পরনে বোরখা। মুখে নেকাব। শুধু চোখ দুটি দেখা যাচ্ছে। ম্যাকাপকরা ধবধবে সাদা। দেখতে ভদ্র-মার্জিত পর্দানশীল কোনো নারী। পরক্ষণে বুঝা গেল আসল ঘটনা! বোরখা তাদের পর্দা নয়, আড়ালে থাকার কৌশল মাত্র। চলাফেরা এলোমেলো। দিক-বেদিক ছুটাছুটি করছে। লক্ষ তার স্থির। কোনো পর্যটকের চোখে চোখ পড়লেই ইশারায় বুঝিয়ে দেয়। টাকার বিনিময়ে সময় কাটাতে তারা প্রস্তুত। নিত্যদিনের এমনই চিত্র চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকতে। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী মহলের মদদে চলছে এই দেহ ব্যবসা। এ কারণে এলাকার সামাজিক পরিবেশ কুলষিত হচ্ছে দিনদিন। এলাকাবাসীর অভিযোগ সত্তে ও পুলিশ প্রশাসন নিরব ভূমিকায় রয়েছে।
পারকি সৈকতে অর্ধশতাধিক খাবার দোকান গড়ে উঠেছে। প্রতিটি দোকানের ভেতরে ছোট-ছোট কক্ষ রাখা হয়েছে। একেকটি কক্ষ যেন মিনি পতিতালয়। সেখানে প্রকাশ্যে চলছে দেহ ব্যবসা। পাশাপাশি মাদকের ভয়াবহতায় এলাকার যুব সমাজ নষ্ট হচ্ছে। বিপদগামী আর নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এসবে জড়িতড়া কোনো আইন বা সামাজিক দায়বদ্ধতার তোয়াক্কা করে না। আর এ অপকর্মে তাদের মদদ দিচ্ছে সমাজের কিছু প্রভাবশালী মহল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সৈকত এলাকার দোকানদার মো. আলী খান, মো.ইব্রাহিম, আবদুল মন্নান, মো.ইদ্রিচ, মো. নুর, মো.ইউনুস, কামালসহ প্রায় দোকানি এই অপকর্মের সাথে জড়িত। তাদের অনেকে সরাসরি আবার কেউ কেউ কর্মচারী দিয়ে এ ব্যবসা চালায়। বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। অনেক সময় টাকা দিতে অপারগ হলে পর্যটকদের নামিদামি মোবাইলও কেড়ে নেয়া হয়। শুধু তাই নয়, সৈকতে বেড়াতে আসা অনেক প্রেমিক যুগল তাদের হাতে হেনস্তাও হয়েছে। এমন অনেক ঘটনা থানা পর্যন্ত গড়িয়েছে। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এমএ কাইয়ুম শাহ্ একাধিকবার অভিযান চালালেও তা বন্ধ হয়নি। তার কারণ প্রতিটি দোকান থেকে আটশ টাকা চাঁদা নেয়া হয়। এসব টাকায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ব্যবসায়ী নেতারা। এছাড়া সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককেও উৎকোচ দিতে হয় বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকান কর্মচারী বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে পতিতারা এখানে আসে। তারা খদ্দের নিয়ে আসে তারপর কাজ সেরে চলে যায়। যারা মেয়ে নিয়ে আসে তাদের ঘর ভাড়া ঘন্টায় পাঁচশ টাকা। আর মেয়েসহ ঠিক করে দিলে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পারকি সৈকত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো.ইলিয়াছ বলেন, সৈকতের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী টাকার লোভে এসব করছে। আমরা এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার। পুলিশও প্রায়সময় অভিযান চালায়। তারপরও এসব বন্ধ হচ্ছে না। এতে আপনারাও জড়িত রয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি তা অস্বীকার করেন।
রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জেলা সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জানে আলম বলেন, সৈকতে গড়ে উঠা বেশিরভাগ দোকান অবৈধ। তারা সেখানে ব্যবসার আড়ালে পতিতাবৃত্তি শুরু করেছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। জানতে চাইলে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর মাহমুদ জানান, থানায় নতুন যোগ দিয়েছি তাই বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গৌতম বাড়ৈ বলেন, অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে সেখানে শিগগির অভিযান চালানো হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন