ভাষা আন্দোলনের প্রতি অবজ্ঞা, বাংলা ভাষা আইন অমান্য ও উচ্চ আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে কুমিল্লায় ইংরেজিতে লেখা সাইনবোর্ডে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে শহরের রাজপথ, বিপণিবিতান, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এমনকি বাংলা শব্দকে ইংরেজি হরফে তুলে ধরার অসংখ্য নজির আছে শহরজুড়ে।
কুমিল্লা শহরে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে শুধুই ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও তা প্রতিপালন করা হচ্ছে না। অবশ্য এ নিয়ে কুমিল্লা সিটি করর্পোরেশন (কুসিক) গত তিন বছর ধরে ইংরেজিতে লেখা সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার ইত্যাদি অপসারণের উদ্যোগের কথা বলা হলেও তা কার্যত সিদ্ধান্তহীন অবস্থাতেই আছে। কুমিল্লায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষণীয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে বাংলা অক্ষরের কোনো ছোঁয়া নেই। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে বাংলা বানানের ভুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের দায় থাকলেও তারা এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
কুমিল্লার বেশ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, বেসরকারি ভবন ও বিপণি বিতানগুলোর সাইনবোর্ডে অ-রাষ্ট্রভাষায় পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। ইংরেজি বর্ণে, ইংরেজি বর্ণের বাংলা রূপে, অথবা বাংলা ও ইংরেজি মিশ্র ভাষায় লেখা এসব সাইনবোর্ড ব্যবহারের জন্য কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। কুমিল্লার কান্দিরপাড় চত্ত¡র, ঝাউতলা, বাদুরতলা, পুলিশ লাইন সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাংলা যেন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভাষাসৈনিক আলী তাহের মজুমদার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ফেব্রæয়ারি মাস আত্মপ্রত্যয়ের মাস। এই মাস আত্মজিজ্ঞাসারও মাস। এই মাসে মায়ের ভাষা রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছিলাম। এই কথাটা মনে রেখে বাংলা ভাষার চর্চা করা উচিত। তাই সবাই বিশুদ্ধ ভাষার চর্চা করুন। এজন্য মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য দোকানপাট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতে সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার অভ্যাস গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে তিনি।
কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন যানবাহন, সাইনবোর্ড ও স্থাপনায় ভুল বাংলা ব্যবহারের অসংখ্য নজির রয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাংলার শুদ্ধ ব্যবহার কিছুটা গুরুত্ব পেলেও মাঠ পর্যায়ে অবস্থা বেশ খারাপ। কুমিল্লার শানসগাছা থেকে কান্দিরপাড় সড়কের দুই দিকে তাকালে চোখে পড়বে অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের ইংরেজিতে লিখা সাইনবোর্ড। একইপথে শহরের বাদুরতলা এলাকায় কিউ টাওয়ারে দিকে তাকালে দেখা যাবে অসংখ্য সাইনবোর্ড কিন্তু একটির ভাষাও বাংলা নয়। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় সিটি করর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরবাসীকে সতর্ক করা হলেও তেমন কোনো সাড়া মেলেনি। এমনকি ভাষার মাস ফেব্রæয়ারিতেও প্রতিষ্ঠানের মালিকরা উদাসীন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার সময় সাইনবোর্ড বাংলায় লেখার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া থাকে। তারপরও অনেকে সেটা অনুসরণ করে না। এ ব্যাপারে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, এমনিতেই একটা নির্দেশনা আছে যে সাইনবোর্ড বাংলায় লিখতে হবে এবং পরবর্তীতে ইংরেজিতে লিখতে হবে। আমাদের যেগুলো ট্রেড লাইসেন্স আছে, সেগুলোতে আমরা এগুলো বিচার করি। এখন অনেক ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি আছে তারা আবার ইংলিশকে হাইলাইট করে, এদের নিয়েই সমস্যা। আমাদের ট্রেড লাইসেন্সটা যদি ইংলিশে থাকে সেটা বাংলায় করে দেই। এটাই আমাদের মূল হাতিয়ার। এদের নিয়ে সামনে কোনো পরিকল্পনা আছে কী না জানতে চাইলে মেয়র বলেন, পরিকল্পনা অবশ্যই আছে। কিন্তু সময়, সুযোগ, পরিস্থিতি সবকিছু বিচার করেই তো কাজ করতে হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন