বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

বিশ্ব মা দিবস ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হোসেন মাহমুদ
এ পৃথিবীতে মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্কের চেয়ে মধুর সম্পর্ক আর নেই। নদীর মতো প্রবহমান মানুষের জীবন। নদী প্রবাহ যেমন থেমে থাকে না, মানুষের জীবনও সেরকমই। জীবনের চলার পথে মানুষ এগিয়ে যেতে থাকে। এ চলমান জীবনের একটি পর্যায়ে নারী এসে পুরুষের সাথে বিবাহের অচ্ছেদ্য বন্ধনে বাঁধা পড়ে। জীবনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। প্রেম-ভালোবাসা-সংসারের দিনযাপন আর অভিজ্ঞতার পথ বেয়ে পুরুষ হয় পিতা আর স্ত্রী হয় মা। মাতৃত্ব হচ্ছে নারীর চিরন্তন রূপ। সে মাতৃত্বের সার্বিক প্রকাশ ঘটে তার সন্তানকে লালন করার মধ্যে। এক বা একাধিক সন্তানকে ঘিরে রচিত হয় ¯েœহ-মমতা-ভালোবাসার এক নতুন পৃথিবী। পিতা-মাতার জীবনের সব আশা-আকাক্সক্ষা, অপূর্ণ স্বপ্ন সন্তানদের ঘিরে ভবিষ্যতের পথে অগ্রসর হয়।
শিশুর জন্ম থেকে শুরু করে তার বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত সময়কালটি আবর্তিত হয় মাকে ঘিরে। প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে নারী হবে মা। এটি নারীর প্রকৃতিগত প্রাপ্তি। নারীর মা হওয়া তার জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। একটি সদ্যজাত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে তাকে তিল তিল করে বড় করে তোলার দায়িত্বটি পরম যতœ ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেন মা। যে মা সন্তানকে দশ মাস গর্ভে ধারণ করেন, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর অপরিসীম মায়া-মমতায় পৃথিবীর বুকে ধীরে ধীরে বড় করে তোলেন, মানুষের কোনো ভাষাতেই, কোনো কথাতেই বুঝি সেই মায়ের অবদানের পূর্ণ পরিচয় তুলে ধরা যায় না। মা তো মা-ই। মা’র কোনো তুলনা হয় না। শ্রদ্ধা, সম্মান, ভক্তি, সেবা, ভালোবাসা দিয়ে মা’র দানের হয়তো কিছুটা প্রতিদান দেয়া যেতে পারে।
সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষকে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দেখা যায়। সব কালে, সব দেশে চিরকালই মায়ের ভূমিকা এক ও অভিন্ন। প্রতিটি মা’ই সন্তানের প্রতি যেমন যতœবান তেমনি তার অমঙ্গলের ব্যাপারে শংকিত। সভ্যতার আদি যুগে পুত্র যখন জঙ্গলে শিকার করতে গেছে তখন উদ্বিগ্ন মা তার পথ চেয়ে বসে থেকেছেন। পরবর্তীতে সন্তান যখন লড়াই করতে গেছে তখন মায়ের বুক শংকায় দুর দুর করেছে। আধুনিক যুগে সন্তান যখন পড়াশোনা করতে দূর দেশে গেছে তখন মমতাময়ী মা তার ফেরার আশায় দিন গুনেছেন। এখন সংসারে একটু সচ্ছলতা আনার আশায় পুত্র যখন হাজার হাজার মাইল দূরের দেশে চাকরি নিয়ে চলে যায় তখন ফোনে তার কণ্ঠ শোনার জন্য আকুল হয়ে থাকেন। পৃথিবীর সব দেশের মা’ই সন্তানের মৃত্যুতে বুক চাপড়ে কাঁদেন, তার আহাজারিতে ভরে ওঠে আকাশ-বাতাস। কোনো প্রলোভন দিয়েই কোনো মাকে তার সন্তানের বিরুদ্ধে কোনো ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত করানো যায় না। মা শিশুকালে বুক দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখেন, সন্তান বড় হলেও তার জন্য প্রয়োজনে নিজের জীবন দিতেও দ্বিধা করেন না।
সেকালের পৃথিবীতে প্রায় সব মা’ই অশিক্ষিত ছিলেন। আজকের এ ডিজিটাল বিশ্বেও অনেক মা’ই নিরক্ষর। কিন্তু শিক্ষা বা অশিক্ষার সাথে মাতৃ¯েœহের কোনো সম্পর্ক নেই। মায়ের ¯েœহ ফল্গুধারার মতো মাতৃহৃদয় থেকে স্বতঃউৎসারিত অফুরন্ত সম্পদ। ধনী বা দরিদ্র অবস্থার ওপর তার প্রাচুর্য বা ন্যূনতা নির্ভর করে না। বাইরের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সন্তান যখন দিশাহারা হয়ে পড়ে, তখন মা তার পাশে এসে সান্ত¦নার হাত বাড়িয়ে দেন। সন্তান যখন অনেক সময় কা-জ্ঞান হারা হয়ে বা সংকীর্ণ মানসিকতা তাড়িত হয়ে মা’র সাথে অসদাচরণ করে তখন ব্যথিতা মা সর্বংসহা ধরণীর মতো তা সহ্য করেন। তিনি সন্তানের কোনো ক্ষতি কামনা করেন না, কোনো অবস্থায়ই কোনো মা তার সন্তানের অমঙ্গল চান না।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মায়ের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায়। শুধু একজন নারী নয়, মাকে মায়ের যথাযথ মর্যাদা দেয়ার ব্যাপারে বিশ্বের অনেক দেশেই উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিশ্বে মা দিবস পালনের প্রথম উদ্যোগ নেয় ব্রিটেনের মানুষ। তখন প্রতি বছর মে মাসের চতুর্থ রোববারকে ‘মাদারিং সানডে’ হিসেবে পালন করার রেওয়াজ চালু হয়। এর অনুসরণে ইংল্যান্ড থেকে আমেরিকায় আসা লোকেরা ‘মা দিবস’ উদযাপন প্রথম চালু করে আমেরিকাতে সতেরো শতকে। তবে তা পরে টিকে থাকেনি। ১৮৭২ সালে জুলিয়া ওয়ার্ড হাও না¤œী এক মহিলা সমাজকর্মী নিরস্ত্রীকরণের প্রতি সমর্থন দিতে মহিলাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি ১৮৭২ সালের ২ জুনকে শান্তির জন্য মা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন। তিনি যুদ্ধের বিরুদ্ধে মা’দের প্রতিবাদী হয়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করেন। তিনি দিবসটিকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করানোর জন্য চেষ্টা করেন। তবে সফল হতে পারেননি। তার চেষ্টা ছিল বোস্টন শহরকেন্দ্রিক। ১৮৮০ ও ’৯০-এর দশকেও মা দিবস প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলে। তবে স্থানীয় পর্যায়ের বাইরে তার আন্দোলন বিস্তৃত হতে পারেনি। এ দিনের কর্মসূচিতে দুটি সুন্দর বিষয় ছিল। এক. হলোÑ মায়ের সাথে সময় দেয়া, দুই. মাকে কিছু উপহার কিনে দেয়া।
পরবর্তীকালে মা দিবস উদযাপনের কৃতিত্ব যার প্রাপ্য তিনি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার অ্যানা জারভিস। ১৯০৫ সালে তিনি এ দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করানোর জন্য চেষ্টা শুরু করেন। ১৯০৮ সালে তিনি ভার্জিনিয়া ও পেনসিলভানিয়ার কয়েকটি গির্জা প্রধানদের কাছে আবেদন জানিয়ে সেসব গির্জায় মা দিবস উদযাপন করাতে সক্ষম হন। তার আন্দোলনের ফলে যুক্তরাজ্যের কয়েকটি রাজ্য ১৯১০ সালে মা দিবস উদযাপন শুরু করে যেগুলোর মধ্যে ছিল তার নিজের রাজ্য পশ্চিম ভার্জিনিয়া। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এ ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেন। তিনি ১৯১৪ সালে প্রতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ‘মা দিবস’ ঘোষণা করে এদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। তখন থেকেই সারা বিশ্বে মা দিবস পালিত হয়ে আসছে। আরো পরে ১৯৬২ সালে মা দিবস আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। বর্তমানে বিশ্বের ৫০টি দেশে প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্ব মা দিবস পালিত হচ্ছে।
শান্তির ধর্ম, মানবতার ধর্ম ইসলামে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জন্য বলা হয়েছে। তবে পবিত্র কোরআনে আলাদাভাবে মায়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি। আল্লাহপাক বলেছেন, “আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরিক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য কর না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে” (সূরা আনকাবুত, ৮ আয়াত)। আবার হাদিসে বলা হয়েছে, “এক ব্যক্তি নবীজীর (সা.) কাছে এসে বলল, সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার বেশি কোন মানুষের? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। লোকটা বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপর তোমার বাবা” (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি)। আরেকটি হাদিসের কথা উল্লেখ্য যাতে রাসূল (সা.) বলেছেন, “মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।”
কবিরা ভাবপ্রবণ, সাধারণ মানুষের চেয়ে তারা একেবারেই আলাদা। মায়ের প্রতি তারা তাদের শ্রদ্ধা-ভক্তি-ভালোবাসা ব্যক্ত হয়েছে তাদের রচিত কবিতায়। যেমন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার ‘মা’ কবিতায় তিনি মায়ের যে অপরূপ ছবিটি এঁকেছেন তা অতুলনীয় : “যেখানেতে দেখি যাহা/ মা-এর মতন আহা/ একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,/ মায়ের মতন এত/ আদর সোহাগ সে তো/ আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!” প্রখ্যাত কবি কাজী কাদের নেওয়াজ মা সম্পর্কে তাঁর ‘মা’ কবিতায় বলেছেন : “মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই/ ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।” কবিদের কলমের আঁচড়ে মায়ের যে রূপটি ফুটে উঠেছে তা মিষ্টি-মধুর, চিরচেনা।
আমাদের জীবনে যার ভূমিকা অতুলনীয়, আমাদের ঘিরে রচিত হয় যে মায়ের স্বপ্নময় ভুবন, অন্যদিকে আমাদের জীবন যাকে অবলম্বন করে ডালপালা মেলে, চারা অবস্থা থেকে রূপ নেয় মহীরুহে, সে মা এক সময় যৌবন থেকে বার্ধক্যে উপনীত হন। সন্তানের জীবনে ততদিনে কাক্সিক্ষত নারী বা পুরুষের আগমন ঘটে, সেখানে সূচিত হয় জীবনের বাড়-বাড়ন্ত। কিন্তু তারপরও মা যে মা সেই মা-ই থেকে যান। সন্তানের মঙ্গল-অমঙ্গল, কল্যাণ-অকল্যাণের চিন্তা-উদ্বেগ তখনো তাকে ঘিরে থাকে। বলা দরকার, বিশ্বের সব দেশে সব মা-ই এক, কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের মায়েরা যেন তারপরও আলাদা। মনে হয়, আমাদের মায়েরা সন্তানের জন্য বুকের সবটুকু ¯েœহ ভালোবাসা যেমন নিঃশেষে উজাড় করে দেন, আর কোনো দেশের মায়েরা বুঝি এত মমতা ও ¯েœহ ঢেলে দেন না। বাঙালি মায়েরা শাড়ির আঁচলে সন্তানকে ঢেকে রাখেন। এ দেশের আটপৌরে মায়েরা এক সময় সন্তানের জন্য পিঠা বানিয়ে শিকেয় ঝুলিয়ে রাখতেন, রাতে কুপি বাতি জ্বালিয়ে ভাত নিয়ে ছেলের ফেরার আশায় বসে থাকতেন, উৎকর্ণ হয়ে থাকতেন ওই বুঝি ছেলের পায়ের আওয়াজ শোনা যায়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছেলে গভীর রাতে দূর এলাকা থেকে ফিরেছে। মা নিজের ঘুম, সুখ বিসর্জন দিয়ে মাটির চুলায় ছেলেকে দু’মুঠো ভাত রেঁধে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রচ- গরমে ছেলে ঘেমে নেয়ে উঠেছে। মমতাময়ী মা তালের পাখা নিয়ে বাতাস করে চলেছেন যাতে সে একটু আরামে ঘুমাতে পারে। পঙ্গু ছেলে চলতে পারে না। বয়স হয়ে যাওয়ায় মা নিজেই চলাফেরায় অপারগ। তারপরও তাকে পিঠে করে বয়ে বেড়ান, যেন জীবনের ঘানি টেনে চলেন। ছেলে দূরের শহরে চাকরি করে। মা তার কথা ভাবেন। সেই কবে ছেলেটা গেছে। গ্রীষ্ম যায়, বর্ষা আসে। তারপর একদিন কুমড়োর ফুলে ফুলে নুয়ে পড়ে লতাÑ মা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবেনÑ তুই কবে আসবি বাবা! বাঙালি মায়ের এ চিরন্তন ছবি বিশ্বের আর কোথাও মেলে না। এখন অবশ্য সময় পাল্টে গেছে। প্রযুক্তি আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন এনেছে। এখন সন্তানের জন্য মায়েদের কষ্ট-দুঃখ-দুশ্চিন্তা অনেক কমে গেছে। দূরে থাকা ছেলের কুশল জানার জন্য এখন আর মাকে চিঠির অপেক্ষায় থাকতে হয় না। মোবাইল ফোন কথা বলা সহজ করে দিয়েছে, একটু চেষ্টা করলে স্কাইপে সন্তান-মায়ের দেখা-কথা দুই-ই হতে পারে। কিন্তু সন্তানের জন্য মায়ের উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা আগেও যেমন ছিল আজো তেমনি আছে।
মানব গোষ্ঠী ছড়িয়ে আছে বিশ্বের সব প্রান্তে। এস্কিমোদের বরফের ঘর ইগলুতে, আমাজনের গহিন অরণ্যে, সাহারার মরুভূমিতে, সাগরবেষ্টিত দ্বীপে, বছরে ছয় মাস সূর্য দেখা যায় না এমন দেশে, পাহাড়ি এলাকা সর্বত্রই মায়েরা আছেন। পরিবেশ, সংস্কৃতি, ভাষা, জীবনাচার এবং দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। কিন্তু মা সেই একই। মায়ের চরিত্রের কোনো বদল হয় না। মা ও সন্তান সর্বত্রই সেই একই চিরন্তন বন্ধনে আবদ্ধ। বাংলা মা, ইংরেজি মম, ফরাসি মেরি, জার্মান মাটার বা হিন্দি মাইজি ইত্যাদি নানা রকম সম্বোধন মূল আবেদনে কোনো প্রভেদ সৃষ্টি করে না।
মা দিবসে মাকে খুশি করাই কিন্তু সন্তানের প্রথম ও প্রধান কাজ। সাধ্যমতো মায়ের জন্য পছন্দের কিছু জিনিস উপহার দেয়া, তার কাছে বসে থাকা, তার কাছে সময় কাটানো, কথা বলা, কিছু রান্না করে খাওয়ানো, কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি নানা কিছু করা যায়। মা তাদের জন্য কী করেছেন, কীভাবে মুখে তুলে খাইয়েছেন, প্র¯্রাব-পায়খানা নির্দ্বিধায় পরিষ্কার করেছেন, অসুস্থতায় না ঘুমিয়ে না খেয়ে সন্তানের সেবা করেছেন, কচি হাত ধরে পা পা করে হাঁটতে শিখিয়েছেন, স্কুলে নিয়ে গিয়েছেন, রোদ-বৃষ্টি-ঠা-া সহ্য করে ছুটি না হওয়া পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন ইত্যাদি কোনো সন্তানেরই ভোলার কথা নয়। অর্থ দিয়ে তার প্রতিদান দেয়া যায় না, যায় শুধু মাকে ভালোবেসে। তিনি তার যৌবনে সন্তানকে যা দিয়েছেন, বার্ধক্যে সন্তানের কাছ থেকে সেটাই তার প্রাপ্য। এটা ঠিক যে কোনো মা’ই তার সন্তানের কাছ থেকে এ রকম বিনিময় পাওয়ার জন্য দর-কষাকষি করেন না, কিন্তু প্রতিটি সন্তানেরই উচিত মাকে সে রকম দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে না দেয়া। সব সন্তানেরই এটা মনে রাখা উচিত যে তার জীবনের প্রথম উচ্চারিত শব্দ ছিল “মা”।
যত দিন যাচ্ছে ততই প্রতি বছর বিশ্ব মা দিবস উদযাপন আরো বিস্তৃতি লাভ করছে। জন্মদাত্রী মায়েদের ব্যাপারে সর্বস্তরের মানুষকে আরো সচেতন করে তুলছে। জনসমাজে, রাষ্ট্র কাঠামোতে মায়েদের আরো বর্ধিত ভূমিকার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে। মায়েদের যথাযথ অবদানকে স্বীকার করা এবং তাদের প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত করার দাবি দিনে দিনে জোরদার হচ্ছে। সাম্প্রতিক পৃথিবীতে সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। নারীরা বিশ্বের দেশে দেশে প্রশাসন, কূটনীতি, বিজ্ঞান চর্চা, মহাকাশ গবেষণা, প্রযুক্তির আবিষ্কার, মানবিক কার্যক্রমসহ সব ক্ষেত্রেই অনেকখানি অগ্রসর হয়েছেন। ক্রমবর্ধমান সাফল্য নারীর সাফল্যের প্রান্তরে সোনালি চাদর বিছিয়ে দিক, বিশ্ব মা দিবসকে আরো মর্যাদাময় ও মহীয়ান করে তুলুকÑ এটাই ঐকান্তিক কামনা।
 লেখক : সাংবাদিক
যথসধযসঁফনফ@ুধযড়ড়.পড়স

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন