কপোতাক্ষ নদের জোঁয়ারের পানিতে ভেঁসে আসছে কচুরিপনা শেওলা। যা বর্তমান তালার সম্প্রতি পুনঃ খননকৃত একটি খালে স্থায়ীভাবে জমাট বাধার কারনে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে আবারও হারাতে বসেছে ফিরে পাওয়া যৌবন। একই সাথে খালটির আশ-পাশের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে চলতি ইরি-বোরো আবাদ করার ক্ষেত্রে ভরা সেচ মৌসুমে দেখা দিতে পারে পানি সঙ্কট। ফলে বছরের একটি মাত্র ফসল ধান রোপনে ব্যস্ত চাষীরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠার বিষয়টি লক্ষ্যণীয়। হাজারো ভূক্তভোগীরা রয়েছেন পানির স্বাভাবিক গতি ফিরে আসার অপেক্ষায়। অথচ কৃষি প্রধান এদেশে অত্যন্ত জন গুরুত্বপূর্ন এই বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কপোতাক্ষ নদ সংযোগ এ খালটির গতিপথ অর্থাৎ সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সরুলিয়া বাজার সংলগ্ন কোমরপুর খেয়াঘাট নামক স্থানে অবস্থিত সুইজ গেট হতে বহমান যে খালটি ৩নং সরুলিয়া এবং ২নং নগরঘাটা ইউনিয়নের বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে এঁকে বেকেঁ গিয়ে মিশেছে সাগর সংযোগ উপজেলার শালিখা নদে। এক সময়ের মরা এই খালের বিরুপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ধান চাষীদের দুঃখ দুদর্শা লাঘবে সরকারের ব্যয় বহুল খরচে মাত্র ১ বছর আগে খালটি পুনঃখনন করা হয়। শুরু হয় জোয়ার ভাটা মিটে যায় হাজার হাজার ধান, মাছসহ সকল চাষীদের পানির সমস্যা বা চাহিদা। কিন্ত বিধিবাম, গত ৮ মাস মত আগে কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানিতে ভেঁসে আসা ‘কেউটে ফেনা শেওলা’ (স্থানীয়দের ভাষায়) জমাট বাঁধার কারনে খালটি আবারও হারাতে বসেছে তার ফিরে পাওয়া যৌবন। গতিপথ থেকে শুরু করে জনেক মন্ডলের বাড়ি নামক স্থান পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার খালে এত পরিমান শেওলা যে কোন সাঁকো বা নৌকা ছাড়াই পায়ে হেঁটে এই খাল পারাপার সম্ভব। শেওলার কারনে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়া এখালের ভবিষ্যৎ চিন্তায় আসন্ন ইরি-বোরো চাষীরা রীতিমত উদিগ্ন হয়ে উঠেছেন। অথচ জনসাধারনের এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে শেওলা অপসারনের জন্য অদ্যবধি পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কোন কর্তা-ব্যক্তির সাড়া মেলেনি। উপজেলার যুগীপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল্লাহ সরদার (৪০) জানান, আজ ছয় মাস ধরে খালের শেওলাগুলোর ব্যবস্থা করার কোন লোক হলো না। খালে এত পরিমান শেওলা হয়েছে যা তুলে ফেলতে না পারলে ঐ শেওলা পচে খাল আগের মতো ভরাট হয়ে যাবে এবং পানি বিষাক্ত হয়ে যাবে।
এক্ষুনি পানির স্রোত বন্ধ হয়ে গেছে ওই খালের ভরশায় আমরা ঘেরের মাছ বা ধান চাষ করে থাকি। একই গ্রামের প্রবীণ কৃষক আফছার আলী সরদার (৬২) ক্ষোভের সাথে বলেন, আমি ও পাশবতী তৈলকূপী গ্রামের আ. রউফ সরদার কয়েক মাস আগে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যান সাহেবকে খালের শেওলার ব্যাপারে বলেছিলাম। কিন্ত তখন উনি বললেন দেখি কর্মসূচির লোকজন আগে পায় তারপর যা করলে ভাল হয় করা যাবে। একই গ্রামের আ. রাজ্জাক সরদার (৬০) জানায়, অন্য বছর এই সময় জাল-বড়শী দিয়ে মাছ ধরে নিজেরা খাওয়া ছাড়াও বাজারে বিক্রি করে সাংসারিক খরচ চলে যেত। কিন্ত এ বছর খালে এত পরিমানে ঘন শেওলা জন্মেছে যে বড়শি পর্যন্ত ফেলার জায়গা নেই। তবে ওই শেওলার মধ্যে এত বড়, বড় শোলা ইদুঁর বাসা বেঁধেছে ওই ইদুঁরে এবার ইরি ধান শেষ করে ফেলবে।
সর্বপরি, অস্তিত্ব সঙ্কটের দিকে ধাবিত হওয়া উক্ত খালের শেওলা অপসারন করা এখন সময়ের দাবি। একই সাথে চলতি ইরি-বোরো চাষীরা সহ সকল ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে পানি সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় অভিজ্ঞ মহল সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন