ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবৈধ পার্কিং দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা। মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ফোর লেন, কোনো কোনো অংশে সিক্স লেন থাকা সত্তে¡ও অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানজট হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। এছাড়া অবৈধ পার্কিংয়ের স্থানে চুরি, ছিনতাইসহ অনাকাঙ্খিত ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত।
অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশেই প্রতি মাসেই প্রাণ হারাচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ জন যাত্রী। আহত হচ্ছে প্রায় অর্ধশতাধিক। সড়কে প্রাণ ঝরে তাদের পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চুড়মার হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভবেরচর থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত মহাসড়ক দখল করে রাখছে যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং।
হাইওয়ে পুলিশের ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা চেষ্টা করি এই এলাকায় গাড়ি যেন পার্কিং না করে। সামনে আরো তৎপরতা থাকবে।
প্রতিদিন এই মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ দিয়ে ৪০ টির বেশি গন্তব্যে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ হাজার যাত্রীবাহী ও মালবাহী যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহনের বেশিরভাগই বেপরোয়া ও অধিক গতিতে চলাচল, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন, চালকের অসাবধানতা, তন্দ্রাভাব নিয়ে গাড়ি চালানো, অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো, মোবাইল ফোনে কথা বলা, সড়ককে প্রতি দুই কিলোমিটার পরপর গাড়ি ইউটার্ন করার জন্য রাখা নির্ধারিত স্থানগুলোতে পণ্যাবাহী ট্টাক ও কভারভ্যানগুলো সারিবন্ধ করে রাখায় ইউটার্নগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটছে। যার কারণে মহাসড়কের ইউটার্নগুলো এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া ১৩ কিলোমিটার রাস্তার ওপর ইউটার্নগুলোকে পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পার্কিং করে রাখা হয়েছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে মোহাম্মদ আলী এলাকা পর্যন্ত ১০৪ কিলোমিটার মহাসড়কে ৬-৭টি অবৈধ বাস ও সিএনজি স্ট্যান্ড রয়েছে। ইউটার্ন রয়েছে ২০-২৫টি। এইসব ইউটার্নগুলোতে দিনের বেলা শত শত গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কের মিডিয়ান গ্যাপ বা ইউটার্নের জন্য রাখা মহাসড়কের প্রশস্ত স্থানে ট্রাক ও কার্ভাডভ্যান পার্কিং করে রাখা হয়। এতে গাড়ি ঘুরাতে গিয়ে অনেক স্থানে দুর্ঘটনা ঘটছে। পার্কিং করা গাড়ির চালকদের সাথে কথা বললে তারা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দিনের বেলা রাজধানীতে ট্রাক-কভার্ডভ্যান ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা বাধ্য হয়েই দিনের বেলা মহাসড়কের পাশে বা ইউটার্নগুলোর ফাঁকা স্থানে গাড়ি পাকির্ং করে রাখছে। ট্রাক চালক রফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানান, রাতে চট্টগ্রাম থেকে মাল নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করলে দেখা যায় কুমিল্লা আসতেই ভোর হয়ে যায়। দিনের বেলা ঢাকা প্রবেশ বা ঢাকার উপর দিয়ে অন্য কোথাও যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই দিনের বেলা গাড়ি পার্কিং করে সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। আমারা বাধ্য হয়েই মহসড়কের যেখানে ফাঁকা পাই সেখানেই গাড়ি পার্কিং করে সময় কাটাতে বাধ্য হচ্ছি।
এ ব্যাপারে মিয়াবাজার হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাজেন্ট মো. ইব্রাহিম জানান, প্রায় ৫৫ কিলোমিটার মহাসড়ক একটি মোবাইল টিম দিয়ে তদারকি করা হয়। মহাসড়কে ও মিডিয়ান গ্যাপে পার্কিং করা যানবাহনগুলো চোখে পড়লে সরিয়ে দেয়া হয় অথবা আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। পুলিশ যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ দাঁড়াতে পারে না। চলে যাওয়ার পর আবার একই অবস্থা হয়। সওজের জায়গায় অবৈধভাবে খাবার হোটেল থাকায় ট্রাক-কার্ভাডভ্যানের এই পার্কিং।
সওজ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, একটি মহাসড়কের জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব পর মিডিয়ান ওপেনিং ও সার্ভিস লেন অত্যাবশ্যক। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নির্মাণে এ দুটি নিয়মই মানা সম্ভব হয়নি। চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী প্রতি দুই কিলোমিটার অন্তর ইউটার্ন রাখার কথা থাকলেও সড়কটির বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মার্কেট ও শিল্প-কারখানা কেন্দ্রিক স্থানগুলোয় স্থানীয়রা স্ব-উদ্যোগে ইউটার্ন করে নিয়েছে। একটি মহাসড়কে নকশা অনুযায়ী ডিভাইডার সংকোচিত করে ইউটার্ন নির্মাণ করা হলেও অনুমোদিত ইউটার্নগুলো শুধু ডিভাইডার কেটে করা হয়েছে। এতেই দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ বলেন, সড়কের অবৈধ পার্কিংয়ের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের। এই বিষয়ে তারা সচেষ্ট হলে মহাসড়ক আরো নিরাপদ হবে। এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ইউটার্নগুলোতে যাতে কোন গাড়ি পার্কিং না করে সে জন্য আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। চালকদের প্রাথমিক ভাবে সতর্কতা করাসহ মামলা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে। অভিযান আব্যাহত থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন