দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে দুর্বিষহ যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে গত ১ নভেম্বর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত টানা চার দিনের নজিরবিহীন যানজটের পর দুই দিনের জন্য স্বত্বি ফিরেছিল। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে আবারো মহাসড়কে শুরু হয়েছে যাত্রীদের সীমাহীন কষ্ট।
গত বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া যানজট গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। যানজট দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ থেকে মেঘনা-গোমতী সেতু পেরিয়ে মুন্সীগঞ্জের মেঘনা সেতুর পশ্চিম পার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এই সড়কে চলাচলরত হাজারো পরিবহনের যাত্রীরা। বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া যানজট গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যানজট অব্যাহত রয়েছে।
এশিয়া লাইন পরিবহনের সুপারভাইজার মো. সালাউদ্দিন দৈনিক ইনকিলবাকে বলেন, চার লেনের গাড়ি মেঘনা-গোমতী সেতুর দুই লেনে পার হওয়ার সময়ই দুই প্রান্তেই যানজট হচ্ছে। সড়কের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেতু নির্মাণ হয়নি। এছাড়া মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণে সপ্তাহে এক-দু’দিন দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার গাড়ির লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, চার লেন সড়কের সুফল পাচ্ছেন না ব্যবহারকারীরা। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যাতায়াতের ওই মহাসড়কটিতে যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে সে হিসাবে ছয় থেকে আট লেনের মহাসড়ক নির্মাণ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের গাড়ির অতিরিক্ত চাপ রয়েছে। যার ফলে গাড়িগুলো মহাসড়কের চার লেন থেকে দুই লেনের মেঘনা, মেঘনা-গোমতী দুটি সেতুতে ধীরগতিতে প্রবেশ করতে সময় লাগছে, এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পথে খাবার ও শৌচাগার সঙ্কটে পড়ছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন। এ ছাড়া দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতুতে ওজন মাপার যন্ত্রে মালবাহী গাড়িগুলো পরীক্ষা করতেও সময় লাগছে। যানজট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন যাত্রী ও পরিবহন চালকরা। কুমিল্লা থেকে ঢাকাগামী বাসযাত্রী শামীম রায়হান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ৫ ঘণ্টার মতো মেঘনা সেতুর পশ্চিম পারে আটকা পড়েছিলাম। চট্টগ্রামগামী ট্রাকচালক ইমরান হোসেন বলেন, আগে দুই দিনেই মালামাল লোড-আনলোড করা যেত। এখন চার দিন লেগে যাচ্ছে। দুই সেতুর কাছে এলে ৩-৪ ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে।
পণ্যবাহী যানচালক ইব্রাহিম বলেন, সেতুর কারণে মূলত যানজট হচ্ছে। আট ও চার লেন দিয়ে আসা দ্রুত গতির যানবাহনগুলো সেতুর মুখে এসে প্রায় থেমে যাচ্ছে। চার বা দুই লেনের সেতু দিয়ে আসা যানবাহন একসঙ্গে সেতু পার হতে পারে না। অপেক্ষা করতে হয়। এতে ক্রমেই অপেক্ষায় থাকা গাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। এছাড়া সেতুর বাইরে মহাসড়কের ওপর ইউটার্নগুলো বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করছে। হঠাৎ করেই ইউটার্ন নেয়ায় পেছনের গাড়ির গতি হ্রাস পাচ্ছে। হিমাচল পরিবহনের যাত্রী শামসুনাহার বলেন, কতক্ষণ গাড়িতে বসে থাকা যায়? ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই স্থানে আটকা পড়ে আছি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি টোল প্লাজা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যানজটের এক ভয়াবহ দৃশ্য। চট্টগ্রামগামী যাত্রী মো. মোনায়েম জানান, সিমরাইল মোড় থেকে মেঘনা সেতু এলাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লেগেছে। তার মতো একই অবস্থার শিকার হয়েছেন অনেক পরিবহন যাত্রী। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ দৈনিক ইনকিলবাকে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেনের গাড়িগুলো দুই লেনের মেঘনা, মেঘনা-গোমতী দুটি সেতুতে ধীরগতিতে প্রবেশ করতে সময় লেগে যায়। এ ছাড়া শুক্রবার আসলে মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন