শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ধর্ষণ ও নৃশংসতা বাড়ছে

| প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের রাতে নোয়াখালীর সুর্বণচরে ৪ সন্তানের জননীকে ধর্ষণ করেছিল সংঘবদ্ধ নরপিশাচেরা। সেই ঘটনায় সারাদেশে মানবিক বোধসম্পন্ন সব মানুষের মধ্যেই বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রতিক্রিয়া এখনো বয়ে চলেছে। পৈশাচিক তৎপরতা বন্ধ হয়নি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শিশু ধর্ষণ ও হত্যান্ডের ঘটনা এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশী। একের পর এক রোমহর্ষক ও ন্যক্কারজনক শিশুধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের খবর পাওয়া যাচ্ছে। পুরো সমাজের জন্য এ এক উদ্বেগজনক বাস্তবতা। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে খোদ ঢাকার ডেমরা ও গেন্ডারিয়ায় ধর্ষণের চেষ্টার পর হত্যা করা হয়েছে তিন শিশুকে। এসব শিশুর বয়েস ২ থেকে ৬ বছর এবং ধর্ষক ও হত্যাকারীরা মূলত বখাটে এবং মাদকাসক্ত। জঙ্গলের বন্য প্রানীরাও শাবকদের উপর এমন নির্মম হওয়ার কোনো নজির নেই। ফেনী শহরে এক বাড়ি থেকে ৩ তরুনীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিয়ে ও চাকুরীর প্রলোভনে সেখানে নিয়ে আটক করে মাসের পর মাস ধরে ধর্ষণ করা হচ্ছিল এসব তরুনীকে। গতকাল প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৯দিনে সারাদেশে শতাধিক হত্যাকান্ডসহ নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ ও বিব্রতকর বাস্তবতা।
যুব সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তি, অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি ও সামাজিক অবক্ষয়ের ঘটনায় দেশের নাগরিক সমাজের উদ্বেগ দীর্ঘদিনের। মাদকের বিরুদ্ধে সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের জিরো টলারেন্স নীতি, ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন ও জনসচেতনতামূলক তৎপরতাও লক্ষ্য করা গেছে। ক্রমবর্ধমান শিশু ধর্ষণ ও শিশু হত্যার ঘটনাকে অপরাধিদের মানসিকতার বিকৃতি হিসেবে গণ্য করছেন অপরাধ বিশ্লেষক ও সমাজবিজ্ঞানীরা। শিশু, বৃদ্ধ, জন্মদাত্রী মা, পিতা বা নিকটজনরাও মাদকাসক্তদের নৃশংসতার শিকার হচ্ছে। ৩রা জানুয়ারী এক রাজধানীর মিরপুরে এক মাদকাসক্ত ছেলে নিজের মাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। পক্ষান্তরে সম্পদ ও জমিজমার বিরোধ, রাজনৈতিক বিরোধ ও প্রভাব বিস্তারের ঘটনা নিয়েও রক্তাক্ত ঘটনা ও হত্যাকান্ড বেড়ে গেছে। স্থানীয় বখাটেদের উৎপাত ও ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ার কারণে লেখাপড়া ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে স্কুল-কলেজের অনেক ছাত্রী। সামাজিক অবক্ষয় শিশু-কিশোরদের মধ্যেও বিস্তার লাভ করছে এবং একশ্রেনীর শিশু-কিশোর অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। গত ৮ জানুয়ারী কিশোরগঞ্জে নিচের ক্লাসের এক শিক্ষার্থীকে নাম ধরে ডাকতে নিষেধ করায় মেহেদী নামের ১৬ বছরের কিশোর ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। এমন আরো অনেকগুলো শিশু-কিশোর হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা গত এক সপ্তাহের মধ্যে ঘটেছে।
সুবর্ণচরের গণধর্ষণ ঘটনা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক আরো বেশ কয়েকটি ঘটনায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার খবর পাওয়া যায়। গত কয়েক বছর ধরে যখন দেশে মাদকাসক্তিসহ যুব সমাজের অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রধানত: বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও ধরপাকড়েই ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। রাজনৈতিক মামলায় সময় দিতে গিয়ে পেশাদার অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ীদের মত অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজনৈতিক মামলাবাজি থেকে ফায়দা লুটতে গায়েবি মামলা ও গ্রেফতার বাণিজ্যের বিস্তার ঘটেছে। এহেন বাস্তবতায় পেশাদার অপরাধীরাও রাজনৈতিক পরিচয় ধারণ করে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করতে পারে। শিক্ষাঙ্গণ থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি সেক্টরে সামাজিক-রাজনৈতিক সহাবস্থানের পরিবেশ নস্যাৎ করে একটি একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণমূলক পরিবেশ সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে সামাজিক অবক্ষয় সর্বগ্রাসী করে তোলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেনীর সদস্যের যোগসাজশে একশ্রেনীর অপরাধী যুবক মাদক ব্যবসায়, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ছোট বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে। চাঁদা না দেয়ার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ শিক্ষার্থীকে থানায় নিয়ে নির্যাতনের খবর গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। এ ঘটনায় ওয়ারী থানার ৩ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে বলেও জানা যায়। সামাজিক-রাজনৈতিক অবক্ষয় ও নৃশংস অপরাধ প্রবণতা হঠাৎ করেই এমন অবস্থায় উপনীত হয়নি। দেশে সুশাসনের অভাব ও বিচারহীনতার কারণে দীর্ঘদিনে এমন অবস্থা তৈরী হয়েছে। সামাজিক- গণতান্ত্রিক সহাবস্থান, মানবাধিকার, সুশাসন ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সদিচ্ছার প্রতিফলন না থাকলে এ থেকে উত্তরণ প্রায় অসম্ভব। সুবর্ণচরে নারী ধর্ষণসহ ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া শিশুহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত অপরাধীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Hm sakline ১১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১০:২৩ এএম says : 0
বিচার বিভাগকে সাধিনতা দিলে এবং সৎ যোগ্য ব্যক্তিকে প্রশাষনের মধ্যে নিয়োগ দিলে তারা সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করলেই দেশ ও জাতি শান্তি পাবে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন