শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

বিনোদন প্রতিদিন

সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী দুর্গম অঞ্চল টেকেরঘাটে এবারের ইত্যাদি

বিনোদন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্য, প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন ও পর্যটন সমৃদ্ধ স্থানসমূহে গিয়ে ইত্যাদি ধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যের অপূর্ব লীলাভূমি সুনামগঞ্জ জেলার দুর্গম অঞ্চল সীমান্তঘেঁষা তাহেরপুর উপজেলার টেকেরঘাটে। সবুজ বনানী, পাহাড় আর অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে সাজানো মঞ্চে ধারণ করা হয় এবারের ইত্যাদি। সব সময় রাতের আলোকিত মঞ্চে ইত্যাদি ধারণ করা হলেও এই স্থানের নৈসর্গিক রূপ রাতের বেলায় দেখানো সম্ভব নয় বলে এবার দিনের আলোর পড়ন্ত আভায় ইত্যাদির ধারণ শুরু হয়। ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে হাওড় কন্যা সুনামগঞ্জে ছিল উৎসবের আমেজ। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফ‚র্ত সহযোগিতায় দুপুর ২টা থেকেই আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল। আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ আশেপাশের পাহাড়, গাছ ও লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে ইত্যাদির ধারণ উপভোগ করেন। কিছু কিছু স্থানের দৃশ্য দেখলে মনে হবে যেন মানুষের পাহাড় তৈরী করা হয়েছে। এত দুর্গম অঞ্চলে অনুষ্ঠান হওয়া সত্তে¡ও অনুষ্ঠানস্থলে, প্রায় লক্ষাধিক দর্শক সমাগম হয়েছিল। সিলেট, বিশ্বনাথ, বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ, বালাগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মটর সাইকেল এবং নৌকায় করেও হাজার হাজার দর্শক এসেছেন। বাংলাদেশের যখন যে স্থানে ইত্যাদি ধারণ করা হয় সেই স্থানটির বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করেই সেট নির্মাণ করা হয়। ফলে দর্শকরা যেমন ঐ স্থানটি সম্পর্কে জানতে পারেন, তেমনি নিত্য-নতুন লোকেশনের কারণে প্রতিবারই সেট নির্মাণেও আসে বৈচিত্র্য। টেলিভিশন অনুষ্ঠানকে স্টুডিওর চারদেয়ালের ভিতর থেকে বাইরে এনে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে অনুষ্ঠান ধারণের ইত্যাদির এই ধারণাটিকে এখন অনেকেই গ্রহণ করেছেন। ফলে টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণেও বৈচিত্র্য এসেছে। শিকড় সন্ধানী ইত্যাদিতে সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের খুঁজে এনে তাদের বিভিন্ন কর্মকাÐ তুলে ধরা হয়, যাতে তাদের কাজ দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হতে পারেন। এছাড়াও গত প্রায় তিন দশক ধরে ইত্যাদি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে দেশি-বিদেশি অচেনা-অজানা স্থানকে নিয়ে তথ্য ভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন করছে। এবারের পর্বে রয়েছে সুনামগঞ্জের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত-দর্শনীয় ও পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোর উপর তথ্য ভিত্তিক প্রতিবেদন। বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের এক অপরিহার্য নাম সুনামগঞ্জ। দেওয়ান হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত, দুর্বিন শাহ এবং শাহ আব্দুল করিমসহ আরো বহু লোক সাধকদের অমর সঙ্গীতে মুখরিত এই সুনামগঞ্জ। তাদের উপর রয়েছে একটি তথ্যভিত্তিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। ঢাকার আশুলিয়ার মাইনুল মাজেদিনের ঘড়ি সংগৃহের উপর রয়েছে একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। জার্মান প্রবাসী শৌখিন দূরপাল­ার দৌড়বিদ বাংলাদেশের নবাবগঞ্জের শিব শংকর পালের উপর রয়েছে আর একটি অনুপ্রেরণামূলক প্রতিবেদন। যিনি শুধুমাত্র ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের জন্য সরাসরি নিউইয়র্ক থেকে টেকেরঘাটে এসেছেন। ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে প্রচারিত ইত্যাদিতে দু’জন তরুণকে দেখানো হয়েছিল, যারা হতদরিদ্র, অসহায় শিশুদের চিকিৎসা খরচের জন্য বিভিন্ন দোকান বা মলের সামনে দাঁড়িয়ে স্বচ্ছ কাচের বাক্সে অর্থ সংগ্রহ করতো। এবারের পর্বে জানা যাবে এই তরুণরা এতদিন কি করেছে এবং এখন কি করছে? বিদেশি প্রতিবেদনে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার উপর একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন। এবারের ইত্যাদিতে মুল গান রয়েছে একটি। যেহেতু ইত্যাদি এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে ধারণ করা হয় এবং সেই অঞ্চলের শিল্পীদের দিয়েই গান করানো হয়, সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ইত্যাদিতে সুনামগঞ্জের মরমী সাধক দেওয়ান হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত, দুর্বিন শাহ ও শাহ্ আব্দুল করিমের লেখা চারটি গানের অংশ বিশেষের সমন্বয়ে একটি গান গেয়েছেন এই সিলেটেরই সন্তান শিল্পী শুভ্রদেব, সেলিম চৌধুরী ও সহশিল্পীবৃন্দ। এছাড়াও সুনামগঞ্জকে নিয়ে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথায়, হানিফ সংকেতের সুরে এবং মেহেদীর সঙ্গীতায়োজনে একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন টেকেরঘাটেরই স্থানীয় নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছেন মনিরুল ইসলাম মুকুল, কণ্ঠ দিয়েছেন প্রতিক হাসান ও আনিকা। দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান সুনামগঞ্জকে ঘিরে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে হাজার হাজার দর্শকের মাঝখান থেকে ৩ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকরা আঞ্চলিক ভাষায় একটি নাট্যাংশে অভিনয় করেন। নিয়মিত পর্বসহ এবারও রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষè নাট্যাংশ। চাপমুক্ত থাকার উপায়, নির্বাচনার্থী প্রার্থীর আসল রূপ, কথা নিয়ে কথা, দান প্রতিদান, পারিবারিক কলহে অন্যের প্রভাব, এগিয়ে থাকার অসুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। বরাবরের মত এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন যথারীতি রানা ও মামুন। গণমানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির আগামী পর্ব একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে-এ প্রচার হবে ৩০ নভেম্বর, রাত ৮ টার বাংলা সংবাদের পর। অনুষ্ঠানটি পুনঃপ্রচার করা হবে আগামী ২ ডিসেম্বর, রবিবার রাত ১০ টার ইংরেজি সংবাদের পর। ইত্যাদির রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মান করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কস্মেটিকস্ লিমিটেড।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন