প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনের দর্পন। সংস্কৃতিই ব্যাক্তি, জাতি ও দেশের প্রকৃত পরিচয় বহন করে। সংস্কৃতি একদিনে বা হঠাৎ করে গড়ে উঠে না। দিনে দিনে মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাস এবং আচার আচরণ, জীবনমান, চিত্ত বিনোদনের উপায় ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে সংস্কৃতি। প্রতিদিন সাধনার দ্বারা সংস্কৃতিকে আয়ত্ত করতে হয়। আমরা যা ভাবি, পছন্দ করি তাই সংস্কৃতি। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহু পুরানো ও সমৃদ্ধশালী। তাইতো বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘যতদিন বাংলার আকাশ থাকবে, বাতাস থাকবে, ততদিন বাংলার সংস্কৃতি থাকবে। তিনি বলেন, অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে সারা বিশ^ আজ একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। আকাশ সংস্কৃতি দেশ ও জাতির সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছে। তাই আকাশ সংস্কৃতির ডামাডোলে গা ভাসিয়ে দিলে চলবে না। বরং তা থেকে ভাল দিকগুলো গ্রহন এবং মন্দ দিকগুলো বর্জন করতে হবে। সারাদেশে আমাদের সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আশা করি আমাদের দেশের কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, নির্মাতা, সংগ্রাহক, গবেষকসহ বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান তা সংরক্ষণে এগিয়ে আসবে। সেগুলো সংগ্রহ করে তা দেশ বিদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আজো বাংলার পথে প্রান্তরে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, মুর্শিদী, মারফতি, জারী, সারী, বাউল গীতি, ঘাটু গান, পালাগান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির বিশাল প্রান্তরে আমাদের অমূল্য গাথাগুলো জাতিসত্বার প্রয়োজনে সংরক্ষণ করা দরকার। বিশেষ করে বাংলার প্রাচীন লোক সাহিত্যসহ আধুনিক লোকগীতি ও লোক সংস্কৃতির গবেষণার জন্য একটি লোক সংস্কৃতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন। এই জন্য বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের উদ্যোগে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতায় ময়মনসিংহ শহরে তিন একর জমির উপর একটি আন্তর্জাতিক লোক সংস্কৃতি ইনষ্টিটিউট গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিতেও এই উন্নয়নের ছোয়া আজ স্পষ্ট।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের উদ্যোগে দেশী-বিদেশী লোক সংস্কৃতি গবেষক ও শিল্পীদের নিয়ে আজকের আন্তর্জাতিক লোক সংস্কৃতি উৎসব দেশ বিদেশের লোক গবেষক ও শিল্পীদের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে এবং এ অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য ও জীবনমান উন্নয়নে সুদূর প্রসারী ভূমিকা রাখবে। তিনি বুধবার বিকালে মোক্তারপাড়া মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে আন্তর্জাতিক লোকসংস্কৃতি উসৎব ২০১৮ এর উদ্বোধন কালে এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি পুরাতন জেলখানায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ই্নকিউভিশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি মোস্তফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট লোক গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার। বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সবুজ কলি সেন, এসডিজি’র মুখ্য সমন্বয়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, উৎসব আয়োজক কমিটির আহবায়ক আলহাজ মতিয়র রহমান খান, দীনেশ চন্দ্র সেনের প্রপৌত্রী দেবকনা সেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান শেলী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু দলীয় প্রতিক নৌকা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায় রাষ্ট্রপতিকে ক্রেস্ট প্রদান করেন। এছাড়াও পৌর মেয়র আলহাজ নজরুল ইসলাম খান পৌরসভার পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে নগরীর চাবি উপহার দেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিভিন্ন দেশের লোকসংস্কৃতি শিল্পীবৃন্দ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন