শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

হাজার হাজার যাত্রী চরম ভোগান্তিতে

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। আটকা পড়েছে শত শত পণ্যবাহী গাড়ি। গত মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া যানজট স্থায়ী না হলেও গাড়ির গতি কম থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হলেও দূরত্ব কমছে না।
হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নির্মাণাধীন দ্বিতীয় গোমতী, মেঘনা ও কাঁচপুর সেতুর শেষ সময়ের কাজ চলায় এ মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে মেঘনা সেতুর উভয় পাশে অন্তত ৫৫ কিলোমিটার জুড়ে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। রাতে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসা এশিয়া লাইন পরিবহনের যাত্রী কাউসার হোসেন জানান, রাত ৮টায় কুমিল্লা থেকে রওনা দিয়ে রাত পৌনে একটায় ঢাকা পৌঁছেছেন তিনি। এদিকে রাতের ভোগান্তির পর বুধবার ভোর থেকে মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশে অন্তত ৬/৭ কিলোমিটার এবং মেঘনা সেতুর উভয় পাশে অন্তত ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের দাউদকান্দি থানার ওসি আবুল কালাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, যানজট স্থায়ী হচ্ছে না। গোমতী ও মেঘনা সেতু এলাকায় টোল আদায় ও বিকল্প সেতু নির্মাণের কারণে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে।
পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও যাত্রীদের অভিযোগ, কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বহীনতা, মহাসড়কে বিকল হয়ে পড়া যানবাহন সরিয়ে না নেয়া, মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় ওজন স্কেল স্থাপন, টোল আদায়ে ধীরগতি, ৮ লেনের গাড়ি মেঘনা সেতুতে গিয়ে দুই লেনে চলাচল, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, পরিবহন চাঁদাবাজদের বেপরোয়া চাঁদাবাজী, মেঘনা সেতু ও কাঁচপুর সেতু এলাকায় নতুন দুটি সেতুর কাজ পরিচালনা করার কারণে প্রতিদিন মেঘনা সেতু ও কাঁচপুর সেতু এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার পরিবহন যাত্রী চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গত মঙ্গলবার রাতে মেঘনা সেতুর পূর্বপাশে একটি যাত্রীবাহী বাস ও একটি পণ্যবাহী গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। এতে মুহূর্তের মধ্যে মহাসড়কের দু’প্রান্তে যানজটের সৃষ্টি হয়।
গতকাল বুধবার সকালে সরেজমিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যানজটের কবলে আটকে আছে হাজার হাজার যানবাহন। মাঝে মধ্যে কচ্ছপ গতিতে যানবাহন চলাচল করলেও তা আবার দীর্ঘ সময়ের জন্য থেমে যাচ্ছে। অনেক পরিবহন যাত্রী তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পায়ে হেঁটে রওনা হচ্ছেন। ঢাকা থেকে দাউদকান্দি গামী বিআরটিসি পরিবহনের যাত্রী আরমান খন্দকার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সকাল ১০টার সময় গুলিস্তান থেকে বাসে উঠে মেঘনা সেতু এলাকায় পৌঁছাতে তার সময় লেগেছে সাড়ে ৪ ঘন্টা। তার মত একই অবস্থা হয়েছে বিভিন্ন পরিবহন যাত্রীদের। গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বুধবার সকালে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফিরে দেখা যায়। দাউদকান্দির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফিরোজ, শরীফ ও আলমগীর দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রায় দিনই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণে আমরা কলেজে যেতে পারি না। সামনে পরীক্ষা। অথচ যানজটের কারণে গরুত্বপূর্ণ ক্লাসগুলো করতে পারছি না।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহনের বাস চালক কামরুল ইসলাম জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে। যানজটের কবলের পড়ে হাজার হাজার পরিবহন যাত্রী চরম ভোগান্তির শিকার হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন কার্যকারী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। যানজট নিরসনে পুলিশের দায়িত্বহীনতা ও মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় ওজন স্কেল স্থাপন করাই হচ্ছে মূলত দায়ী। বুধবার সকালেও মহাসড়কের মেঘনা টোল প্লাজা এলাকা থেকে ৫৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি কাইয়ুম আলী সরদার জানান, মেঘনা সেতুর ঢালুতে গজারিয়ার জামালদী এলাকায় গতকাল রাতে হঠাৎ একটি যাত্রীবাহী বাস ও এর কিছুক্ষণ পর একটি পণ্যবাহী ট্রাকের চাকা ফেটে বিকল হয়ে পড়ে। এতে মুহূর্তের মধ্যে মহাসড়কের দু’প্রান্তে যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও গতকাল বুধবার সকালে মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ এলাকায় আরেকটি পণ্যবাহী ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে। এতে যানজট আরও দীর্ঘ হয়। কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ মহাসড়কের যানজট নিরসনে অব্যাহতভাবে কাজ করছে। আশা করি দ্রুত যানজট নিরসন করা সম্ভব হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন