বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

অবৈধভাবে ইলিশ শিকার বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:১০ এএম, ১৪ অক্টোবর, ২০১৮

প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা পুরোপুরি নিষিদ্ধ হলেও এ নিষেধাজ্ঞা অনেক জেলে মানছে না। মুন্সিগঞ্জ, পটুয়াখালিসহ পদ্মা-মেঘনার বিভিন্ন এলাকা নদনদীতে এক শ্রেণীর জেলে ইলিশ শিকার ও বিক্রি করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও অক্টোবর জুড়ে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে ৮ সপ্তাহ এবং অক্টোবর মাসে ৩ সপ্তাহ ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। মার্চ-এপ্রিল ইলিশ বড় হওয়ার সময়। অন্যদিকে অক্টোবর ইলিশের ডিম ছাড়ার সময়। এ সময় ইলিশ সমুদ্র থেকে নদীতে এসে ডিম ছাড়ে। এজন্য অক্টোবরে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময় ইলিশ শিকার করলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে এবার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। একশ্রেণীর জেলে অবাধে ইলিশ শিকার করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে তারা অনেকটা নির্বাধে ইলিশ শিকার করছে। পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ, পটুয়াখালির বিভিন্ন এলাকায় ধুমছে ইলিশ শিকার চলছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রাম ও বাজারে অবাধে ইলিশ বিক্রিও চলছে। ইলিশ শিকার বন্ধে ঢিলেঢালা অভিযানের সুযোগ নিয়ে জেলেরা ইলিশ শিকার করে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে পদ্মা নদীতে মাত্র একদিন অভিযান চালানো হয়েছে বলে পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে এ বছর ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।
মার্চ-এপ্রিল এবং অক্টোবর মাসে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করার কারণে গত কয়েক বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তা পূরণ হয়েছে। গত বছর দেশে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। এতে সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা এই রূপালি মাছের মূল্য তাদের কিছুটা সাধ্যের মধ্যে আসে। ইলিশের স্বাধ ভোগ করতে পারে। এবারও বিশেষজ্ঞরা একই পরিমাণ ইলিশ উৎপাদনের আশা করছেন। এ হিসেবে প্রায় ২০০ কোটি ইলিশ বাজারে আসতে পারে। তবে একশ্রেণীর অসাধু জেলে যেভাবে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইলিশ শিকার করছে, তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ বছর ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় এ পরিবহন নিষিদ্ধ। এ সময়ে ইলিশের প্রায় ৪২ হাজার কোটি ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইলিশ গবেষকরা জানিয়েছেন। এ অবস্থায় মা ইলিশের ডিম ছাড়ার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। বিশেষ করে ইলিশ ধরার ওপর নিষিদ্ধ পুরোপুরি কার্যকর করা দরকার। চাঁদপুর মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, জেলার মতলব উত্তর ও দক্ষিণ, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলায় ৫১ হাজার ১৯০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এই জেলেরা যাতে ২২ দিন ইলিশ শিকার না করে, এজন্য মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। তবে পদ্মা-মেঘনা অববাহিকার অন্য জেলাগুলোতে ইলিশ শিকার চলছে। একটি দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জে কয়েক দিন আগে এক কেজি ওজনের একটি ইলিশের দাম ছিল এক হাজার থেকে বারশ’ টাকা। এখন ১০০ টাকায় এক কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এসব এলাকায় এখন অবাধে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ বিক্রির কৌশল হিসেবে মোবাইলে দালালের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেছে, মুন্সিগঞ্জে ৬টি কারেন্ট জালের কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রশাসন অভিযান চালায় না। ফলে অসাধু জেলেরা কারেন্ট জাল নিয়ে ইলিশ শিকার করছে। এজন্য স্থানীয়রা প্রশাসনের ঢিলেঢালা অভিযানকে দোষারোপ করছে। তারা বলেছে, দিনরাত মিলে চারবার নদীতে জাল ফেলার সময় হলেও কেবল বিকেলের দিকে একবার অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সুযোগে অসাধু জেলেরা ইলিশ শিকার করে চলেছে।
অসাধু জেলেদের ইলিশ শিকারের কারণে প্রকৃত জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা না পারছে নদীতে জাল ফেলতে, না পারছে জীবিকা নির্বাহ করতে। সাধারণত ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ মৌসুমের দিনগুলোতে জেলেদের আর্থিক সহায়তা দেয়াসহ অন্যান্য সুযোগ দেয়া হয়, যাতে এ সময়ে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। এবার অনেক জায়গায় এ সুবিধা না দেয়ায় জেলেদের দুর্দিন পার করতে হচ্ছে। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে সমস্যার মধ্যে দিন পার করছে। অথচ অসাধু জেলেরা অনেকটা নির্বাধে ইলিশ শিকার করে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রকৃত জেলেদের সহায়তা যেমন প্রয়োজন, তেমনি অবিলম্বে অসাধু জেলেদের অবৈধভাবে ইলিশ শিকার বন্ধ করা জরুরি। এভাবে অবৈধ ইলিশ শিকার চলতে থাকলে এবারের উৎপাদনে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানিতে ভাটা পড়বে। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অবৈধভাবে ইলিশ শিকারের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করবে। অসাধু জেলেদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন