সরকারি নিষেধাজ্ঞা স্বত্তে¡ও হাটহাজারী উপজেলা ঘেষে প্রবাহিত কর্ণফুলী ও হালদা ও সক্তা খালে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন যান্ত্রিক নৌ-চলাচল ও মাছ শিকার বন্ধ হচ্ছে না। ফলে নদীর জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে।
পাশাপাশি হালদা নদীর অঙ্কুরি ঘোনা ও আমতোয়া এলাকায় গত সপ্তাহে ২টি মা মাছ মরে ভেসে ওঠেছিল। তারমধ্যে ১টি ১৫ কেজি ওজনের কাতলা অপরটি ৫ কেজি ওজনের আইড়। মাছ দুটোই ড্রেজারের আঘাতে মারা গেছে বলে চিহ্নিত করেছেন প্রাণী বিষেজ্ঞরা।
হালদা রক্ষা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী সাম্প্রতিক সময়ে এ নদীকে যখন দেশের জাতীয় নদী ঘোষণার দাবিতে সর্বস্তরের মানুষ সোচ্ছার তখন দখল দূষণ আর আঘাতে বিপর্যস্ত জীব বৈচিত্র। নদীর নব্য ও জীব বৈচ্যত্র রক্ষার সাম্প্রতিক সরকারের মৎস্য অধিদপ্তর জাল দিয়ে মাছ ধরার যান্ত্রিক নৌ ও বালুবাহী ড্রেজার চলাচল বালু উত্তোলন, দখল দূষণ কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে গত ১ সপ্তাহ ধরে নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চোখে পড়ে উল্টো চিত্র। নদীতে বালু বাহী ড্রেজার ও যান্ত্রিক নৌ চলাচল বন্ধ করা না হওয়ার কারণে গত ২/৩ বছরের অতি বিপন্ন প্রাণী ডলফিন মারা গেছে আনুমানিক ১৭টির মত। দূষণের ফলে গত বছরের জুন মাসে হাজার হাজার মৃত মাছ ভেসে ওঠার নজিরও রয়েছে। কর্ণফুলী হয়ে হালদার প্রবেশ পথে মা মাছ অবাধে চলাচল করে থাকে। যান্ত্রিক নৌ চলাচল, ঘেরা জাল, বড়শি দিয়ে চলছে মাছ শিকার। আবার বালুর মহাল ইজারা বাতিল করে সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তাও মানছে না অনেকেই।
হালদা নদীর বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ৪/৫টি স্পটে বালু উত্তোলন চলছে। গবেষক ও হালদা রক্ষা কমিটি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, দেশের কোন জেলার নদীর জন্য আলাদা রিচার্জ সেন্টার নেই। একমাত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হালদা রিচার্জ সেন্টার রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিশ্বের সকল নদীতে আনুমানিক মোট ১১ শত ডলফিন বর্তমানে বেঁচে আছে। তার মধ্যে শুধু হালদা নদীতে ডলফিনের সংখ্যা প্রায় ২০০। তার মধ্যে গত দুই বছরের বালুর ড্রেজারে আঘাতে ২০টি ডলফিন মারাও গেছে। হালদা নদীতে জাল, বালু উত্তোলন, ড্রেজার মেশিন বন্ধ করতেই হবে। এইদিকে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রহুল আমিন ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নেয়াজ মোর্শেদ উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মো. আজহারুল আলমসহ প্রতিদিন এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত অচেতন থেকে হালদার পাড়ে অভিযান পরিচালনা করেন। মাছ ধরার দায়ে এই পর্যন্ত কয়েক জনকে ২/৩ মাসের জেল জরিমানাসহ বিপুল পরিমাণ জাল আটক করে পুড়িয়ে দিয়েছে। জব্দ করা হয় বালুর ড্রেজার। কিন্তু এরপরও জাল ফেলা হচ্ছে হালদা নদীতে। হালদা নদীর ডিম ছাড়ার মৌসুম ইতিমধ্যে চলছে। হালদায় ডিম দেওয়া মা মাছের বিচরণ শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় হালদাকে রক্ষা করতেই হবে।
ডিমসংগ্রহকারী মো. কামাল সওদাগর জানান, শ্রীঘই হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাই আগে ভাগে হ্যাচারীগুলো মেরামত করা জরুরি। গত মাসের প্রথম তিথিতে ডিম দেয় নি। পরবর্তী এপ্রিল মাসের ৪/৫ তারিখ আমবশ্যার তিথিতে ডিম দিতে পারে মা মাছ। আর সেই সময়ে না দিলে একই মাসের পূর্ণিমার তিথি ১৯,২০,২১ এই ৩ দিনের মধ্যে মা মাছ ডিম দেওয়ার বেশি সম্ভবনা রয়েছে। সর্বশেষ মে মাসের আমবশ্যার তিথির ৪,৫,৬ তারিখ পুরোদমে ডিম দিতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন