এক সময়ের পর্দা কাঁপানো চিত্রনায়িকা মুনমুন বেশ কয়েক বছর বিরতী দিয়ে নতুন করে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেছেন। মিষ্টি চেহারার অধিকারী মুনমুনের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছিল খ্যাতিমান নির্মাতা এহতেশামের ‘মৌমাছি’ সিনেমার মাধ্যমে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই ফ্লপ হয় তার সিনেমা। তবে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ান। নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন। মারপিটে পারদর্শী মুনমুনকে নিয়ে নির্মাতারা নির্মাণ করেন অ্যাকশন ধাঁচের সিনেমা। সাফল্য ধরা দেয় মুনমুনের হাতে। উপহার দেন একের পর এক সফল সিনেমা। ভিন্ন ঘরানার নায়িকা হিসেবে উচ্চারিত হয় তার নাম। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জে মুনমুন নির্ভর দর্শক শ্রেণি তৈরি হয়। তবে চলচ্চিত্রের দুঃসময়ের সুচনালগ্নে তাল মেলাতে না পেরে বি গ্রেডের সিনেমায়ও কাজ করতে বাধ্য হন। শিকার হয়েছেন ফিল্ম পলিটিক্সের। ফলে ইন্ডাস্ট্রি ছাড়তে বাধ্য হন। ফেরার চেষ্টা করেও থিতু হতে পারেননি পারিপার্শিক কারণে। সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন নানা কারণে। এরমধ্যে দুটো কারণে তিনি ফের আলোচনায় উঠে এসেছেন। প্রথমত; গত আড়াই বছর আগে শুরু হওয়া ‘রাগী’ সিনেমায় খলচরিত্রে অভিনয়; দ্বিতীয়ত অখন্ড অবসরে কবিতা, জ্যোতিবিদ্যা, বায়োগ্রাফিমূলক হলিউড মুভি, আর খ্যাতিমানদের মুখের স্কেচ আঁকা। যে কারো কবিতাই তার পছন্দ। এরমধ্যে বিশেষভাবে পছন্দ বাহারোজ দিপার কবিতা। বললেন, খুব বেশি নাম ডাক নেই এই কবির, সম্ভবত কবি সেটা চানও না, তারপরও তার কবিতা আমাকে খুব টানে, মনস্তাত্বিক চেতনা জাগায়। কথা কথায় জানান পেইন্টিংয়ের প্রতি ছোটবেলায় তার আগ্রহের কথা। ঘরে থরে থড়ে সাজানো রয়েছে নিজের আঁকা পেইন্টিংস। পেইন্টিংস দিয়ে ইউনিসেফের পদকও ছোটবেলায় অর্জন করেন। কিন্তু মায়ের ইচ্ছা মেয়ে নায়িকা হবে। তাই গানের কণ্ঠ আর পেইন্টিংয়ে ভালো থাকার পরও চর্চাটা বেশিদূর এগোয়নি। বাংলার মতো ইংরেজি, কুর্দি, হিন্দি ভাষায়ও পারদর্শী তিনি। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ক্যামেরার সামনে আসেন। এখন তিনি আরও পরিণত। নায়িকা থেকে খলঅভিনেত্রী বা আমাদের চলচ্চিত্রের ভাষায় ভিলেন হয়ে ফের যখন আলোচনায়, তখন নজরে পড়েন সিনেসাংবাদিক মহলের। চলে তর্ক-বিতর্ক। তবে প্রতিবাদ নেই মুনমুনের। কেবল নিজের অবস্থানের প্রতি দৃঢ়তা দেখাচ্ছেন। প্রমাণ করলেন চলচ্চিত্রের দুঃসময়ের চরম ভুলের শিকার হওয়া এই নায়িকাকে সিনিয়র সিনেসাংবাদিকদের অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। তাই ফের তাকে নিয়ে চলছে ইতিবাচক আলোচনা। উপভোগ করছেন এসব আলোচনা? উত্তরে বললেন, এটা শিল্পীর সবচেয়ে ভালো সময়। ঠিক বলে বোঝানো যাবে না। অপরাধ না করেও শিকার হয়েছি অপরাধের। কষ্ট পেয়েছি, নিরবে কেঁদেছি, কিন্তু ভেঙে পড়িনি। তবে এটাও ঠিক কখনো ভাবিনি এভাবে আবার আমাকে নিয়ে আলোচনা হবে। মুনমুন বলেন, ভালো লেগেছে এ প্রজন্মের সাংবাদিক ভাইয়েরাসহ অনেক সিনিয়র সাংবাদিক ভাইয়েরা ‘রাগী’র সেটে এসেছিলেন। এরমধ্যে দুলাল খান, রিমন মাহফুজ, তুষার আদিত্য থেকে শুরু করে ইমরুল শাহেদ ভাইয়ের মতো গুণীদের নাম আলাদা করে বলতে হয়। এসেছিলেন সিনিয়র নির্মাতারা। আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অনেকদিন পর তাদের সঙ্গে আড্ডা হয়েছে। প্রাণবন্ত আড্ডা। আসলে ভুলত্রæটি পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। ইন্ডাস্ট্রির দুঃসময়ে বসে না থেকে সবাই মিলে কাজটা করলে বা কাজের পরিবেশ তৈরি করলে হয়তো সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে। এ কারণে খল বা চরিত্র অভিনেত্রী যেটাই হোক গল্পপ্রধান সিনেমায় কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ফেব্রæয়ারিতে চলবে মিজানুর রহমান মিজানের ‘তোলপাড়’ সিনেমার কাজ সেখানেও প্রধান খলঅভিনেত্রী হিসেবে কাজ করছি। এছাড়াও কয়েকটা বড় হাউজের কাজের অফার আছে, এ নিয়ে বিস্তারিত তারাই বলবেন। ‘রাগী’, ‘তোলপাড়’ নিয়ে মুনমুন বলেন, অ্যাকশানে নতুন ডায়মেনশন আনবে সিনেমা দুটি। হলে গিয়ে দেখলেই দর্শক সেটা বুঝতে পারবেন। কারণ আমি অ্যাকশন সিনেমা করে আজকের অবস্থানে। তাই নির্মাতার ওপর আস্থা রেখেই বলব আপনারা এ সিনেমায় নতুন মুনমুনকে দেখতে পাবেন। চলচ্চিত্রে নিয়মিত হবেন? উত্তর দিলেন নিশ্চয়ই, কেন নয়? আমি শিল্পী অবশ্যই কাজটা ভালোভাবে চালিয়ে যাবো। নিজের ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। শুধু আমি কেন আমার সমসাময়িক সবারই বিশেষ করে শাবনূরের আবেদন এখনও অনেক উচ্চতায়। ও চাইলেই ফিরতে পারে এবং খুব ভালোভাবেই পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন