অমর একুশে গ্রন্থমেলার ৩য় সপ্তাহে এসে সবচাইতে আলোচিত বইয়ের নামের তালিকাতে প্রথমে রয়েছে প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-২। আলোচিত এ বইটি গত শুক্রবার প্রথমবারের মত মেলাতে আসার পর প্রথম দিনেই বইটির সকল প্রিন্ট কপি বিক্রি হয়ে যায়। প্রচুর চাহিদাসম্পন্ন এ বইটি প্রকাশের চতুর্থ দিন থেকে বাজারেও চাহিদামাফিক পাওয়া যাচ্ছে না। বইটির প্রকাশকের সাথে কথা বলে জানা গেছে বইটি প্রকাশের প্রথম ৩দিনেই প্রায় ৮,০০০ কপি বিক্রি হয়ে গেছে। তাই অনেকেই বইটি পাচ্ছেনা। এখনও প্রতিদিন প্রিন্ট চলছে। আশা করছি, সবাই বইটি পেয়ে যাবেন।
প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ১ম পর্বটিও ছিলো গত ২ বছরের মধ্যে সবচাইতে বেশি বিক্রিত বই। বই বিক্রি সম্পর্কিত অনলাইন বিপণন সাইট রকমারী ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখা গেছে তাদের সকল সময়ের সবচাইতে বিক্রির তালিকাতে এক নাম্বারে রয়েছে এ বইটি। রকমারী একজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে ১ম পর্ব বইটি তারা এখন পযন্ত ১লাখ কপি বিক্রি করেছেন।
আরও পড়ুন: নাস্তিকদের যুক্তিখণ্ডনে ইসলামি মতবাদ বিষয়ক ১০টি সেরা বই
বইটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্যাপক আলোচনা ছিলো। নতুন পর্বটি নিয়েও চলছে ব্যাপক আলোচনা। প্রথম পর্বের জনপ্রিয়তার কারনে দ্বিতীয় পর্বটি নিয়েও প্রকাশের আগে থেকেই বই পড়ুয়াদের সোশ্যাল মিডিয়া কমিউনিটিতে চলছিলো ব্যাপক আলোচনা। প্রকাশের প্রথম ৩দিনেই বাজারে এত বেশি বিক্রি নিয়ে বইপাঠকদের গ্রপগুলোতে রীতিমত চলছে আলোচনার ঝড়।
বইবিপনন প্রতিষ্ঠানগুলো ২য় পর্ব বইটি বিক্রি নিয়ে ব্যাপক ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে এবং অনলাইনে বইটি কিনতে উৎসাহিত করতে বইটি অর্ডার করলেই আকর্ষনীয় গিফটের অফার দিচ্ছে।
বইবাজার.কম এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিমের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-২ বইটি বইবাজার.কম হতে কেউ বিকাশে পেমেন্ট করে কিনলে ৪২% ডিসকাউন্টে বইটি কিনতে পারবে এবং ৫০০জন ভাগ্যবান উপহার হিসেবে পাবে আকর্ষনীয় টি-শার্ট।
বইবাজার.কম হতে বইটি অনলাইন অর্ডার লিংকঃ
- প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-১: https://bit.ly/2BzZqTe
- প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-২: http://bit.ly/2Ec0luL
বইটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে আলোচনার কয়েকটি অংশ এখানে পাঠকদের জন্য শেয়ার করছি।
সাইফুল লেখেন, ইসলাম নিয়ে নাস্তিকদের উত্থাপিত আপত্তিগুলোর জবাব দেয়ার কয়েকটা সমস্যা আছে। তারা কোনো একক অর্গানাইজড ধর্মের অনুসারী না। তাই দেখা গেলো ইসলামের একটা বিষয় নিয়েই দুজন নাস্তিকের দুইরকম প্রশ্ন। দুজন মুসলিম তাদের জ্ঞানের ভিত্তিতে দুটি প্রশ্নের চার রকম জবাব দেয়। একজন আবার আরেকজনের দেয়া উত্তরে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয় না।
আবার উত্থাপিত প্রশ্ন যে যৌক্তিক হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। দেখা গেলো নাস্তিকের এমন একটা বিষয়ে আপত্তি যাকে সে ইসলামের বিধান বলে জানে কিন্তু আদতে তা ইসলামে নেই। এখন ওই প্রশ্ন দিয়ে সে ব্লগ আর বই লিখে একাকার করে ফেলেছে। এখন অযৌক্তিক প্রশ্ন বলে তো আর ফেলে দেয়া যায় না, জবাব তো দেয়াই লাগে। এরকম অবস্থায় কতগুলো স্ট্যান্ডার্ড প্রশ্নের স্ট্যান্ডার্ড জবাব সুচারুভাবে কম্পাইল করাটা অবশ্যই একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ। আরিফ আজাদ ভাইয়ের লেখা ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ এই পরিসরে এক প্রশংসনীয় ও সময়োপযোগী সংযোজন।
সাজ্জাদ হোসাইন নামে একজন লিখেন, বইটা আস্তিকতার পক্ষে না, ইসলামের পক্ষে। এখন স্বভাবতই সামনে এসে যায় আয়াত আর হাদীস বাদ দিয়ে যুক্তি-বিজ্ঞান-দর্শন দিয়ে ইসলাম প্রচার করা কতটা জায়েয। এখানে বিষয় হলো যতক্ষণ যুক্তি-বিজ্ঞান-দর্শনকে কুরআন-হাদীসের অধীনে রেখে কাজ করা হচ্ছে, ততক্ষণ এটা কোনো সমস্যা না। ইবনুল জাওযি (রহঃ) তাঁর “তালবীসু ইবলীস” গ্রন্থে সেসময়কার অনেক ভ্রান্ত দার্শনিক মতবাদকে রিফিউট করেছেন আয়াত ও হাদীসের ব্যবহার ছাড়াই।
একটা জিনিস যত মিথ্যা ও অযৌক্তিকই হোক না কেন, সেটা বারবার বলতে থাকলে চিন্তার জগতে সেটা একটা বিকৃতি আনেই। একজন ব্যক্তি হয়তো অজাচার বা সমকামিতার মতো বিষয়গুলো মাথায়ই আনতে পারে না। কিন্তু মুক্তবুদ্ধি চর্চার নাম দিয়ে তার সামনে এগুলো বারবার আলোচনা করা হলো। তাকে যদি সেসব বিশ্বাস করতে চাপ প্রয়োগ না-ও করা হয়, ওই বারবার বলাটাই তার মনে একটা প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে নিজের বাবা-মা বা সমলিঙ্গের বন্ধুর সাথে চলাফেরা করতে গিয়ে এসব চিন্তা তার মাথায় অস্বস্তিকর একটা স্ট্রাগলের জন্ম দেয়।
এই চিন্তার ফীল্ডটা দখল করার কাজটা নাস্তিকরা খুব ভালো মতো পারে। তাদের মিথ্যা বিশ্বাসগুলোকেই বারবার নানাভাবে উপস্থাপন করে মন-মগজে এমন একটা ট্রমা তৈরি করে দেয়।
মুসলিমদের মনে এসব ট্রমা সৃষ্টি হলেও তাদের একটা আশ্রয় আছে। প্রতিটা সেজদার সাথে তারা সেসব ট্রমা মাটিতে ফেলে দিতে পারে। কিন্তু অবিশ্বাসীদের ওই আস্থার জায়গাটা নেই। সত্যগ্রহণে প্রস্তুত বুদ্ধিমান অবিশ্বাসীর কথা আলাদা, মূলত এরা এ বই থেকে উপকৃতই হবে। কিন্তু গোঁয়ার অবিশ্বাসীর সামনে একইভাবে আপনি আপনার সত্য বিশ্বাসগুলো তুলে ধরুন, তাদের মিথ্যা যুক্তিগুলো তুলাধুনা করুন, দেখবেন এরা কেমন কুঁকড়ে ছোট্ট হয়ে যায়। অন্ধকার, আশাহীন, স্যাঁতস্যাঁতে, বদ্ধ একটা পৃথিবীতে তারা দেয়ালে মাথা ঠুকে নিরন্তর মারা যেতে থাকে। ভ্লাদিমির-এস্ট্রাগনদের মতো কোনো গডো’র আগমনের আশায় বসেও থাকতে পারে না, মরেও যেতে পারে না। এই বইটাতে সেই কাজগুলো খুব সুচারুভাবে করা হয়েছে।
খালেদ আহমেদ লিখেন, লেখক সাজিদ চরিত্রকে দিয়ে একটা কথা একাধিক জায়গায় পরিষ্কার করে বলিয়ে নিয়েছেন যে কুরআন বিজ্ঞানের বই না। বিজ্ঞানের সকল খুঁটিনাটি নির্ভুলভাবে উপস্থাপন করা কুরআনের উদ্দেশ্য না। কিন্তু বিজ্ঞানমনস্কদের মনোযোগ কাড়ার জন্য যথেষ্ট এলিমেন্টস এতে আছে। কুরআনের সব আয়াত থেকে জোর করে বিজ্ঞানের সব তত্ত্ব খুঁজে বের করার যে পরাজিত মানসিকতা অনেকের মাঝে আছে, তা থেকে লেখক মুক্ত।
লেখকের আরেকটি অসাধারণ দিক হলো মুক্তিযুদ্ধের কনসেপ্টের ব্যবহার। বইয়ের যে টার্গেট অডিয়েন্স, তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ খুব গুরুতর একটা ইস্যু। এই কনসেপ্টের সাথে তুলনা করে বোঝালে অনেক বিষয়ই আমরা বাঙালিরা সহজে বুঝতে পারি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন