বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে অনুষ্ঠিত বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা রোববার তৃতীয় দিন পার করে। এদিন মেলা প্রাঙ্গণ দর্শনার্থী, লেখক ও প্রকাশকের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠলেও খুব একটা বইয়ের বেচাকেনা হয়নি। বিভিন্ন প্রকাশনীর কর্তা ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায় এদিন মেলায় আসা বেশিরভাগ দর্শনার্থীই বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে বইয়ের মলাট উল্টেপাল্টে দেখছেন আর নতুন নতুন বইয়ের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। জানছেন দামও। তবে দিন যাওয়ার সাথে সাথে বেচাবিক্রি বাড়বে বলে আশাবাদ তাদের।
রোববার বেলা ৩টায় মেলাপ্রাঙ্গণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মোক্ত করা হয়। এর আগে থেকেই দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বইপ্রেমিদের। বিকেল গড়াতে গড়াতে পাঠকের আনাগোনায় প্রাণের মেলা পরিণত হয় মানুষের মেলায়। এবার শুরু থেকেই লেখক প্রকাশকরা মেলায় আসছেন, আড্ডায় মেতে উঠছেন। তবে বেশির ভাগ প্রকাশকই জানালেন, বড় পরিসরে এখনো সব বই আনা হয়নি। দিন যাওয়ার সাথে সাথে পছন্দের বই মেলায় আনতে শুরু করবেন তারা। তৃতীয় দিন সরজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায় এখনও কয়েকটি প্রকাশনী তাদের স্টল গোছানোর কাজ শেষ করতে পারেনি। তবে দু’একদিনের মধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবেন বলে আশাব্যক্ত করে তারা। দূরদুরান্ত থেকে মেলায় আগতদের জন্য সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে দুটি ফুডকোর্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া হেল্পডেস্কের মাধ্যমেও পাওয়া যাচ্ছে সেবা।
ত¤্রলিপি,শব্দশৈলী,পাঞ্জেরী, সাহিত্য, অংকুর প্রকাশনীসহ কয়েকটি প্রকাশনির বিক্রয়কর্মীরা জানালেন শুরুর দিক হওয়ায় এখনও তেমন বই বিক্রি করতে পারেননি তারা। সাহিত্য প্রকাশনীর ম্যানেজার রাকিব জানান, শুরুর দিক হওয়ায় বেচাকেনা এখনও তেমন হচ্ছে না। তবে সময় বাড়তে বাড়তে বেচাকেনাও বাড়বে বলে জানান তিনি। কথা হয় মধ্যবয়সী দর্শনার্থী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের সাথে, তিনি জানান কাক্সিক্ষত বই খুঁজে পাননি তিনি। তিনি বলেন, লোকের ভিড় উৎসবের মেজাজ এনেছে। তবে অনেকেই চাহিদা মোতাবেক নতুন বই পাচ্ছেন না। প্রকাশকেরা নির্বাচিত বইগুলো একটু দেরিতে মেলায় নিয়ে আসেন, এটা ঠিক নয়। রোববার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ৩য় দিন নতুন বই এসেছে ১৩৮টি। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সুবর্ণজয়ন্তী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান। প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। বলা হয়ে থাকে উনসত্তর না হলে সত্তরের নির্বাচন হতো না আর সত্তর না এলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধও হতো না। আলোচকবৃন্দ বলেন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শহিদের স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আর্থ-সামাজিক-রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির স্বপ্নে পঞ্চাশ বছর আগে মানুষ পাকিস্তানি রাষ্ট্রকাঠামো ও সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে ছিল। আজ গণঅভ্যুত্থানের সুবর্ণজয়ন্তী এবং স্বাধীনতার আসন্ন সুবর্ণজয়ন্তীর প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে মানুষের সে স্বপ্নপূরণের দিন এসেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে- গণঅভ্যুত্থানের সুবর্ণজয়ন্তীতে এ আমাদের দৃঢ় প্রত্যাশা।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি : আজ সোমবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিনে মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নূহ-উল-আলম লেনিন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সুভাষ সিংহ রায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তোফায়েল আহমেদ এমপি। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন