সরকার ও বিরোধীদলের জাতীয় সংলাপের প্রেক্ষিতে বিএনপি তালিকা দাখিল করা সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না গায়েবী মামলার আসামি গ্রেপ্তার। যতি পড়ছে না নতুন গায়েবী মামলা দায়েরেও। একদিকে সরকার প্রধান বিষয়টি দেখবেন বলে বিএনপির হাত থেকে গায়েবী মামলার তালিকা নিচ্ছেন, অপরদিকে পুলিশ গায়েবী মামলার তালিকা ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে আসামি গ্রেফতার করছে।
গত বুধবার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বর্ষিয়ান নেতা তোফাজ্জল হোসেন মাস্টারকে বিনা মামলা বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে গায়েবী মামলা দায়েরসহ গত চার দিনে পুলিশ বিএনপির কমবেশি ৩০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। তোফাজ্জল হোসেন মাস্টারের সাথে গ্রেফতার হয়েছে শিবপুর থানা ছাত্রদলের সাধারণ স¤পাদক আপেল মাহমুদ সুমন, রায়পুরা থানা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক রুবেল প্রধান। এর আগে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে নরসিংদী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজিমুল আহসান চঞ্চল কে। গত বুধবার সন্ধ্যায় চরাঞ্চলের নবীপুর এর নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপি নেতা বয়োজ্যেষ্ঠ ইউপি মেম্বার নজরুল ইসলাম খান ওরফে আদু মেম্বারকে। সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন গ্রেফতার হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের আত্মীয় স্বজন।
নরসিংদী শহর বিএনপির সভাপতি গোলাম কবির কামাল জানিয়েছেন মক্কায় পবিত্র হজ্জ পালনরত অবস্থায় পুলিশ তাকে একটি গায়েবী মামলায় আসামি করেছে। তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েও বাড়িতে থাকতে পারছেন না। মারাত্মক হার্টের রোগী হয়েও তাকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ জানিয়েছেন, সাত মাস গুম থেকে ঘটনাক্রমে প্রাণে বেঁচে ফিরলেও নিজ বাড়িতে বিধবা মায়ের কাছে থাকতে পারছেন না তিনি। তার বিরুদ্ধে চারটি গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েও জামিনের সুযোগ ভোগ করতে পারছেন না। রায়পুরা থানা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল রহমান খোকন জানিয়েছেন, রায়পুরা থানা বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৭টি গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে কম বেশী ৩০০ নেতা কর্মীকে। তাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ বাড়ি বাড়ি তল্লাশী চালাচ্ছে। শিবপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক জানিয়েছেন, শিবপুর থানা বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২টি গায়েবী মামলায় কমবেশী ২৫০ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। আগাম জামিন নেয়া হয়েছে ১৮ জনের। কিন্তু কেউ বাড়ী থাকতে পারছেন না।
বেলাব থানা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবীব বিপ্লব জানিয়েছেন, বেলাব ও মনোহরদীতে ৪টি গায়েবী মামলায়, আসামি ৪০০ নেতাকর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে আসামি মনোহরদী বেলাব ও সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল এবং বেলাব উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবীব বিপ্লব। মামলা দায়েরের পর সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবিব বিপ্লবসহ ২০-২৫ জন নেতাকর্মী উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েও এলাকায় যেতে সাহস করছে না। প্রায় প্রতিদিনই বেলাবো থানা পুলিশ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের গ্রেফতারের জন্য তল্লাশি চালাচ্ছে। জেলা যুবদল সভাপতি মহসিন হোসাইন বিদ্যুৎ জানিয়েছেন যুবদল ও ছাত্রদলের এমন নেতাকর্মী কম যাদের বিরুদ্ধে চার পাঁচটি করে গায়েবী মামলা নেই। যুবদল সভাপতি বিদ্যুতের বিরুদ্ধে কমবেশি ৭ মামলা রয়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপি›র যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন জানিয়েছেন, নরসিংদী জেলায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী গায়েবী মামলায় আসামি হিসেবে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। নরসিংদী জেলার ৬ উপজেলায় কম বেশি বিএনপির ৬ হাজার নেতাকর্মী পলাতক রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন