শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের অনেক গ্রামের বিত্তশালীরাই এখন সৌরবিদ্যুতে আলোকিত। ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিত্তশালীদের এক সময় অন্ধকারে রাত কাটলেও এখন তারা আলোর মুখ দেখতে পেরে বেজায় খুশি। উপজেলার শালচুড়া গ্রামের মো. সরোয়ারদী দুদু মন্ডল বাড়িতে সৌরবিদ্যুত ব্যবহার করেন। তিনি জানান, আমরা সৌরবিদ্যুৎ গ্রহকরা লোডশেডিং মুক্ত। পিডিবি অথবা পল্লীবিদ্যুৎ গাহকরা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে চরম দুর্ভোগে থাকেন। আমাদের কোনো লোডশেডিং নেই। টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ নিয়ে যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীনই থাকতে হয়, তবে সেই বিদ্যুতের চেয়ে বরং সৌরবিদ্যুতই ভালো না? কত সুন্দর সূর্যের আলোতে চার্জ করা বিদ্যুতে রাত পার করছি আমরা। কারো কাছে ধর্ণা অথবা কোনো পেরেশানিও নেই। তাই খুশি আমরা। তিনি আরো বলেন, আমরা গারো পাহাড়ের মানুষ। সবসময়ই অবহেলার শিকার।
আমদের দাম নির্বাচনের সময় যতই হোক না কেন, নির্বাচন শেষেই আমাদের অবস্থা যেই আর সেই। সুতরাং পিডিবি অথবা পল্লী বিদ্যুতের ব্যবস্থা হতে হতে মারাই যাবো। তাই আশা ছেড়ে দিয়ে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থাই করে কোনো রকমে চলছি। যেখানে আগে লণ্ঠন আর কুপিবাতি অথবা হারিক্যান দিয়ে অন্ধকার দূর হতো, ছেলেমেয়েরা আলোর অভাবে পড়ালেখা করতে পারত না। সেখানে অন্তত আলোর ব্যবস্থা তো করতে পারছি। কোনো ঝক্কি-ঝামেলা নেই, কারো কাছে ধর্ণা দিতে হলো না। সেটাই তো ভালো, তাই না? তিনি আক্ষেপ করেই কথাগুলো বললেন বলেও জানালেন একপর্যায়ে। এদিকে বিদ্যুৎবিহীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট-বাজারগুলোও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থার কল্যাণে এখন আলোকিত। চলছে টেলিভিশন দেখা। গারো পাহাড়ের বেশির ভাগ মানুষ হতদরিদ্র। তাই চরম অর্থ সঙ্কটের কারণে সৌরবিদ্যুৎ ও নিতে পারছেন না। তাই বেশির ভাগ এলাকার মানুষ এখনো সেই আদিম যুগের মতো সন্ধ্যার আগেই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আর যে সব এলাকায় ভারতীয় বন্যহাতি আক্রমণ করে তারা তো এটাকে নিয়তির লিখন মনে করে নির্ঘুম রাত কাটান!
ডেফলাই গ্রামের অটোরিকশা মালিক ও চালক মো. আবুল কাশেম জানান, আমরা গরিব মানুষ না পারছি সৌরবিদ্যুৎ নিতে, না পরছি পিডিবি অথবা পল্লী বিদ্যুৎ, দুঃখের কপাল নিয়ে জন্মেছি, কী আর করা? সৌরবিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত বেশ ক’জনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বিভিন্ন ক্ষমতা সম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ কিস্তিতে সরবরাহ করছে ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এজিও। চড়া সুদ নিলেও ভালো। আস্তে আস্তে টাকা পরিশোধ করা যায়। অন্তত পাঁচ বছর তো অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। তার পর ব্যাটারি পরিবর্তন করলেই আবার চলে আরো পাঁচ বছর। মন্দ কি?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন