডার্সের মাধ্যমে জালিয়াতি করে বর্হিগমন ছাড়পত্র গ্রহণের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে কর্মী পাঠানোর সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। বিগত ১৫ ডিসেম্বর প্রবাসী মন্ত্রণালয় এক আদেশে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনে মেসার্স ওয়েসিস সার্ভিসেস (আরএল ৯৯১) এর লাইসেন্স দুই বছরের জন্য স্থগিত করাসহ প্রোগ্রেসিভ বিল্ডার্স এর সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণে এনওসি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত রাখে। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তার যোগসাজশে গত ২ ফ্রেব্রুয়ারি প্রোগ্রেসিভ বিল্ডার্স এক পত্রের মাধ্যমে ওয়েসিস সার্বিসেসের পরিবর্তে মাজ ওভারসিস লিমিটেডকে বাংলাদেশের পার্টনার দেখিয়ে নতুন করে কর্মী প্রেরণের সাইন্সের আবেদন করে।
প্রোগ্রেসিভ বিল্ডার্স প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের রিভাইসড গাইড লাইন ২০১৮ এর ক্লজ ১২ এবং ১৪ এর পরিপন্থী জিহান ওভারসীজকে অবহিত না করেই এনওসির অনুমোদনের আবেদন জানায়। প্রোগ্রেসিভ বিল্ডার্সকে নতুন লাইসেন্স পাইয়ে দেয়ার অংশ হিসেবে গত ৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মোহাম্মদ আলী এক জরুরি চিঠিতে ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিএমইটির মহাপরিচালকের কাছে মাজ ওভারসিসের লাইসেন্স নবায়ন ও কোনো অভিযোগ আছে কী না জানিয়ে প্রতিবেদন প্রেরণের অনুরোধ জানায়। রাতারাতি এনওসি লাভের অনুমোদন দেয়ার প্রক্রিয়ায় প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের অনেকেই হতবাক। জিহান ওভারসীজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাদা আহমেদ রনি গতকাল বুধবার প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, প্রোগ্রেসিভ বিল্ডার্স মাজ ওভারসীজের অনুক’লে একটি নতুন নামে এনওসি জন্য আবেদন করেছে যা আমরা অবগত নই। আমাদের সাথে আলোচনা না করে এই নামে এনওসি দেয়া হলে আমরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবো। যা প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের রিভাইসড গাইড লাইন ২০১৮ এর ক্লজ ১২ ও ১৪ এর পরিপন্থী। মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মোহাম্মদ আলী গতকাল তার দপ্তরে ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রভাবশালী মহলের চাপে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সিঙ্গাপুরের প্রোগ্রেসিভ বিল্ডাসের অনুরোধে মাজ ওভারসীজকে এনওসি দেয়ার অভিযোগটি সঠিক নয়। এ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে তদন্ত ও যাচাই বাছাই করার উদ্যোগে নেয়া হয়েছে। সহকারী সচিব মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের রিভাইসড গাইড লাইন ২০১৮ এর ১২ ও ১৪ এর পরিপন্থী হিসেবে মাজ ওভারসীজকে এনওসির অনুমোদন দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন