শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গায়েবি মামলা নিয়ে হাইকোর্টের দ্বিধাবিভক্ত আদেশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

সারা দেশে বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা গায়েবী চার হাজার মামলা এবং তিন লাখেরও বেশি মানুষকে আসামি করার বৈধতা নিয়ে রিটের ওপর দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত এ আদেশ দেন। বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি আদেশসহ রুল জারি করেন। একইসঙ্গে দায়ের হওয়া মামলাগুলো তদন্ত করে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দাখিলে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন। তবে বেঞ্চের অপর বিচারপতির দ্বিমত পোষণ করে রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন। ফলে নিয়ম অনুসারে মামলাটি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। প্রধান বিচারপতি মামলাটির শুনানির জন্য নতুন একটি বেঞ্চ গঠন করে দেবেন। পরে রিটকারীর আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছেন, যেহেতু প্রিজাইডিং জাজ ( নেতৃত্বদানকারী বিচারপতি) রুল দিয়েছেন, তাই সুপ্রিম কোর্ট রুলস অনুযায়ী তৃতীয় বিচারপতি রিট আবেদনটি নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত সিনিয়র বিচারপতির আদেশটি কার্যকর থাকবে এবং আদেশ অনুযায়ী পুলিশও তা প্রতিপালন করবে।
গত সোমবার মামলটি শুনানি শেষ হয়। শুনানিতে কয়েকটি মামলার এজাহার পর্যবেক্ষণ করে হাইকোর্ট বলেন, এ ধরনের মামলায় পুলিশের ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। শুনানি শেষে মঙ্গলবার এ বিষয়ে আদেশের জন্য রাখেন। গতকাল ফের শুনানির জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে দাঁড়ান।। তিনি দীর্ঘ দেড় ১ ঘন্টা শুনানি করেন। এরপর রিটকারীর আইনজীবী শুনানি করেন। এরপর আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন খোকন। তাদেরকে সহযোগিতা করেন মো. মাসুদ রানা, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিষয়টি হলো ফৌজদারী। এই ফৌজদারীর ব্যপারে যে বিধি-বিধান আছে, সে অনুযায়ী মামলায় প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সুতরাং এই মামলাগুলোর ব্যপারে রিট আবেদন চলবে না। এই কথা বলে আমি উচ্চ আদালতের নজিরউ উপস্থাপন করেছি। তিনি বলেন, পত্র পত্রিকায় এসেছে মৃত ব্যক্তির নামে মামলা হয়েছে। আমার বক্তব্য হলো জিবীত না মৃত তা তদন্ত করবে আইন শৃংখলা বাহিনী। পরে খন্দকার মাহবুব হোসেন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
পরে সিনিয়র বিচারপতি এ বিষয়ে অন্তর্বতীকালীন আদেশসহ রুল জারি করেন। মামলা করা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভুত ঘোষণা করা হবে না এবং এ ধরনের কল্পিত মামলা দায়ের সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। একইসঙ্গে ঢাকা মহনগর এলাকায় আবেদনকারীসহ ও অন্যদের বিরুদ্ধে হওয়া কথিত মামলাগুলো তদারকি করতে ও অনুসন্ধানে পদক্ষেপ নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেয়া হয়। এ বিষয়ে আদেশ পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে হলফনামা আকারে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।এছাড়্ওা স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার, রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনারসহ ঢাকা মেট্রাপলিটন এলাকার বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়ে।
এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে রিট আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন বেঞ্চের অপর বিচারপতি। আদেশে বিচারপতি বলেন, রিট আবেদনকারী নিজেই ফৌজদারী এসব মামলার আসামি। সুতারাং ফৌজদারি মামলার আসামী জনস্বার্থে বা সংক্ষুব্ধ হয়ে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিট আবেদন করার এখতিয়ার নেই। এছাড়া এ বিষয়ে আপিল বিভাগেরও সিদ্ধান্ত রয়েছে। আর সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত মানতে হাইকোর্ট বাধ্য। তাই প্রাথমিক শুনানির পর রিট আবেদনটি সরাসরি প্রত্যাখান করা হলো।
পরে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করলেন। তিনি শুনানিতে আদালতকে বললেন, এসব ফৌজদারি মামলা রিটের আওতায় আসবে না, এগুলো কোয়াশিংয়ে যাবে। জবাবে আমি আদালতকে বললাম, সারা দেশের আট লাখ লোক এ মামলায় আসামি। তাই একটি রিট করে আমরা এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কি না, তা জানতে চাই। পরে আদালত দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দিলেন। ফলে মামলাটি এখন প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। এরপর তিনি মামলাটি শুনানির জন্য অন্য একটি বেঞ্চ গঠন করে দেবেন।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় চার হাজার মামলা হয়। গত ২৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ মিয়ার পক্ষে এই রিট দায়ের করা হয়। রিটে গত ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনপির আইনজীবীসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা চার হাজার মামলা এবং তিন লাখেরও বেশি লোককে আসামি করার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন