মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফুটপাত হকারদের দখলে : গুলিস্তানে দখলদারিত্ব

হানিফ ফ্লাইওভারের নামার মুখ বন্ধ যানজটের পড়ছে ফ্লাইওভারের উপরে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের গুলিস্তান অংশ থেকে এভাবেই রাস্তার সিংহভাগ দখল হয়ে গেছে। এতে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে ফ্লাইওভারের উপরেও। গতকাল দুপুরের ছবি -ইকবাল হাসান নান্টু


করোনার মধ্যেও রাজধানীর গুলিস্তানে থেমে নেই দখলদারিত্ব। রাস্তা, ফুটপাত, সরকারি জায়গা, মার্কেট সবই একে একে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে চলছে হকারদের ব্যবসা। সিংহভাগ রাস্তা বেদখল হওয়ায় যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। বিশেষ করে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নামার মুখে এলোমেলোভাবে গাড়ি ঘোরানোর কারণে পুরো এলাকায় যানজটে আটকে থাকছে শত শত যানবাহন। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে ফ্লাইওভারের ওপরে। ব্যস্ত সময়ে ফ্লাইওভারের ওপরের যানজট গিয়ে ঠেকছে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পর্যন্ত। একই কারণে সৃষ্ট যানজট গুলিস্তান হয়ে ফুলবাড়ীয়া, নবাবপুর, পল্টন, দৈনিক বাংলা, প্রেসক্লাব, কাকরাইলসহ বিশাল এলাকাজুড়ে ভোগান্তির সৃষ্টি করছে প্রতিনিয়ত।

গুলিস্তানে দখদারিত্বের নেপথ্যে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি। গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকার রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে বসে কমপক্ষে ৮ হাজার হকার। এসব হকারদের কাছে থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলে পুলিশের নিয়োগকৃত লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজরা। এদের হাতে গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকার ফুটপাত থেকে প্রতিদিন চাঁদা উঠছে ২০ লাখ টাকার বেশি। এই টাকার ভাগ স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, মাস্তান, পুলিশ, সোর্স সবাই পায়। এর বাইরে গুলিস্তানে সরকারি মার্কেট দখল করেও চলে চাঁদাবাজি। সরকারি জায়গা জমি দখল করে সেখানে দোকার তৈরি করে সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গুলিস্তান রেলওয়ে মার্কেটের পাশে বিদ্যুৎ অফিসের দেয়াল ঘেঁষে ৮টি দোকান তোলা হচ্ছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি দোকান ২০ লাখ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে। ৮টি দোকান মিলে টাকার পরিমাণ দেড় কোটি টাকার ওপরে। গত বুধবার রাতে এই কোটি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’গ্রæপের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয়রা জানান, বিদ্যুতের অফিসের জায়গা দখল করে দোকান তৈরী করছে রতন ও মনু গ্রæপ। এর মধ্যে রতন ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এই গ্রæপের নেতৃত্বে আছে হাজী রফিক, আব্দুর রব ও হাসান। দেড় কোটি টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে গত বুধবার রাতে এই দুই গ্রæপের মধ্যে মারামারির ঘটনা নিয়ে গুলিস্তান এলাকায় তোলপাড় হলেও প্রশাসন এ বিষয়ে কিছুই জানে না। এমনকি সিটি করপোরেশনও এ ব্যাপারে এখনও অন্ধকারে।

গুলিস্তানের সার্বিক পরিস্থিতি পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, দুর্বৃত্তায়নের জন্য আমরা সবকিছুতেই সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছি। গুলিস্তানের ফুটপাত বা রাস্তা দখল নতুন কোনো ঘটনা নয়। হকারদের উচ্ছেদ করা না গেলে এ সমস্যার সমাধান হবে না। এজন্য সিটি করপোরেশনকে উদ্যোগ নিতে হবে। শহরের বড় রাস্তার পাশে যেখানে জায়গা আছে, সেখানে হকারদের সীমিত জায়গা নিয়ে বসার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, গুলিস্তানের মতো ব্যস্ত এলাকায় কোনোমতেই যাতে হকাররা বসতে না পারেÑ সেজন্য দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যবস্থা নিলেই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

সরেজমিনে গুলিস্তান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নেমে গাড়িগুলো সামনে বা ডানে যেতে গেলেই বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার কারণে কিছু কিছু গাড়ি ফ্লাইওভারের টোল দিয়ে ডান পাশে দাঁড়িয়ে থাকছে। এতে পেছনের গাড়ি আর এগুতে পারছে না। আবার কিছু কিছু গাড়ি ডান দিকে মোড় নিতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ করছে। এতেও পেছনে গাড়িগুলো আটকে থাকছে। আর যে সব গাড়ি সামনের দিকে যাচ্ছে সেগুলো সুন্দরবন স্কোয়ারের সামনে চৌরাস্তায় গিয়ে যানজটের কবলে পড়ছে। গুরুত্বপূর্ণ ওই চৌরাস্তা থেকে একেবারে গুলিস্তান স্কোয়ার (পুরাতন সিনেমা হলের মোড়) পর্যন্ত ফুটপাত ও রাস্তার সিংহভাগ দখল করে রেখেছে হকাররা। রাস্তার চার ভাগের একভাগ খালি অংশ দিয়ে কোনোমতে যানবাহন চলাচল করছে। এতে করে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে ফ্লাইওভারের ওপরে এবং পল্টন, প্রেসক্লাব, দৈনিক বাংলা, কাকরাইল, নবাবপুর পর্যন্ত।

ভুক্তভোগিরা জানান, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নামার মুখে অব্যবস্থাপনা ও ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতির কারণে প্রতিদিনই যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারে ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ। কখনও কখনও এ যানজটের কবলে পড়ে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত ফ্লাইওভারের উপরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

এদিকে, করোনার মধ্যেও গেল ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে গুলিস্তানের ফুটপাতের ব্যবসা। হকাররা জানান, ঈদের আগেই ফুটপাত জমেছে,বেড়েছে চাঁদার পরিমাণও। সেই থেকে হকারদের কাছে থেকে স্থানভেদে দেড়শ’ থেকে তিনশ’ টাকা করে চাঁদা তোলা হচ্ছে। লাইনম্যান নামধারী চিহ্নিত চাঁদাবাজরাই এই চাঁদা তুলছে প্রতিদিন। আর চাঁদাবাজদের পক্ষে পুলিশের সাথে এ কাজে লিঁয়াজো করে চলেছে ক্যাশিয়ার নামধারী দুলাল, আবুল হাশেম কবির ও দুই সহোদর আমীন এবং শাহীন।

হকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গুলিস্তান ও এর আশপাশের এলাকায় এখন প্রায় ৮ হাজার হকার ব্যবসা করছে। এসব হকারদের কাছে থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলা হচ্ছে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা। ঈদে এই চাঁদার পরিমাণ ছিল আরও বেশি। হকারদের ভাষ্য, পুলিশই তাদেরকে রাস্তা বা ফুটপাত দখল করার সুযোগ করে দেয়। পুলিশকে না জানিয়ে কেউ এক ইঞ্চি জায়গাও দখলে রাখতে পারে না। রাস্তা বা ফুটপাত দখলের জন্য প্রথমে লাইনম্যানদের সাথে চুক্তি করতে হয়। সব কিছু ঠিকঠাক হলে লাইনম্যানরাই এসে জায়গা করে হকারদের বসিয়ে দেয়। এর ব্যতিক্রম হলে প্রথমে লাইনম্যানরা সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হকারদের তুলে দেয়। লুটপাট, ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, হকারদেরকে বেচাবিক্রির সুবিধা প্রদানের জন্য পুলিশ প্রয়োজনে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। তাতে যানজটের সৃষ্টি হয় বেশ কয়েকটি মোড়ে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুলিস্তানে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে রাখা হকারদের কাছে থেকে চাঁদা তুলছে পুরাতন চাঁদাবাজারাই। এদের মধ্যে সুন্দরবন স্কোয়ারের সামনের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলেÑ বাবুল, রজ্জব, খোরশেদ, বড় মিয়া, কালা নবী, আব্দুর রব, আক্তার, জাহাঙ্গীর, জুয়াই সালাম, কাদের, আলী মিয়া, লম্বা হারুন, শ্যালক দেলু। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলেÑ কাদের, কোটন, চাটগাইয়্যা হারুন, বাসসের সামনে থেকে চাঁদা তোলে আবুল হাশেম কবীর, জিপিওর সামনে থেকে চাঁদা তোলে দাড়িওয়ালা সালাম, কাদের। রমনা ভবনের সামনে থেকে চাঁদা তোলে মনির, রেলওয়ে মার্কেটে লিপু ও সুলতান। গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলে বিমল, টিএন্ডটির সামনে থেকে ঘাউরা বাবুল ও লম্বা শাজাহান। হকাররা জানান, এদের মধ্যে বেশিরভাগই সাবেক মেয়রের আমলে চাঁদাবাজি মামলার আসামি। এরা ফুটপাত থেকে টাকা তুলে পুলিশের ক্যাশিয়ার দুলাল ও আবুল হাশেম কবীরের কাছে দেয়। ওই দু’জন পুলিশকে ম্যানেজ করে। এছাড়া সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের হয়ে আমীন ও শাহীন ক্যাশিয়ার হিসাবে কাজ করে। এরা দু’জনও বহু টাকার মালিক।

চাঁদাবাজি প্রসঙ্গ বাংলাদেশ হকার্স লীগ ও হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, একনেকের সভায় হকারদের পুনর্বাসনের জন্য যে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে সেটা বাস্তবায়নের মাধ্যমে হকারদের পুনর্বাসন করলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। তিনি বলেন, আমি বহুদিন ধরেই হকারদের কাছে থেকে চাঁদা আদায়কারী লাইনম্যাননামধারী চাঁদাবাজদের গ্রেফতারের দাবি করে আসছি।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Mosarrof Hossan ১৪ আগস্ট, ২০২০, ৪:০৮ এএম says : 0
হকারদের রাস্তা থেকে উচ্চেদ করে আলাদা একটি জায়গায় বসতে দেওয়া হউক
Total Reply(0)
Abdullaha Al Mamun ১৪ আগস্ট, ২০২০, ৪:০৮ এএম says : 0
এতো পুরাতন সুর। নতুন কিছু শুনালে ভালো হয়।
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ১৪ আগস্ট, ২০২০, ৪:০৯ এএম says : 0
আবারও তাদের উচ্ছেদ করে যাতে আর বসতে না পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হোক্
Total Reply(0)
MD Jewel ১৪ আগস্ট, ২০২০, ৪:১০ এএম says : 0
Very good
Total Reply(0)
Rayhan Choudury ১৪ আগস্ট, ২০২০, ৪:১০ এএম says : 0
একটি ভাল রিপোর্ট।।
Total Reply(0)
Mehedi Hasan ১৪ আগস্ট, ২০২০, ৪:১১ এএম says : 0
গুলিস্তান গেলে বুঝবেন হাটা কত সহজ!! বাসের চিপা ছারা কোন রাস্তা নাই গাড়ি আর হকারের দখলে সব
Total Reply(0)
সিপাহীর বজ্রকলম ১৪ আগস্ট, ২০২০, ৪:১২ এএম says : 0
ঢাকার মেইন রোড থেকে দোকান গুলো না সরাতে পারলে ফুটপাতের দোকান কখনওই সরানো সম্ভব নয়! কেননা মেইন রোডের দোকানের মালিক আর ফুটপাতের দোকানের মালিক একে অপরের তালতো ভাই! প্রতিটি ফুটপাতের দোকানদারদের থেকে তারা প্রতিদিন চাদা পায় তাছাড়া আমাদের দেশের সোনার পুলিশদের পেট চলবে কি করে যদি সবকিছু শ্রিংখলার মধ্যে চলে আসে? এই ফুটপাতের ব্যাবসা আছে বলেই তো বউঝি নিয়ে ঢাকাশহরে থাকতে পারছে! বেতনের টাকা দিয়ে এরা কি চলতে পারবে? তাই ঢাকা শহরের জানজোট কমানোর চিন্তা না করে সবকিছু এডযাষ্ট করতে শিখুন!
Total Reply(0)
Md Saidul Sharif ১৪ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৩ এএম says : 0
যারা ফেরি করে ঔষধ বিক্রি করে তাদের বিরুদ্বেও ব্যাবস্থা নেয়া উচিত।
Total Reply(0)
Zakir Hossain ১৪ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৩ এএম says : 0
We are helpless regarding hawkers their mentality against
Total Reply(0)
Sekh Forid ১৪ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৪ এএম says : 0
ফুটপথ জনগনের চলাচলের জন্য, দখলের জন্য নয়, ওদের চিরতরে উচ্ছেদ করা উচিত,।
Total Reply(0)
Nazmul Shahin ১৪ আগস্ট, ২০২০, ৪:১৪ এএম says : 0
আমরা এ দেশের স্বচেতন নাগরিক।কথা কানে যায় না।পুলিশী তৎপরতা সব সময় থাকতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন