বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দাম্ভিক, অহঙ্কারী না হওয়া

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

অহঙ্কার না করা, অহঙ্কারী না হওয়া রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনময় প্রমাণিত একটি কঠিন সুন্নত; যা সব উম্মতের পক্ষে আমল করা সহজ হয় না। প্রকৃতিগতভাবে মানুষের ভেতর অহঙ্কারের বীজ ঘুমিয়ে থাকে; যার ওপর পানি ঢেলে চারা থেকে অহঙ্কারের বটবৃক্ষে রূপান্তরিত করে তোলার কাজটি শয়তান করে থাকে।
আর মানুষ যখন শয়তানের তাঁবেদার হয়ে পড়ে, তখনই সে খুব সহজেই নানা কারণে নানা বিষয়ে অহঙ্কারী হয়ে ওঠে। অনেক সময় আমরা বুঝিও না যে, আমরা অহঙ্কারী হয়ে উঠছি। নিজেদের শক্তি, সম্পদ, সম্মান, ক্ষমতা বা সুবিধাজনক অবস্থান আমাদের গোপনে অহঙ্কারী করে তোলে। কখনো বা দম্ভে আমাদের হিতাহিত জ্ঞানটুকুও লোপ পেতে থাকে।
এই দম্ভ বা অহঙ্কার কেবল ধনী-গরিব হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটি খারাপ ও ধ্বংসাত্মক চরিত্র, যা যে কারও মনে বাসা বাঁধতে পারে। কেউ রাজা বাদশাহ হয়েও নিরহঙ্কার হতে পারে আবার কেউ ভিক্ষুক দরিদ্র হয়েও অহঙ্কারী বা দাম্ভিক হতে পারে। তবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে কোনো দিন কোনো কিছু নিয়ে দম্ভ, অহঙ্কার করেননি এবং তা অন্যের বেলায় পছন্দও করেননি।
হযরত সালামা ইবনে আকওয়া থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বাম হাত দিয়ে পানি খাচ্ছিল। নবীজি তাকে বললেন, ডান হাত দিয়ে খাও! সে বলল, ‘পারি না, সম্ভব না।’
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি আর পারবে না’ একমাত্র অহঙ্কারবশতই সে ‘পারে না’ বলেছে; বাস্তবে তার কোনো সমস্যা ছিল না। বর্ণনাকারী বলেছেন, ‘লোকটি তার ডান হাত আর কোনোদিন মুখের দিকে উঠাতে পারেনি। -সহীহ মুসলিম
নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। বর্ণিত হাদীস থেকে বোঝা গেল, অহঙ্কার ও দম্ভ কেবল ইজ্জত ও সম্পদের সাথেই সম্পর্কিত নয়, এটি আচরণ ও মানসিকতার বিকৃতি ছাড়া কিছুই নয়। সাময়িক আমিত্ববোধ বা খামখেয়ালিপনা থেকেও মানুষ মারাত্মক অহঙ্কারের পাপে কলুষিত হয়ে যেতে পারে এবং এর শাস্তিও ভোগ করতে পারে।
মনে রাখতে হবে, অহঙ্কার কেবল আল্লাহর অধিকার। তিনিই শুধু অহঙ্কার করার যোগ্যতা রাখেন। এর ব্যতিক্রম যখন কোনো সৃষ্টি দ্বারা সংঘটিত হয়; তখন আল্লাহ চরম অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ হন। সৃষ্টির শুরুতে আদম আ.কে সিজদা না করে ইবলিস আল্লাহর লানতপ্রাপ্ত ও বিতাড়িত হয়েছিল এই মিথ্যে অহঙ্কারের কারণেই।
অপর একটি হাদীসে এসেছে, হযরত হারিছা ইবনে ওহাব রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামবাসীদের ব্যাপারে অবগত করব, তারা কারা হবে? তারা হবে প্রত্যেক কঠোর স্বভাবী, দুশ্চরিত্র, অহঙ্কারী।’ -সহীহ বুখারী ও মুসলিম
এ হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্তব্য সুস্পষ্ট। অর্থাৎ জাহান্নামবাসী লোকদের মধ্যে উল্লিখিত স্বভাবচরিত্রের প্রভাব ও প্রাধান্য থাকবে বলে নবীজি আমাদেরকে পূর্বেই অবগত করে দিয়েছেন। আমরা এমনিতেও পর্যবেক্ষণ করলে বুঝতে পারি যে, জগতের মানুষের যাবতীয় পাপ এবং অবাধ্যতার পেছনে এই কঠোর স্বভাব, দুশ্চরিত্র ও অহঙ্কারই মূল কারণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Ameen Munshi ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২০ এএম says : 0
নিজেকে অপরের চেয়ে উত্তম বা বড় কিছু ভাবাই দাম্ভিকতা। আজ দুনিয়াজুড়ে সে প্রতিযোগিতাই বেশি প্রদর্শিত হচ্ছে। মানুষ নিজেরা এমন প্রতিযোগিতা করলেও আসলে আড়ালে আবার নিজেরাই দাম্ভিক বা অহঙ্কারীকে কেউ পছন্দ করতে চায় না। ইসলামেও অহঙ্কারীকে নিকৃষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
Total Reply(0)
Jahir Uddin Babar ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২১ এএম says : 0
আল্লাহর নির্দেশ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই ফেরেশতারা আদমের (আ.) কাছে অবনত হন। কিন্তু ইবলিস মাথা উঁচু করে থাকে। তার মনে অহঙ্কারের জন্ম নেয়। আল্লাহ বললেন, 'আমি যখন নির্দেশ দিলাম তখন অবনত হওয়া থেকে কিসে তোমাকে বিরত রাখল?' সে উত্তরে বলল, 'আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে'। সূরা আল আরাফ :১২ এই অহঙ্কারের জন্য আল্লাহ ইবলিসকে তার সানি্নধ্য থেকে সরিয়ে দিলেন। আল্লাহ বললেন, 'এখান থেকে নিচে নেমে যাও। এখানে থেকে অহঙ্কার দেখানোর কোনো অধিকার তোমার নেই। বের হয়ে যাও। তুমি হীনদের মধ্যেই শামিল।' সূরা আলারাফ :১৩
Total Reply(0)
রুবেল ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২২ এএম says : 0
বিলাসবহুল বাড়ি আর গাড়ি করে অনেকেই দাম্ভিকতা প্রকাশ করে। দামি গাড়িতে চড়লেই মানুষ থেকে ওপরের কোনো শ্রেণিতে ওঠা যায় না! কারণ মানুষই সৃষ্টির সেরা। মানুষের ওপরে মর্যাদাবান আর কেউ হতে পারে না। গরিব থাকা বা নিচু শ্রেণিতে থাকা মানুষ তার মর্যাদা থেকে অন্য কোনো গোত্রে নেমে যায় না! হয়তো ভালো অবস্থানে যাওয়া যায়। দম্ভে ফুলে-ফেঁপে ওঠা মানুষগুলো বস্তুত মৃত্যুর কথা বেমালুম ভুলে যায়। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
Total Reply(0)
গাজী রুহুল ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২৪ এএম says : 0
শুকরিয়া। অসাধারণ একটি লেখা। দাম্ভিক ও অহংকারীদের এ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
Total Reply(0)
Mohammad Mosharraf ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২৪ এএম says : 0
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত_ রাসূল (সা.) বলেন, 'আল্লাহতায়ালা বলেছেন, সম্মান হচ্ছে আমার কাপড়; আর অহঙ্কার হচ্ছে আমার চাদর। যে ব্যক্তি এটা নিয়ে আমার সঙ্গে টানাটানি করে আমি তাকে শাস্তি দেই।' [সহিহ মুসলিম (২৬২০)]।
Total Reply(0)
Mohammad Shah Alam ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:২৪ এএম says : 0
অহঙ্কার পরিহার করে একে অপরকে ভালোবাসার অপার মহিমায় গেঁথে নিয়ে পাশে থাকা প্রয়োজন।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন