মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ১৪নং কুলিয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সঙ্কট, শিক্ষকদের পাঠদানে অবহেলাসহ নানা অনিয়ম চলছে। কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না এসব অনিয়ম। তাছাড়া দীর্ঘ ৯ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদটি রয়েছে শূন্য। এতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাসে এসে শিক্ষক স্বল্পতা ও শিক্ষকদের নানা অনিয়মের কারণে ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, ১৪নং কুলিয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও উন্নয়ন আর আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষাঙ্গন হিসেবে এখনো অনেকটা পিছিয়ে এ বিদ্যালয়টি। উপজেলা সদর থেকে স্কুলটির অবস্থান দূরে বিধায় স্কুলটিতে সহসাই পা পড়ে না সরকারি কোন কর্মকর্তার। ফলে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক এবং একজন সহকারী শিক্ষক ছাড়া স্কুলটি পরিচালনা করা হলেও সেখানে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ১৪নং কুলিয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। প্রধান শিক্ষক না থাকায় দীর্ঘ ৯ বছর যাবৎ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষক আছমাউল হোসনা। দুইজন শিক্ষকের অভাবে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার মান দিন দিন নিম্নগামী হয়ে পড়ছে। এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীরা জানায়, শিক্ষক সঙ্কটের পাশাপাশি শিক্ষকদের পাঠদানে অবহেলা ও শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। শিক্ষক আছমাউল হোসনা, আফরোজা বেগম ও জাহিদ হাসানের বাড়ি স্কুলের অত্যন্ত নিকটে হলেও তারা সঠিক সময়ে স্কুলে আসেন না। প্রতিদিনই তারা সাড়ে ১০টা থেকে ১১টায় স্কুলে আসেন। স্কুলে ঠিকমতো ক্লাসও হচ্ছে না। শিক্ষকরা ক্লাসের পাঠদান ফাঁকি দিয়ে অফিসে বসে গল্প করে। দুপুরের মধ্যে স্কুল ছুটি হয়ে যায়। ফলে লেখাপড়া ঠিকমতো হচ্ছে না। কুলিয়াদী এলাকার রহিম মিয়া, রতন, জুলেখা বেগম, রুনা বেগম, আরিফুল ইসলাম, সামিরা রিফাত, মোসলেমা বেগম, জেসমিন, নারগিছ, আমেনা, আনোয়ারা বেগম, হেলেনা বেগম, রহিমা আক্তার, মাসুদা বেগম, বেবী আক্তারসহ অনেকেই জানান, ১৪নং কুলিয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অবহেলার কারণে ব্যাহত হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া। শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের লেখা পড়ার কোন উন্নতি সাধন নেই। সরকারি নিয়মে শিক্ষকরা ৯টা ৩০ মিনিটে স্কুলে উপস্থিত থাকার কথা কিন্তু তারা ১০টা সাড়ে ১১টায় উপস্থিত হন এবং স্কুল ছুটি দেন ২ টায়। স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের পিটি পর্যন্ত করানো হয় না। এমনকি জাতীয় সংগীত পর্যন্ত গাওয়ানো হয় না। শুধু তাই নয়, শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার প্রতি কোন রকম গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তারা শুধু বেতন ভাতা হালালের জন্য মাঝে মাঝে স্কুলে আসে আর যায়। ছাত্রছাত্রীদের সঠিক জ্ঞানদানের প্রয়োজনটা তারা ঠিকমতো অনুধাবন করতে পারেন না বলে অনেক অভিভাবক মনে করেন। কয়েকজন অভিভাবক জানান, আমাদের বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়ানোর জন্য মাস্টাররা যখন চাপ সৃষ্টি করে তখন আমরা না খেয়েও টাকা জোগাড় করে দেই। তারা এগুলো সঠিকভাবে না পড়িয়ে টাকাটা নিয়ে যায়। আমরা আমাদের বাচ্চাদের লেখাপড়া সঠিকভাবে হবে এটাই আশা করি। কিন্তু তার বিপরীত হচ্ছে। এভাবে যদি আমাদের বাচ্চাদের লেখাপড়া করানো হয় তাহলে তো তাদের মাঠে গরু চরাতে দেয়াটাই ভালো। শিক্ষকরা সারাদিনে দুই একটা ক্লাস করিয়ে অফিসে বসে আলাপ-আলোচনা করেন। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস রেখে অন্যত্র গিয়ে স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করে। কিন্তু শিক্ষকরা এর কোনো গুরুত্ব বা লক্ষ্য রাখেন না। এরকম যদি লেখাপড়ার অনিয়ম চলে তাহলে আমাদের বাচ্চারা কোথায় গিয়ে কি শিখবে। তাই আমাদের আবদার এর একটা বিহিত করা। বিশেষ করে স্কুলে শিক্ষকরা যাতে আমাদের বাচ্চাদের ভালো করে লেখাপড়া করান সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমরা উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আছমাউল হোসনা বলেন, বেশিরভাগ সময়ই আমাকে দাপ্তরিক কাজে অফিসে ও বাইরে থাকতে হয়। ফলে ক্লাস নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। তারপরও যতদুর পারি চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়া পর্যাপ্ত শ্রেণী কক্ষ ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র স্বল্পতার কারণে ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মেঝেতে বসে পাঠদান গ্রহণ করছে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানেও বিঘœ ঘটে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। বহুবার স্কুলের সমস্যাগুলো তুলে ধরা হলেও উপরস্থ মহল থেকে সমাধানের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, এখনও স্কুলটি পরিদর্শন করতে পারিনি। দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন