শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতিবেদন দাখিলে অনীহা

হাসান সোহেল : | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

অসুস্থ হলেই আমরা ওষুধ খাই। এই ওষুধ চিকিৎসকরা দিয়ে থাকেন। আবার অনেকে নিজে থেকেই ওষুধ গ্রহন করেন। কিন্তু এসব ওষুধ সবার শরীরে সব সময় মানান সই নাও হতে পারে। তখন দেখা দিতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কখনো অপ্রত্যাশিত, কখনো মারাত্মকভাবে, আবার কখনো ওষুধের গুণগত মানের কারণে কিংবা ভুল ওষুধ গ্রহণের কারণে শরীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। এতে শরীরে অসংখ্য ফোসকা বা ঘা হতে পারে। এছাড়া শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সঠিক সময়ে কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসা গ্রহন না করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

আর এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার (এডিআর) প্রতিবেদন নিয়মিত জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দেশের ৯৫ শতাংশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এই নিয়ম মানছে না। তবে দেশের শীর্ষ কয়েকটি কোম্পানী ও বহুজাতিক কোম্পানীগুলো নিয়মিত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রতিবেদন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের জাতীয় মনিটর সেলে জমা দিচ্ছে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়ার প্রতিবেদন পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে উৎপাদনকারীদের। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ধরণের সংস্কৃতি এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। এ কারণে দেশের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শতকরা ৯৫ শতাংশের বেশি এডিআর প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে না। তবে যারা প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে তাদের অনেকেই বিদেশে ওষুধ রফতানি করছে। বিশেষ করে যে দুটি কোম্পানী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সনদ পেয়েছে, তাদের দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক দিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে এডিআর প্রতিবেদন অধিদফতরে জমা দিচ্ছে বলে কোম্পানীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধবিদ্যা বিভাগের সাবেক প্রফেসর আ ব ম ফারুক বলেন, দেশে এখনো সেভাবে এডিআর রিপোর্ট প্রদান করার বিষয়টি চালু হয়নি। কারণ দেশে হসপিটাল ফার্মেসী নেই। একই সঙ্গে যে কয়েকটি মডেল ফার্মেসী তৈরি হয়েছে সেখানেও গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নেই। আর গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট ছাড়া এডিআর রিপোর্ট করা সম্ভব নয়। তবে এজন্য জনগণকে সচেতন হতে হবে। প্রথমত চিকিৎসকদের সচেতন হতে হবে। এডিআর দেখা দিলে শরীরে রেশ ওঠেতে পারে। মানুষের অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। শরীরের কার্যকারিতা হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। গত কয়েক বছর আগে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রাজধানীর মহাখালীতে ফরিদা আক্তার নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল। এজন্য সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে জানান আ ব ম ফারুক।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) রুহুল আমিন বলেন, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের এডিআর সেলে রিপোর্ট করার নিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য দেশের কোম্পানীগুলোকে আলাদা করে চিঠিও দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ফার্মাকোভিজিলেন্স গাইডলাইনও তৈরি করা হয়েছে। দেশের সংস্কৃতি সেভাবে গড়ে না ওঠায় অনেকেই রিপোর্ট সঠিক সময়ে জমা দিচ্ছে না। অনেকে আবার দিচ্ছেই না। তবে এডিআর সেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার রিপোর্ট জমার পরিমাণ নিয়মিতই বাড়ছে। কারখানা পরিদর্শনের সময়ও এসব বিষয়ে কোম্পানীর সংশ্লিষ্টদের সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি ফার্মাকোভিজিলেন্স ইউনিট গঠনের তাগিদ দেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রতিবেদন সংক্রান্ত সেল গঠনের কাজ ১৯৯৯ সাল থেকে ওষুধ প্রশাসন চালু করে। কিন্তু নানা সংকট ও অদূরদর্শিতা বা জটিলতার কারণে তা সঠিকভাবে তদারকি করা সম্ভব হয়নি। তবে ২০১৩ সালে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জাতীয় মনিটরিং সেন্টার গঠন করা হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আন্তর্জাতিক ড্রাগ মনিটরিং সেলের ১২০তম সদস্য নির্বাচিত হয়। যদিও ডব্লিউএচও’র অধীনে ১৪৭টি দেশ রয়েছে। যারা আন্তর্জাতিক এডিআর সেলের সদস্য। সেলের নির্দেশনা হচ্ছে, উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকরা নিজস্ব চ্যানেলে এডিআর প্রতিবেদন মনিটরিং সেলে জমা দেবে।

বিশ্বব্যাপী এডিআর রিপোর্টে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে সিঙ্গাপুর। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, অ্যান্ড্রোরা, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড ও নেদারল্যান্ড। সে হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে শেষের দিকে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ৩০টি সরকারি-বেসরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং চট্রগ্রাম ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফার্মাকোভিজিলেন্স কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা শুরু হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে এডিআর রিপোর্ট সেলে জমা পড়ছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীরা তাদের সমস্যার বিষয়টি এড়িয়ে যান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন