শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

জাল-জেলেহীন মেঘনায় নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়ছে ইলিশ

লক্ষীপুর থেকে মো. কাউছার : | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

লক্ষীপুরের মেঘনা নদীর জেলেরা জাল বুনে অলস সময় পার করছেন। নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়ছে মা ইলিশ। জানা যায়, আশ্বিন মাসের বড় পূর্ণিমার আগের চার দিন, পূর্ণিমার দিন ও পরের ১৭ দিনসহ মোট ২২ দিন ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ এসে লক্ষীপুরের মেঘনায় ডিম ছাড়ে। একটি বড় ইলিশ ২৩ লাখ পর্যন্ত ডিম ছাড়তে পারে। প্রজনন মৌসুমে বেশি ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যে নদীতে ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ৭ অক্টোবর থেকে নদীতে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলেরা নদীতে মাছ শিকারে যাচ্ছেন না। মেঘনার পানিতে এখন জাল-জেলে নেই। ফলে জাল-জেলেহীন লক্ষীপুরের মেঘনায় নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়ছে মা ইলিশ।

মেঘনা পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, জেলে ও নৌকা শূন্য নদী। যতদূর চোখ যায় কেবল পানি আর পানি। এ সময় একটিও মাছ ধরার নৌকা দেখা যায়নি। মেঘনায় ইলিশ শিকার নিষেধাজ্ঞা। এর ফলে জেলেরা শিকারে যাচ্ছেন না। তবুও তাদের বিরাম নেই। ইলিশ আহরণের নয়, তারা এখন জাল বুনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাই নদীর জেলেরা এখন ডাঙায়।

লক্ষীপুরের মেঘনা নদীর পাড়ে প্রায় ৬০ হাজার জেলের বসবাস। জেলার রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও সদর উপজেলার জেলেরা মাছ আহরণ করে জীবিকা চালায়। এখানকার জেলেদের বিকল্প কোনো কাজ নেই। মাছ শিকার একমাত্র পেশা। যখন নদীতে মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা চলে তখন তারা জালের রশি বদলানো, ছেঁড়া জাল মেরামত ও নৌকা সংস্কার করেন।
গতকাল রোববার সকালে সদর উপজেলার মজুচৌধুরী হাট এলাকার মেঘনাপাড়ে গিয়ে দেখা গেছে জেলেরা দলবেঁধে জাল বুনছেন, চা-সিগারেটের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন। কেউ কেউ নৌকায় ঘুমিয়ে, কেউ কেউ নৌকার ইঞ্জিন মেরামত করেন। ঘাটে নেই মাছ, জেলে, ব্যবসায়ী ও আড়াতদাররা। নেই উপচেপড়া ভিড়। নৌকাগুলো নদী সংলগ্ন খালে নোঙর করা।
কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাছ শিকারে যাবেন না তারা। ২২ দিন তাদের ছুটি। নিষেধাজ্ঞা শেষে ফের মাছ শিকারে যাবেন তারা।

মা ইলিশ রক্ষা সফল করতে প্রশাসন বিভিন্ন প্রদক্ষেপ নিয়েছে। তৎপর রয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা, ভ্রাম্যমাণ আদালত, মৎস্য দপ্তর, কোস্টগার্ড ও পুলিশ। গত কয়েকদিন থেকে প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ জেলে, ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সচেতন করতে মেঘনাপাড়ে কয়েকটি সভা করেছে।

এদিকে, অভিযানের প্রথম দিন রামগতির মেঘনায় ইলিশ শিকারের সময় ১৪ জন জেলে, নবম দিনে ৮ জেলেকে আটক করে কারাদন্ড দেওয়া হয় ও এগারতম দিনে ৩ জেলেকে আটক করে ১৫ হাজার টাকা জরিমান করা হয়। অন্যদিকে, প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ মা ইলিশ রক্ষায় তৎপর। যে কারণে জেলেরা ভয় ও আতঙ্কে নদীতে মাছ শিকারে যাচ্ছেন না।

লক্ষীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম মহিব উল্লাহ বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ কাজ করছে। সচেতনতামূলক সভা করা হচ্ছে। মাইকিং, পোস্টার, লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। মা ইলিশ রক্ষায় গত কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় সফলতা এসেছে। জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। তারা এখন ডিমওয়ালা ইলিশ নিধন থেকে বিরত থাকছেন। যে কারণে নির্বিঘ্নে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পারছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন