শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

‘টাচ অ্যান্ড গো’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি বাড়ছেই : প্রচারের অভাবে সফলতার মুখ দেখছে না নতুন টোল পদ্ধতি

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

যানজট নিরসন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতুর টোল প্লাজায় ‘টাচ অ্যান্ড গো’ পদ্ধতিতে টোল আদায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। প্রচারের অভাবে এই পদ্ধতি গাড়ির মালিক ও চালকদের মাঝে এখনো সাড়া জাগাতে পারেনি। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত অনেক চালক এই পদ্ধতি চালুর কথা আগ থেকে জানতেন না বলে জানান। চালকরা বলেন, টাচ অ্যান্ড গো পদ্ধতিটির ব্যাপারে এর আগে কখনও ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কোথাও প্রচার-প্রচারণা করতে দেখেনি বা শুনিনি। তবে যারা শুনেছেন বা ব্যবহার করছেন তারা এই পদ্ধতিটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই পদ্ধতি মেঘনা গোমতী সেতুতে পুরোপুরিভাবে চালু করা হলে দুই সেতুর টোল প্লাজায় কোন প্রকার যানজট থাকবে না।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মেঘনা সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে ‘টাচ অ্যান্ড গো’ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বড় রড় সেতুগুলোসহ দেশের সব সেতুতেই ‘টাচ অ্যান্ড গো’ পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হবে। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। কর্মকর্তারা বলেন, শুধু আগ্রহ ও বিনিয়োগই এ ধরনের উদ্যোগ সফল করার জন্য যথেষ্ট নয়, যারা টোল দেবেন তাদেরও পদ্ধতিটি সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। এরই মধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতী সেতু থেকে আদায়কৃত টোল রাজস্ব আয়ের একটি বড় খাত। সা¤প্রতিক সময়ে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা- গোমতী সেতুতে এই টোল আদায় পদ্ধতিতে নিয়মিত যানজটের বিড়ম্বনা বেড়ে যাওয়ায় আরও সহজ ও গতিশীল টোল আদায় পদ্ধতির পরিবর্তনের সিন্ধান্ত নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তথ্যমতে, দেশের সবেচেয়ে ব্যস্ততম ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল ‘টাচ এন্ড গো’ পদ্ধতিতে টোল আদায় শুরু হয়েছে। এই পদ্ধতিতে স্মার্টকার্ডে প্রিপেইড সিস্টেমে টাকা পরিশোধ করে চালকরা স্বল্পতম সময়ে টোলপ্লাজা অতিক্রম করলে যানজট অনেকটাই কমবে। তবে পরীক্ষামূলক ব্যবস্থার মূল্যায়ন করে টোল আদায়ে আরো কার্যকরভাবে স্বচ্ছতা এবং গতিশীলতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। পরিবহনের চালককরা স্মার্টকার্ড ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ‘টাচ এন্ড গো’ পদ্ধতিতে অত্যন্ত কম সময়ে টোল প্লাজার বিড়ম্বনা পার হতে পারবে পাশাপাশি টোল আদায়ে গতিশীলতা, স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা সহজ হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, একই মহাসড়কের কোথাও ম্যানুয়েল পদ্ধতি কোথাও ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করে যানজট নিরসন ও টোল আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ব্যস্ত মহাসড়কের সর্বত্র টোল আদায়ে যথাসম্ভব দ্রুত ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
দেশের সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থায় এক প্রকার নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। মালিক-চালকদের স্বেচ্ছাচার, সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তায় অব্যবস্থাপনা, যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে জনদুর্ভোগ চরমে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন গড়ে ৩২ হাজার গাড়ি চলাচল করে। এহেন বাস্তবতায় টোল আদায়ে স্বচ্ছতা, গতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে টোল আদায়ের সুযোগে এবং যান্ত্রিক ক্রটি দেখিয়ে টোল প্লাজায় অতিরিক্ত টোল আদায় এবং গাড়ীচালকদের হেনন্তা হওয়ার অভিযোগও প্রায় শোনা যায়। তাই টোল আদায় কার্যক্রমের আধুনিকায়নে এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। মেঘনা- গোমতী সেতুতে টোল আদায়ের জন্য চালু হয়েছে রিয়েল টাইম ওয়েব বেজড মনিটরিং সিস্টেম। এ পদ্ধতিতে মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এদিকে, টোল আদায়ের ডিজিটাল টাচ অ্যান্ড গোকে সবচেয়ে যুগোপযোগী হিসেবে অভিহিত করেছেন মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এ পদ্ধতি অনুসরণ করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একটি গাড়ির টোল সংগ্রহ করা যায়। আমাদের দেশে বড় সেতুগুলোর টোলপ্লাজার যানজট এড়াতে পদ্ধতিটি কার্যকর হবে। মেঘনাসহ দেশের অনেক বড় সেতুতে টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনা ও আদায়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস (সিএনএস) লিমিটেডের। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারাও বলছেন, টাচ অ্যান্ড গো পদ্ধতিতে টোল আদায় সময়সাশ্রয়ী। তবে এজন্য সেতুর উপযুক্ত অবকাঠামো থাকাটা জরুরি। টাচ অ্যান্ড গো পুরিপুরি চালু হলে সেতুর উপরে যান চলাচলের পরিমাণ বাড়বে। এজন্য ধারণক্ষমতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। মেঘনা ও গোমতী সেতুর ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে। আমরা হয়তো টাচ অ্যান্ড গো ব্যবহার করে দ্রুত যানবাহন পারাপারের ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু দুই লেনের সেতু দুটির সে অনুযায়ী সক্ষমতা নেই। এখানে টাচ অ্যান্ড গোর সুফল তেমন মিলবে না। নতুন সেতু দুটি চালু হলে এর সুফল পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্বল্প পরিসরে ‘টাচ অ্যান্ড গো’ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করেছে সোহাগ পরিবহনের কয়েকটি বাস। তবে ডিজিটাল এ সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্ট নন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। একজন কর্মকর্তা বলেন, মেঘনা সেতুর টোল আদায়ে টাচ অ্যান্ড গো চালু হয়েছিল দ্রুত সেবা দেয়ার লক্ষ্যে। কিন্তু আমরা দেখেছি ম্যানুয়ালি টোল দিতে যা সময় লাগে, টাচ অ্যান্ড গোতে সময় লাগছে তার চেয়ে বেশি। উন্নত দেশগুলোর টাচ অ্যান্ড গো আর আমাদের মেঘনা সেতুর টাচ অ্যান্ড গোর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। শুধু টোল দিতেই দেরি হচ্ছে না, কার্ড ইস্যু ও রিচার্জ করতেও বিভিন্ন ধরনের অসুবিধায় পড়েছি আমরা। এ কারণে অল্প কয়েকটি বাসে টাচ অ্যান্ড গো নেয়ার পর আমরা আর এগোইনি। পরিবহন মালিকদের দাবি, শুধু ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করলেই হবে না, সেতু দিয়ে যাতে যানবাহন নির্বিঘ্নে পার হতে পারে, পৃথক লেন ব্যবহার করতে পারে-সেজন্য গুরুত্ব দিতে হবে অবকাঠামো উন্নয়নে। দেশের সব সেতুতে পদ্ধতিটি চালুর আগে সেবার মান বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন তারা। তাহলেই কেবল ‘টাচ অ্যান্ডগো’র সুফল পাওয়া সম্ভব।
সংশ্নিষ্টরা জানান, মেঘনা ও গোমতী সেতুর ঢাকা ও চট্টগ্রাম প্রান্তে অবস্থিত টোল প্লাজায় টোল আদায় করা হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নতুন ও পুরাতন সেতু মিলিয়ে মেঘনা ও গোমতী সেতু হবে ছয় লেনের। এরপরও টোল গেটগুলোর অদক্ষ ব্যবস্থার কারণে তীব্র যানজটের যে আশঙ্কা রয়েছে, তা দূর করতে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) পদ্ধতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ পদ্ধতি চালু করতে এই মহাসড়কে নিয়মিত চলাচল গাড়িগুলোকে একটি ইলেকট্রিক ডিভাইস সংগ্রহ করতে হবে। এসব ডিভাইস আবার যে কোনো একটি ব্যাংক হিসাবের সঙ্গেও সংযুক্ত থাকবে। ফলে গাড়ি যখন টোল প্লাজা অতিক্রম করবে তখন টোল প্লাজায় স্থাপন করা ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় টোল আদায় হবে। এ পদ্ধতিতে গাড়িগুলোকে টোল প্লাজায় থামতে হবে না। যেসব গাড়ি এ পদ্ধতিতে আসতে ডিভাইস সংগ্রহ করবে সেগুলোর জন্য বিশেষ সেবা চালু থাকবে। থাকবে বিশেষ লেন। এ ছাড়া ডিভাইসযুক্ত গাড়িগুলোকে টোলের ক্ষেত্রে কিছুটা হয়তো ছাড়ও দেওয়া হতে পারে।
কর্মকর্তারা জানান, ইলেকট্রনিক্স টোল কালেকশন পদ্ধতি চালু করতে প্রকল্প মেয়াদের বাইরে বাড়তি কোনো সময় লাগবে না। তবে এর জন্য প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করতে হবে। এখন প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন