রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় ফুটপাতের হকার উচ্ছেদ হলেও ওয়ারী থানা এলাকায় রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে স্থায়ী দোকান। এতে করে যানবাহন চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে পুরান ঢাকার ভয়াবহ যানজটের অন্যতম উৎস ওয়ারী থানা এলাকা। এখানকার টিপু সুলতান রোড, লালমোহন সাহা স্ট্রিট, লালমনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, নবাব স্ট্রিট, র্যাংকিং স্ট্রিট, পোস্ট অফিস গলি, রাজধানী মার্কেটের সামনের রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে শত শত দোকান প্রতিনিয়ত যানবাহন চলাচলে বাধার সৃষ্টি করছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ।
সরেজমিন ওয়ারী থানা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ধোলাইখালের পুরাতন গাড়ির যন্ত্রাংশ ও লোহার ব্যবসার অর্ধেক অংশ ওয়ারী থানা এলাকাজুড়ে। ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে আছে পুরাতন গাড়ির যন্ত্রাংশ ও লোহা ব্যবসায়ীরা। রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে তারা সাজিয়ে রেখেছে লোহার সামগ্রী ও গাড়ির যন্ত্রাংশ। ফুটপাতের পাশাপাশি রাস্তাও দখল করা হয়েছে। তাতে যানবাহন চলতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া লালমনির স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, নবাব স্ট্রিট, র্যাংকিং স্ট্রিট, পোস্ট অফিস গলি, লিভার ডেল স্কুল,পুরান পুলিশ ফাঁড়ি, আফসার প্রোপ্রার্টিজ এলাকায় রাস্তার অর্ধেক অংশজুড়ে রকমারি পণ্যের দোকান। ফলমূল, কাঁচা তরি-তরকারি, শাকসবজি, মাছ- গোশত, কাপড়-চোপড় সবই পাওয়া যায় ওয়ারীর রাস্তা ও ফুটপাতে। লালমনির স্ট্রিটে আফসার প্রোপ্রার্টিজের মোড়ের একজন দোকানদার জানান, রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে দোকান করার জন্য পুলিশকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। হকারদের একটি এসোসিয়েশনের মাধ্যমে এই চাঁদা দিতে হয়। বড় দোকান প্রতিদিন ২১০ টাকা, ছোট দোকানের জন্য প্রতিদিন ১১০ টাকা এবং ভাসমান (ঠেলাগাড়ি অথবা ভ্যান) দোকানের জন্য ৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। আরেক দোকানদার জানান, এই এলাকায় প্রায় আড়াইশ’ দোকান আছে। সে হিসাবে দোকানগুলো থেকে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা চাঁদা ওঠে। চাঁদার বাড়তি ১০ টাকা পায় লাইনম্যানরা।
এদিকে টিপু সুলতান রোডে বৈধ অবৈধ মিলিয়ে আছে ছোট বড় দেড় শতাধিক কারখানা। যেমন নর্দান ইঞ্জিনিয়ারিং, মক্কা ইঞ্জিনিয়ারিং, সাওার ইঞ্জিনিয়ারিং, সাদ ইন্টারন্যাশনাল, বিক্রমপুর ওয়েল্ডিং, সুন্দর মোল্ডিং ওয়ার্কস ইত্যাদি। এসব কারখানা বা দোকানের মালামাল রাখা হয় ফুটপাত ও রাস্তার উপর। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, রাস্তা দখল করে দোকানদারি করার জন্য পুলিশকে মাসোহারা হিসাবে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। থানার ক্যাশিয়ার এসে টাকা তুলে নিয়ে যায়। টাকা না দিলে পুলিশ ঝামেলা করে। দোকানের মালামাল নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাল মোহন সাহা স্ট্রিটের একজন ব্যবসায়ী জানান, টাকা না দিলে পুলিশ প্রসিকিউশন বা ওয়ারেন্ট দিয়ে ধরে নিয়ে যায়। তাই ঝামেলা এড়াতে ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর এই টাকা দিয়ে আসছে। তিনি জানান, ঈদ আসলে এই টাকার অঙ্ক দ্বিগুণ হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওয়ারী থানা এলাকায় পুলিশের তৎপরতা নেই বললেই চলে। পুলিশ তৎপর হলে দিনের বেলায় যে ভয়াবহ যানজট হয় তা এড়ানো যেতো। রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে যে ব্যবসা চলছে তাতে পুলিশের লাভ হলেও সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে। ওয়ারী এলাকার এক বাসিন্দা প্রশ্ন রেখে বলেন, যেখানে গুলিস্তানকে হকারমুক্ত করা হয়েছে সেখানে ওয়ারীর মতো অভিজাত এলাকার রাস্তা ও ফুটপাত হকারদের দখলে থাকে কিভাবে? তিনি বলেন, রাজধানী মার্কেটের সামনের রাস্তা দিয়ে হাঁটার মতো অবস্থা নেই। মার্কেটের বাইরে আরেক মার্কেট জমে থাকে। পুলিশ তাহলে কী করে?
জানা গেছে, ওয়ারী জোনের ডিসির নির্দেশের পরেও ওয়ারী এলাকার রাস্তা ও ফুটপাত হকারমুক্ত করা হয়নি। বরং দিন যতো যাচ্ছে হকারের সংখ্যা ততোই বাড়ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন