শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জনশক্তি রফতানি সঙ্কটে

শামসুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছে-বিশ্বব্যাংক : অভিবাসনের টাকা যোগাতে নাভিশ্বাস : কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত
 জনশক্তি রফতানিতে বাড়ছে না গতি। এ খাতের অন্যতম বাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুয়ার এখনো বন্ধ। কুয়েতে চড়া অভিবাসন ব্যয়ে কিছু কিছু কর্মী যাচ্ছে। কুয়েত দূতাবাসের অনুমোদনপ্রাপ্ত বনানীর একটি সংস্থা কুয়েত গমনেচ্ছু কর্মীদের নিবন্ধন ফি ও মেডিকেল পরীক্ষা করতে জনপ্রতি সাড়ে তের হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব বিষয় দেখার যেন কেউ নেই। এতে অভিবাসন ব্যয় হু হু করে বাড়ছে। লিবিয়া ও ইরাকে কর্মী যাওয়া বন্ধ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে ভাটার টান চলছে। ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলেও জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় দশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধীরগতিতে কর্মী যাচ্ছে। মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের অভিবাসন ব্যয়ের টাকা যোগাতে নাভিশ্বাস উঠেছে। ভিটে-মাটি ও গবাদি পশু বিক্রি করে মালয়েশিয়ায় চাকুরির সোনার হরিণ ধরতে কর্মীরা দিশেহারা। চলতি বছর জনশক্তি রফতানিতে দশ লাখ কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অদূরদর্শী কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ায় জনশক্তি রফতানির এ লক্ষ্যমাত্রা এবার পূরণ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে খোদ জনশক্তি রফতানিকারকদের মাঝেও চরম হতাশা বিরাজ করছে। গতকাল বুধবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কর্মসংস্থান সুযোগ সে তুলনায় বাড়ছে না। তিনি বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির চালিকা দুর্বল। রফতানি ও রেমিট্যান্স কমে গেছে। যেটা কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস্য। অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমেছে। ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৩ দশমিক ১ শতাংশ হারে কর্মসংস্থানের ক্ষেত বেড়েছে। কিন্ত পরবর্তীতে ২০১১-২০১৬ পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মহীনতার এই নেতিবাচক প্রভাব যুব ও নারীদের ওপর বেশি পড়েছে। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, শিক্ষিত বেকার বেড়েই চলছে আর এজন্য প্রয়োজন প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা। গত দুই বছরে রেমিট্যান্স কমেছে জানিয়ে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, উল্লেখিত সময়ে ১৬ লাখ কর্মী বিদেশে গেছে। কিন্ত তারপরও রেমিট্যান্স কমেছে। আমাদের মনে হয় ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে অনেক শর্ত থাকায় অবৈধ পথে রেমিট্যান্স আসছে।
গত জানুয়ারী মাস থেকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ৭ লাখ ২৮ হাজার ৪শ’ ৫৭ জন কর্মী চাকুরি লাভ করেছে। এর মধ্যে গত মার্চ মাসে ১ লাখ ৬ হাজার ৫শ’ ১ জন কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থান লাভ করেছে। গত এপ্রিল মাসে বিভিন্ন দেশে ৯৫ হাজার ৪শ’ ৮৫ জন কর্মী চাকুরি লাভ করেছে। গত আগস্ট মাসে বিভিন্ন দেশে ৯৩ হাজার ৩শ’ ৪১ জন কর্মী চাকুরি লাভ করেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ৩৮ হাজার ৪শ’ ১১ জন কর্মী চাকুরি লাভ করেছে। ভারপ্রাপ্ত সচিবের দোর্দন্ড প্রতাপশালী পিএস আরিফ আহমেদের পরামর্শে অতিসম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিকে উপেক্ষা করে সউদী আরবে গমনেচ্ছু অভিবাসী কর্মীদের (এককসহ) ভিসা সত্যায়ন বাধ্যতামূলক সম্পর্কিত সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এতে বিদেশ গমনেচ্ছু একক ভিসার কর্মীদের ছাড়পত্র ইস্যুও বন্ধ করে দেয়া হয়। পিএস আরিফ আহমেদের দুর্ব্যবহারে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। উক্ত পিএস-এর বিধি বহির্ভূত প্রভাবের কারণে বিএমইটি’র মহাপরিচালক সেলিম রেজা ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বোর্ড সভার সুপারিশকৃত ৫১টি নতুন রিক্রুটিং এজেন্সি’র লাইসেন্স অনুমোদনের ফাইল ভারপ্রাপ্ত সচিবের দপ্তরে প্রায় এক মাস ধরে আটকা পড়ে রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো যুক্তিসঙ্গত আপত্তি না থাকলে এসব ফাইল ৭২ ঘন্টার বেশি একজন পিএস-এর টেবিলে পড়ে থাকতে পারে না। জানা গেছে, ঐ পিএস এসব আটকেপড়া ফাইল নিয়ে মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে বলে নাকি গুজব ছড়িয়েছেন। জনশক্তি রফতানির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার লক্ষ্যে বেসরকারী পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া ৫১টি নতুন এজেন্সি’র চূড়ান্ত অনুমোদন কী কারণে কার ইশারায় লাল ফিতার দৌরাত্বে আবদ্ধ তা জানা যায়নি। জনশক্তি রফতানিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জনে বাধার অন্যতম কারণও এসব আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এতে শ্রমবাজার সম্প্রসারণের কার্যক্রম দারুণভাবে বিঘিœত হচ্ছে। ভুক্তভোগি নতুন এজেন্সি’র কয়েকজন স্বত্বাধিকারী এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নমিতা হালদার রাতে এক প্রশ্নের জবাবে ইনকিলাবকে বলেন, ৫১টি নতুন রিক্রুটিং লাইসেন্সের অনুমোদনের ফাইলের কোনো কিছুই আটকে রাখা হয়নি। কেউ যাতে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার না হয় সে জন্য যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, ১৪শ’ রিক্রুটিং এজেন্সি রয়েছে, যাদের মধ্যে কয়জন ব্যবসা করছে তা দেখতে হবে। এতো লাইসেন্স দেয়ার প্রয়োজন নেই। ৫১টি নতুন রিক্রুটিং লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান। একক ভিসার ছাড়পত্র ইস্যু নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট সম্পর্কে সচিব বলেন, এ বিষয়ে কোনো সমস্যা নেই। মিশনগুলোর সাথে পরামর্শ নিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়।
সচিবের দপ্তরে আটকেপড়া নতুন এজেন্সিগুলো হচ্ছে, ময়মনসিংহ ওভারসীজ, নবদ্বীপ ওভারসীজ লি:, মেরা কনসালটেন্সি, এম এল ওভারসীজ লি:, আদিল ওভারসীজ, নিউ এম ওভারসীজ, জয়নব জাবরীবা ওভারসীজ, এমকো ওভারসীজ, শেখ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আবাবিল ওভারসীজ, মিনা এয়ার, গ্রাম বাংলা, প্রাইম এয়ার, আল-নাজরান, নিউ সাইবা, রুপালী ট্রেড, ওয়ান রিক্রুটমেন্ট, নন্দন এয়ার, মিথিলা ওভারসীজ মোবিন এয়ার, ঈসা ওভারসীজ, নোয়াখালী ওভারসীজ ও ফল্গুনী ওভারসীজ। এসব প্রস্তাবিত এজেন্সির মালিকরা অনুমোদনের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অফিস ভাড়া নিয়ে জনবল নিয়োগ করে প্রতি মাসে তাদের শুধু বেতন ভাতা গুণতে হচ্ছে।
মিশনগুলোর সত্যায়নবিহীন একক ভিসার ক্ষেত্রেও বিএমইটি’র সার্ভার বন্ধ করে দেয়ায় শতাধিক বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির কর্মীর ছাড়পত্রের অনুমতিতে চরম বাধার সৃষ্টি হয়। বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হওয়ায় বিদেশ গমনেচ্ছু আটকেপড়া এসব কর্মীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছিল রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। ফলে জনশক্তি রফতানি নিন্মগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। জনশক্তি রফতানি নিন্মগতি শুরু হওয়ায় এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় এ সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় গত দু’দিন থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নমিতা হালদার মৌখিক নির্দেশে একক ভিসার ছাড়পত্র শিথিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গত মঙ্গলবার ঢাকা ও চট্রগ্রাম থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু ৩ হাজার ৯শ’ ৭৩ জন কর্মীর বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে একক ভিসার ছাড়পত্র ২ হাজার ৯শ’ ৩২ জন এবং দলীয় ভিসার ছাড়পত্র হচ্ছে ১ হাজার ৪১ জন। সউদী আরব হচ্ছে জনশক্তি রফতানির বৃহত্তম বাজার। কোনো সময় না দিয়ে হঠাৎ বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যুর উপর সার্কুলার জারি হওয়ায় বৈধ বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জনশক্তি রফতানিকারকদের মাঝে পুরোপুরি স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বিএমইটি’র আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে। একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সি’র মালিক এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি নতুন নতুন শ্রমবাজার সম্প্রসারণে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার ইস্কাটনন্থ প্রবাসী কল্যাণ ভবনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় কোরিয়ান প্রখ্যাত নির্মাণ কোম্পানী দাইয়ূ ই এন্ড সি এর হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার জুং ওয়ান লীমকে বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কোরিয়ান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দাইয়ূতে অধিক পরিমাণে কর্মী নিয়োগের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। শ্রমবাজার সম্প্রসারণের উপর গুরুত্বারোপ করে এতে আরো বক্তব্য রাখেন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র মহাপরিচালক মোঃ সেলিম রেজা ও শ্রম-অভিবাসন বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। কোরিয়ান দাইয়ূ ইএন্ডসি’র হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার জুং ওয়ান লীম বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বায়রার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু নিয়ে নতুন নতুন সার্কুলার জারি করায় জনশক্তি রফতানিতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বায়রার নেতৃবৃন্দ বলেন, যুগযুগ ধরে বিদেশ গমনেচ্ছু একক ভিসার কর্মীদের কোনো সত্যায়ন ছাড়াই বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে যাচ্ছে। সত্যায়ন ব্যতীত একক ভিসার লাখ লাখ কর্মী বিদেশে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন। এসব রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে। বায়রা নেতৃবৃন্দ বলেন, সত্যায়নের দোহাই দিয়ে কর্মী প্রেরণে পদে পদে বাধার সৃষ্টি করা হলে অভিবাসন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে এবং শ্রমবাজারে অশনি সঙ্কেত দেখা দিবে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিকে অবহিত না করেই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নমিতা হালদার গত ১৪ সেপ্টেম্বর সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ সামছুল ইসলামের স্বাক্ষরের মাধ্যমে দূতাবাস ও কনস্যুলেট জেনারেল কর্তৃক ভিসায় সত্যায়ন ব্যতীত বর্হিগমন ছাড়পত্র প্রদান না করতে বিএমইটি’র মহাপরিচালক সেলিম রেজার কাছে লিখিত সার্কুলার পাঠান। কোম্পানী ভিসা ও গ্রæপ ভিসায় মিশনগুলোর শ্রম সচিবদ্বয়ের সত্যায়নের মাধ্যমেই বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়ে আসছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বরের সার্কুলারের দরুণ সকল দেশের সত্যায়নবিহীন একক ভিসার বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু বন্ধ হয়ে যায়। পরে সচিবের মৌখিক নির্দেশে একক ভিসায় সত্যায়ন ছাড়াই বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু করা হচ্ছে।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সম্প্রতি তার দপ্তরে ইনকিলাবকে বলেন, সত্যায়ন ছাড়া বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু বন্ধের নোটিশ জারি সম্পর্কে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। চলতি বছর বিদেশে দশ লক্ষাধিক কর্মী প্রেরণের টার্গেট করা হয়েছে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে চলতি বছর বিদেশে ১০ লাখ কর্মী প্রেরণের টার্গেট পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ।
জানা গেছে, বিদেশ সফরের বেশি বেশি সুযোগ খুঁজতে থাকেন প্রবাসী সচিবের পিএস। গতকাল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নমিতা হালদারকে ফুসলিয়ে পিএস আরিফ আহমেদ এককভাবে প্রশাসনের কাজ দেখিয়ে বর্তমানে মিসরে প্রায় এক সপ্তাহের সফরে গেছেন। উপর মহলের আশীর্বাদপুষ্ট পিএস আরিফ আগামী ২৯ সেপ্টেম্বরও ভারপ্রাপ্ত সচিবের সাথে রাশিয়ায় এক সফরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। কী কারণে অর্ধশত নতুন এজেন্সির ফাইল পিএস-এর আলমিরাতে তালাবদ্ধ রয়েছে তা কেউ কিছু বলতে পারছে না। পিএস আরিফ আহমেদের দাপটে কর্মকর্তাদের কেউ মুখ খুলতে নারাজ। উল্লেখিত পিএস-আরিফ আহমেদের ওদ্ধ্যত্বপূর্ণ আচরণে অতিসম্প্রতি ঢাকাস্থ ইতালি দূতাবাসে ভিসা আনতে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নমিতা হালদারকে প্রায় ৩৫ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তার পরেও দোর্দন্ড প্রতাপশালী পিএস মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল তবিয়তে রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল অফিসার মঈন উদ্দিন ঘটনার দিন সকালে ভারপ্রাপ্ত সচিবের পাসপোর্ট নিয়ে ইতালি দূতাবাসে যাওয়ার জন্য পিএস আরিফ আহমেদের কাছে গাড়ী চাইলে তিনি গাড়ী না দিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সাথে বলেন, তুমি ছোট কর্মচারী তোমাকে গাড়ী দেয়া যাবে না। তুমি রাজধানীর লোকাল বাসে চড়ে সচিবের পাসপোর্ট নিয়ে ইতালি দূতাবাসে যাও। বাসে ঝুলে পাসপোর্ট নিয়ে ইতালি দূতাবাসে পৌঁছতে আধাঘন্টা বিলম্ব হয়। এতে ভারপ্রাপ্ত সচিব চরমভাবে ক্ষুদ্ধ হন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল অফিসার মঈন উদ্দিন রাতে এ বিষয়টি স্বীকার করে পরে কথা বলবো বলে জানান। এদিকে, গতকাল প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর পিএস ও যুগ্মসচিব মহসীন চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত সচিবের মাঝে কোনো দ্ব›দ্ব নেই। চলতি বছর জনশক্তি রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বদলী আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে প্রশাসনিক কার্যক্রমে অনেকটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সচিব প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বদলী করা হয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সচিবের নিদের্শে উপ-সচিব ফাতেমা জাহানের স্বাক্ষরে এবং স্বারক নং-১০৬৭-এর সার্কুলারে প্রশাসন অধিশাখার উপ-সচিব নাসরীন মুক্তিকে বাজেট অধিশাখায় বদলী করা হয়েছে। কল্যাণ অধিশাখার উপ-সচিব শাহীনা ফেরদৌসীকে কর্মসংস্থান-৪ শাখায় বদলী ও কর্মসংস্থান -৩ শাখায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাজেট অধিশাখার উপ-সচিব ফাতেমা জাহানকে প্রশাসন অধিশাখায় বদলী ও সংসদ ও সমন্বয় শাখার সংসদ বিষয়ক অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কর্মসংস্থান -১ শাখার উপ-সচিব ড. কাজী কামরুন নাহারকে কর্মসংস্থান-২ শাখায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেবা শাখার উপ-সচিব শোভা শাহনাজকে কল্যাণ অধিশাখায় বদলী করা হয়েছে। কর্মসংস্থান -২ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো: সামছুল ইসলামকে সেবা শাখায় বদলী করা হয়েছে। সংসদ ও সমন্বয় শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব রুমানা রহমান শম্পাকে আইসিটি শাখায় বদলী করে সংসদ ও সমন্বয় বিষয়ক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মনিটরিং শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মোছাম্মৎ রাবেয়া বসরীকে আইন শাখার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
তানিয়া ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:২৬ পিএম says : 0
এ সরকার বিশেষভাবে নজর দেয়া উচিত
Total Reply(0)
সজিব ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৩১ পিএম says : 0
আমাদের এই বিষয়ক মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়গুলো কী করেন?
Total Reply(0)
কাসেম ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৬ পিএম says : 0
এই সকল দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে অতিসত্তর তদন্ত হওয়া জরুরী
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন