বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদিগন্ত

কেন হারিয়ে যাচ্ছে স্বাতন্ত্র্যতা

প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এম মাফতুন আহম্মেদ
হে পথিক, তুমি পথ হারিয়েছ? সত্যিই কী আমরা পথ হারিয়েছি? কোন মনজিল মকছুদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা ইতিহাস থেকে যেন বিমুখ হয়ে পড়ছি। প্রকৃত ইতিহাস থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। প্রকৃত ইতিহাস কেন আমাদের জানতে ইচ্ছে হয় না? নানা অবক্ষয় আমাদের গ্রাস করে আছে। ইতিহাস নিয়ে নেই কোন গবেষণা। শুধু আছে পরস্পরকে নিয়ে নোংরা সমালোচনা। বর্তমানকে নিয়ে নেই কোন আলোচনা। আগামীর জন্য নেই কোন পরিকল্পনা। আছে অতীত নিয়ে পরস্পরের মধ্যে তুমুল বিবাদ। আজকের প্রজন্মের কাছে বড্ড জানতে ইচ্ছে করে তারা কী জানে ’৪৭-এর পূর্ব বেনিয়া ব্রিটিশ এবং এ দেশীয় তাদের দোসর শোষকদের নির্মম নির্যাতনের ইতিহাস? তারা জানে না ’৪৭-এর উত্তর ইসলামের ধ্বজাধারী পাকিস্তানী শাসক চক্রের শাসন-শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাসও।
আজকের প্রজন্ম কেন; আমার মতো মধ্যবয়সী একজনের কাছেও যদি জিজ্ঞেস করা হয় কে তিতুমীর, কে হাজী শরিয়তুল্লাহ, কে নবাব সলিমুল্লাহ, কে নবাব সৈয়দ আ. লতিফ, কে শেরে বাংলা, কে সোহরাওয়ার্দী, কে মওলানা ভাসানী, কে ফখরুদ্দীন মুবারকশাহ, কে হাজী ইলিয়াস শাহ, কে সিরাজ-উদ-দৌল্লাহ, কে মজনু শাহ, কে মাওলানা কেরামত আলী, কে হাবিলদার রজব আলী, কে মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, কে শওকাত আলি, কে মোহাম্মদ আলী, কে মাওলানা হসরত মোহানী, কে মাওলানা আকরম খাঁ, কে খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ, কে মুন্সী মেহেরউল্লাহ; কী ছিল তাদের পরিচয়? কী ছিল উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের ভূমিকা? কিছুই বলতে পারবে না। বলতে পারবে না- কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা? কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সে দিন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল? কোন প্রেক্ষাপটে? কে বলেছিল ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি “পূর্ব বাংলার (বাংলাদেশ) চাষাদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দরকার নেই”। কেন সে দিন আসাম-বাংলার মানুষ বঙ্গভঙ্গের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন? বঙ্গভঙ্গ হলো। হঠাৎ কেন রদ হলো? কাদের স্বার্থে? কেন ভারত ভাগ হলো? কেন পাকিস্তান চেয়েছিলাম? কেন সৃষ্টি হলো আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ? কেন অখ- বাংলা দ্বিখ-িত হলো? কাদের স্বার্থে? কাদের কুপ্ররোচনায়?
আমরা ইতিহাস বিমুখ হয়ে পড়েছি। প্রকৃত ইতিহাস জানি না। জানলেও সব কিছু যেন বিস্মৃতিতে চলে যাচ্ছে। একটি জাতি তার শিকড়ের ইতিহাস ভুলে গিয়েছে। বিজাতীয় সভ্যতার দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। গত সাড়ে ছয়শ বছরে এসব পথিকৃৎরা বাঙালি ও মুসলিম জাতীয়তাবাদকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এসব কৃতী সন্তানেরা দেশ-জাতির উন্নয়নে নানাভাবে অবদান রেখেছেন। তাদের দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ ছিল প্রশ্নাতীত। অথচ তারা আজ ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন।
কারণ কী? কারণ হচ্ছে ইতিহাস চর্চাটা আজ একাডেমিসিয়ানদের হাত নেই। চলে গেছে মতলববাজদের হাতে। হাইব্রিড আহম্মকদের দখলে। সুবিধাভোগী একশ্রেণীর মুৎসুদ্দিদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে ইতিহাস শুধু বিকৃতিই ঘটছে না, ইতিহাস কল্প কথায় রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রকৃত ইতিহাস চাপা পড়ে যাচ্ছে। বিকৃত হচ্ছে। ফলে শুনতে হচ্ছে নানা নাম। নানা ইতিহাস।
প্রত্যেক জাতির একটি ইতিহাস রয়েছে। রয়েছে তার স্বাতন্ত্র্য কৃষ্টি-সভ্যতা। তাকে আঁকড়ে ধরে একটি জাতি ধাবিত হয় উন্নয়নের দিকে। আর আমরা! ভালোমন্দ বুঝি না। বোঝার চেষ্টাও করি না। বিদেশিরা যেটা পরিহার করে, আমরা সেটা অনুকরণ করি। এই অনুকরণ করতে গিয়ে তাদের কৃষ্টি সভ্যতাকে গো-গ্রাসে গিলছি। মুসলিম অধ্যুষিত এই বাংলাদেশ। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চেতনার সাথে মিশে আছে ইসলামের সুমহান আদর্শ। অথচ নাটক, উপন্যাসে মুসলিম জাতিকে বিকৃত করা হচ্ছে। দাঁড়ি-টুপিওয়ালা লোকগুলোকে বিদ্রƒপ করা হচ্ছে। ধর্মকে প্রতিনিয়ত হেয় করা হচ্ছে। মুসলমানদের চোর, ডাকাতের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। মুসলিম জাতির অতীত ইতিহাস এ প্রজন্মের একটি অংশ তেমন কিছু জানে না। সেক্যিউলারিজমের খপ্পরে পড়ে তারা এসব জানতেও পারছে না। ফলে তারা না বুঝে এসব দেখছে; শুনছে, গিলছে। অতঃপর(!) চলতি ¯্রােতে তারা গাঁ ভাসিয়ে দিচ্ছে।
জাতির কৃষ্টি-সভ্যতা ও তাহজিব-তমদ্দুনের সাথে সংগতি রেখে এ দেশে নাটক, নভেল লেখার মতো কোন সাংবাদিক, সাহিত্যিক, উপন্যাসিক কী নেই? না তারা অপাঙ্ক্তেয়। আসলে কিন্তু তা নয়। কারণ প্রকৃত ইতিহাস কখনও গোপন থাকে না। ইতিহাস কারও দয়ার দান নয়। তাকে দাবিয়ে রাখা যায় না। প্রকৃত ইতিহাস একদিন বেরিয়ে আসবেই। সত্য ইতিহাস সব সময় লেখা যায় না। তবে এ কথা সত্য যে, সাহসীদের উচ্চারণ কখনও থেমে থাকে না। কোন কোন ক্ষেত্রে সত্য ইতিহাস লিখতে গিয়ে ভাগ্যের ললাটে লেখা থাকে চরম দুর্গতি। আগামী দিনে ভাগ্যের ললাটে কী লেখা আছে জানি না। তবে দুর্ভাগ্য আমাদের। কারণ অলি-আল্লাহর বাংলাদেশ, শহীদ-গাজীর বাংলাদেশ। সেই দেশে দুর্গতির শেষ নেই।
গোটা জাতির প্রকৃত ইতিহাস খুঁজে বের করতে হবে। বের করতে হবে বাংলাদেশী মুসলমানদের জাত-পাতের পরিচয়। ইংরেজ এবং ব্রাহ্মণদের শেখানো বুলি শুধু পড়লে চলবে না। কারণ তাদের ইতিহাস হলো মতলবি ইতিহাস। শাসন-শোষণের ইতিহাস। ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ পলিসির ইতিহাস। একটি সুশৃঙ্খল জাতিকে ধ্বংস করার নগ্ন ইতিহাস। মুসলমানদের সৃষ্ট সকল সভ্যতার ইতিহাসকে টেনে বের করতে হবে। জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে।
ভালোমন্দের বিচার নেই। সর্বত্রই ভেজাল। নকলের ভিড়ে বাজার সয়লাব। আসল সোনা চিনতে পারছি না। এই ব্যর্থতার দরুন শিকড়ের সন্ধানে না গিয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে আমরা প্রতিনিয়ত আহ্বান করছি। আমরা কোথায় চলেছি? এই গন্তবের শেষ কোথায়? নকলের এই বাজারে প্রকৃত সোনা চিনতে হলে ‘ছাগল-কুকুরের’ গল্পটি পাঠকের সামনে একটু উপস্থাপন করা জরুরি নয় কি?
এটি একটি লোক গল্প। একজন বামুন, তার যজমান বাড়ী গিয়েছিল পূজো-আর্চা করতে। কাজ শেষ করে ঘরে ফেরার সময় যজমান তার পুরোহিত ঠাকুরকে খুশী করার তরফে কিছু টাকা-কড়ি আর একটা নাদুস-নুদুস বড় কালো ছাগল ভেট দেয়। টাকা-কড়ির চেয়ে ছাগলটা পেয়ে ঠাকুর মশাই খুবই খুশী। তিনি ছাগলটা নিয়ে মনের আনন্দে বাড়ী চলেছেন। পথে এক বাজার। সেই বাজারে বসে ছিল কয়েকজন বোম্বেটে। তারা দূর থেকে দেখে এক বুড়ো বামুন বেশ বড় একটা মোটাসোটা কালো খাশি ছাগল নিয়ে আসছে। দেখে বোম্বেটেদের একজন বলে উঠল, ‘আরে দ্যাখ দ্যাখ, বামুন ঠাকুর ছাগল নিয়ে যাচ্ছে। কত বড় ছাগল দ্যাখ’। ছাগল দেখে আর একজন বোম্বেটে বলে উঠল ‘তাই তো। খাশিটা বাগানো যায় কীভাবে? মেলা গোশতওয়ালা খাশি, অনেক চবর (চর্বি) হয়েছে দেখছি। ওটাতো বাগাতে হয়’। তখন বোম্বেটেরা মিলে একটা কৌশল ঠিক করল। তারা চারজন উঠে পড়ল এবং একজন ওখানে বসে রইল।
ঠাকুর মশাই কাছে এলে, লোকটা তাকে জিগ্যেস করল ‘ঠাকুর মশাই! এই কালো কুকুরটা গলায় দড়ি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কোথায়? কথা শুনে বামুন ঠাকুর তো রাগে গরগর করে উঠলেন। বললেন- বল কি হে? তুমি কুকুর দেখলে কোথায়? এটা তো ছাগল। আমার অমুক যজমান এটা আমাকে খেতে দিয়েছে। তাই গলায় দড়ি দিয়ে বাড়ী নিয়ে যাচ্ছি।’
লোকটা পুরোহিত ঠাকুরের কথা শুনে হেসে ফেলল। ভাব দেখাল, ‘ঠাকুর মশাইর কথা একটুও ঠিক নয়। ওটা কখনই ছাগল নয়, খুব বড় একটা কালো কুকুর মাত্র।’ তাই খুবই অবিশ্বাসের ভাব দেখিয়ে অবাক হয়ে বলল ‘আরে বলেন কি ঠাকুর মশাই? আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে? দেখা যাচ্ছে তাজা-তওনা একটা কুত্তা আর আপনি বলছেন- ছাগল? বেশ, বেশ। ছাগল হয় ভালই! খেয়ে মজা পাবেন। আমি যাই।’ এই বলে সে চলে গেল। ঠাকুর মশাই ও আর কথা না বাড়িয়ে ছাগল নিয়ে পথ হাঁটতে থাকলেন।
কিছু দূর যাবার পর দেখলেন, একজন লোক তার দিকে হেঁটে আসছে। সে ছিল ঐ বোম্বেটেদের একজন। সে কাছে এসে জিগ্যেস করল ঠাকুর মশাই পেন্নাম। তা এত বড় কুকুর কোথায় পেলেন? কে দিল? বামুন ঠাকুর কথা শুনে খেঁকিয়ে উঠলেন ‘দূর দূর’! কে বলেছে এটা কুকুর। আমি নিয়ে যাচ্ছি ছাগল আর তুমি বল কুকুর। যাও, যাও। মশকরার আর পেলে না কিছু?
বোম্বেটে লোকটা তখন আকাশ থেকে পড়ার মত ভাব দেখিয়ে বলল ‘আরে কি বলেন ঠাকুর মশাই? ওটা ছাগল বলবে কে? ওতো কুকুর। কেউ নিশ্চয়ই আপনাকে তন্ত্রমন্ত্র করেছে। আপনার কাছে ছাগল বলে কুকুর বেচেছে’।
বামুন ঠাকুর বললেন- ‘না এটা আমার কেনা নয়, যজমান বাড়ী গিয়েছিলাম তারা আমাকে দিয়েছে। কুকুর দেবে কেন?
লোকটা কথা শুনে হাসতে লাগল। তারপর বলল তাহলে যজমানটারই কা- এটা। সেই এ করেছে। যাক, আমার এতে কি? আমি যাই। এই বলে সে চলে গেল।
তখন বামুন মশাইর মনে কেমন কেমন ভাব জাগতে লাগল। এটা যদি ছাগলই হবে তাহলে দু’দুজন লোক একই কথা বলবে কেন? যজমান তো ঠকাতেও পারে। তন্ত্রমন্ত্রে কিনা হয়।
তবে পুরোহিত মশাই ছাগলের দড়ি ছাড়লেন না। তিনি ওটা নিয়েই হাঁটতে লাগলেন। কিন্তু মনের মধ্যে কেমন খোঁচাতে লাগল। যাহোক ছাগল নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এক বটগাছ তলায় এসে দাঁড়ালেন বামুন ঠাকুর। সেখানে ঐ বোম্বেটেদের আর একজন আগেই গিয়ে বসেছিল। সে বামুনকে বললÑ ‘ঠাকুর মশাই, কি কুত্তাটা বেঁচতে নিয়ে যাচ্চেন? তা কত দাম চান? এ রকম একটা কুত্তা আমার খুব দরকার।’
এবার ঠাকুর মশাই খুব রাগলেন না। কেমন একটু মিইয়ে গেলেন। তবু বেশ দৃঢ়ভাবে বললেন- ‘সব কিছু নিয়ে, সব সময় ঠাট্টা-মশকরা কি ভাল?
লোকটা গম্ভীর হয়ে বলল- ‘আমি আবার ঠাট্টা-মশকরা করলাম কোথায়? আমার একটা কুকুর কেনা দরকার, তাই জিগ্যেস করলাম।’
ঠাকুর মশাই বললেন এটা যে কুকুর নয়, ছাগল, তা তুমি দেখছ না? কেন এটাকে তুমি কুকুর বলছ? ঠাকুরের কথা শুনে বোম্বেটে লোকটা ঘোরতর অবিশ্বাসের ভাব দেখিয়ে বলল ‘আপনিতো আচ্ছা পাগল! দশজন লোক ডেকে শুনুন না, তারা ওটাকে ‘ছাগল’ বলে, না ‘কুকুর’ বলে শুনুন। সে যাক, আপনার মত মাথা খারাপ লোকের সাথে কথা বলে কাজ নেই। আমি যাই।’
পুরোহিত ঠাকুরও রওনা দিলেন। ছাগলের দড়ি হাতেই আছে। মনের মধ্যে এখন রীতিমত তোলপাড় চলছে। তাইতো, এটা যদি ছাগলই হবে তাহলে পরপর তিন তিনজন লোক মিছে কথা বলবে কেন? আমারই কিছু খেয়ে টেয়ে মাথা খারাপ হল নাকি? না তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে আমায় নজরবন্দি করে কুকুরকে ছাগল দেখিয়ে গছিয়ে দিল, তাই বা কে বলবে? সত্য কোনটা, তা বুঝেতে তো দুটো সাবুদই যথেষ্ট। সেখানে তিনজনই বলল একাই কথা। এ ব্যাটা তো আবার বলল দশজনকে ডেকে শুনতে! তাহলে! ... দূর। এত দিয়ে কাজ কি? ছেড়েই দিই এটাকে। শেষে ছাগল ভেবে কুকুরের মাংশ খাবো? এই বলে, বামুন ঠাকুর বটগাছ থেকে খানিক দূর এগিয়ে গিয়ে ছাগলটকে দড়িসহ ছেড়েই দিলেন এবং তারপর নিশ্চিন্ত মনে পথে হাঁটতে থাকলেন।
তখন চতুর্থ লোকটা তা দেখতে পেয়ে- ঠাকুর মশাই চোখের আড়ালে হতেই দৌড়ে গিয়ে ছাগলের দড়ি ধরল এবং টানতে টানতে সেই বাজারের দিকে নিয়ে চলল। এভাবেই বামুন ঠাকুরের আসল ছাগল কুকুর হয়ে গেল এবং তারপর তা ছাগল বলেই বোম্বেটেরা লুফে নিল’।
আমাদের দশা কী বামুন ঠাকুরের মতো নয়? যারা এ দেশে ধর্মের নামে প্রকট শ্রেণী বিভাজন করেছে, সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিয়েছে সেই সব বোম্বেটেরদের ধাঁধায় পড়ে আমাদের ছাগল একদিন কুত্তা হয়ে গেছে। আমাদের অজ্ঞতা নানা হীনমন্যতা এমনভাবে পেয়েছে যে, তারা যা বলেন আমরা অকপটে তা শুধু শুনি। আর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে হাসি। এসব কী মূর্খতার লক্ষণ নয়? এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রমাণ করে দিতে হবে এ উপমহাদেশের সকল উন্নয়নে, সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। প্রমাণ করে দিতে হবে এই উপমহাদেশে যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে সবই মুসলমানদের একক কর্মের সৃষ্ট ফসল।
প্রমাণ করে দিতে হবে শ্যামল বাংলার লাখো গাজী-শহীদের রক্তভেজা শত সংগ্রামের ধারাবাহিকতার ফসল আজকের বাংলাদেশ। আমরা যা কিছু অর্জন করেছি তা সবই বাংলাদেশীদের নেতৃত্ব এবং ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের ফসল। আর তারাই যেসব মুসলিম মুজাহিদেরা আজাদীর লড়াইয়ে জেল খেটেছে, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছে, ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলেছে, দ্বীপান্তরে সাজা ভোগ করেছে, কাফনের কাপড়ে আজাদীর পয়গাম লিখে পাঠিয়েছে এরা দেশপ্রেম থেকে একচুলও বিচ্যুত হয়নি এসব দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী মুসলিম নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার আন্দোলনের ফসল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। এরাই হলো ১৭৫৭ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে সেই সব রক্তাক্ত দিন গুলির আসল সেনা। আসল মানুষ।
১৭৫৭ সালের পলাশীর বিয়োগান্ত ইতিহাস, বৃটিশ-ব্রাহ্মণদের শোষণ-অত্যাচারের ইতিহাস, ইসলামের নামে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর শাসন-শোষণের ইতিহাস, কেন সেদিন দ্বিজাতি তত্ত্বের দাবি উঠেছিল, কেন বা পাকিস্তান চেয়েছিলাম, আর কেন বা হলো আজকের বাংলাদেশ; কোন প্রেক্ষাপটে বাংলা বিভক্ত হলো, কেন বঙ্গভঙ্গ হলো এসব কথা আজকের প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তাদের জানিয়ে দিতে হবে ঘটনার অন্তরালে প্রকৃত সত্য। জানিয়ে দিতে হবে প্রকৃত ইতিহাস। আরও জানিয়ে দিতে হবে এই উপমহাদেশ শাসনে এবং উন্নয়নে কাদের সবচেয়ে অবদান ছিল। জানিয়ে দিতে হবে কারা শাসনের নামে শোষণ করেছে। শোষণের নামে জাতিতে-জাতিতে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। এসব জানিয়ে দেয়া এক মিশনারী দায়িত্ব। এ দায়িত্ব দেশপ্রেমিক সকল নাগরিকের। তা না-হলে প্রকৃত ইতিহাস চাপা পড়ে যাবে। আর সে ব্যর্থতার দায়ে আগামী প্রজন্মের কাছে আপনাকেও জবাবদিহি করতে হবে।
 লেখক : আইনজীবী ও খুলনা থেকে প্রকাশিত আজাদ বার্তার সম্পাদক
ধুধফনধৎঃধশযঁষহধ@মসধরষ.পড়স

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন