বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সোনালি স্বপ্নের হাতছানি কাপ্তাই হ্রদ

স্টাফ রিপোর্টার রাঙামাটি থেকে : | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

দেশের মিঠা পানির মাছের অন্যতম উৎস কাপ্তাই হ্রদের একটি চিতল মাছ বিক্রি হয়েছে ৩২ হাজার টাকায়। তেমনিভাবে ট ৩০ কেজির কাতল মাছ বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার টাকায়। একের পর এক বিশাল আকৃতির মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ায় মৎস্যজীবীদের মাঝে হ্রদ ঘিরে যেমন নতুন স্বপ্ন তৈরি হচ্ছে তেমনি প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে স্থানীয় কৃষি অর্থনীতিতে।

পরিবেশগত ও ভৌগলিক প্রকৃতি নির্ভর পাহাড় আর পানিসম্পদে ভরপুর পার্বত্য রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে আশাতিত ভাবে বেড়েছে দেশীয় প্রজাতির বড় মাছের উৎপাদন। সারাদেশের মধ্যে অন্যতম অপূর্ব মনোরম পরিবেশে মৎস্য সম্পদের একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থান আলোকিত করে রেখেছে কাপ্তাই হ্রদ। প্রায় প্রতিদিনই হ্রদে ধরা পড়ছে বড় বড় রুই-কাতলা, চিতল থেকে শুরু হরে হরেক রকম কার্প জাতীয় দেশীয় প্রজাতির মাছ। অথচ মাত্র এক দশক আগেও কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে ব্যাপক দুঃচিন্তায় ছিলো সংশ্লিষ্ট্য কর্তৃপক্ষসহ হ্রদের উপর জীবিকা নির্ভর লাখো মানুষ।

শহরের বনরূপা বাজারের অন্যতম শীর্ষ মৎস্য ব্যবসায়ি সেন্টু সরকার জানিয়েছেন, কাপ্তাই হ্রদ থেকে জেলেদের মাধ্যমে আহরিত বড় বড় মাছগুলোর প্রায় অধিকাংশই কিনে বাজারের দোকানে খুচরা বিক্রয় করি। ১৬ কেজি ওজনের চিতল মাছ বিক্রয় করেছি ৩২ হাজার টাকায়। এর আগে ৩০ কেজি ওজনের কাতল মাছ বিক্রি করেছি ৪৮ হাজার টাকায়। ২০ ও ১৮ কেজি ওজনের দুটি কাতলা মাছ বিক্রি করেছি ৩৮ হাজার টাকায়। ১৮ কেজি ওজনের একটি বোয়াল বিক্রি করেছি ৩৬ হাজার টাকায়।

স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা কাপ্তাই হ্রদের মাছের স্বাদ অন্য অঞ্চলের মাছ থেকে ভিন্ন এবং সুস্বাধু হওয়ায় স্থানীয়দের পাশাপাশি রাঙামাটির চাকরিজীবী ও পর্যটকদের মাঝে কাপ্তাই হ্রদের মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকায় দাম একটু বেশি নিলেও স্বাদ গ্রহণে আপত্তি করেনা কেউই। চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটিতে আসা শরিফুল আলম নামে একজন গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহর ত্যাগের সময় পরিবারের জন্যে ১০ কেজি ওজনের একটি কাতল ও ৬ কেজি ওজনের একটি রুই কিনে নিয়ে যান।

রাঙামাটিস্থ বিএফডিসির ব্যবস্থাপক নৌ-বাহিনীর কমান্ডার মো. আসাদুজ্জামান জানান, বিগত বছরগুলোর ন্যায় আমরা গত বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে অবৈধ জাঁক অপসারণ, হ্রদের কচুরিপানা বিনষ্টকরা, মাছের অভয়াশ্রমগুলোকে মোটামুটি যতটুকু সম্ভব নিরাপদ রাখতে পারাসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করে গড়ে তুলতে সক্ষম হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঢাকা থেকে রাঙামাটির মৎস্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করা ব্যবসায়িরা ও স্থানীয় সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডাররা জানিয়েছেন, কাপ্তাই হ্রদ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিএফডিসির সংশ্লিষ্ট কিছু কিছু কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতার ফলে অন্যতম সম্পদ নির্ভর কাপ্তাই হ্রদ আবার পুরাতন যৌবন ফিরে পেতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধি পেলেও অজ্ঞাত ও অজানা কারণে বাড়ছে না মাছের পোনা অবমুক্তির পরিমাণ। বিএফডিসি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হ্রদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় জনবল ও ইকুইপমেন্ট বৃদ্ধির মাধ্যমে আরো জোরালো কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি মাছ ধরাকালীন নিষিদ্ধ সময়ে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা, হ্রদে জেলের সংখ্যা আর বৃদ্ধি না করা, ইঞ্জিনচালিত নৌযান বৃদ্ধিরোধ করাসহ মাছের অভয়াশ্রম ও প্রজনন কেন্দ্রসমূহকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করাসহ, বিএফডিসির নিজস্ব হ্যাচারিতে উৎপাদিত রেনুর মাধ্যমে নির্দিষ্ট আকারের পোনা কাপ্তাই হ্রদে অবমুক্ত করতে পারলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই হ্রদটিকে আমিষের ভান্ডারে পরিণত করা স্বল্পতম সময়েই সম্ভবপর হবে।

গবেষণার সর্বশেষ তথ্য মোতাবেক এ লেকে ২ প্রজাতির চিংড়ি, ১ প্রজাতির ডলফিন, ২ প্রজাতির কচ্ছপ ও ৭৮ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৮ প্রজাতির মাছ হচ্ছে দেশীয়, আর বাকি ১০টি বিদেশি। বর্তমানে ৪২টি প্রজাতির মাছ এ লেক থেকে বাণিজ্যিকভাবে আহরিত হচ্ছে। এদের মধ্যে কেচকি, চাপিলা, রুই-কাতলা, কালিবাউস, তেলাপিয়া, বাচা, পাবদা, কাজলি, আইড়, মলা, কাটা মইল্যা, বাটা, ফলি, গজার, শোল, বাইন, ছোট চিংড়ি ইত্যাদি অন্যতম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন