বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

থানচিতে ঝিরি-ঝর্ণা থেকে পাথর উত্তোলন

মো. সাদাত উল্লাহ, বান্দরবান থেকে : | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০২১, ১২:০৪ এএম

বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানচি উপজেলার বিভিন্ন খাল ও ঝিরি-ঝর্ণা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে পানি প্রবাহের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যার ফলে শুষ্ক মৌসুম পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়ে থাকে। হুমকির মুখে পড়েছে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট চক্র সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কারণেই একদিকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পাহাড়ি বিশাল জনগোষ্ঠী। আর উন্নয়ন কাজের ব্যবহার নামে এই সব বোল্ডার পাথর মেশিনে ভেঙে কংক্রিট করে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হচ্ছে। স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট চক্র সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে থানচি উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে পাচার করে যাচ্ছেন।
পাথর ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুছ, কাজী নুরুল আনোয়ার, মো. জসিম উদ্দিন, মো. ইমরান হোসেন, মংক্যসিং মারমা (বিপ্লব মারমা) এই সিন্ডিকেট এর দলটি অবৈধভাবে থানচির বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে পাথর উত্তোলন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের নীল দিগন্ত পর্যটন নিচে অনিল চাকমা পাড়া পাশ্ববর্তী, দাকছৈপাড়া ঝিরি, হাইলমারাপাড়া ঝিরি, শিলা ঝিরি, কনাজিওপাড়া ঝিরি, মগকক্রী ঝিরি। অনিল পাড়া দাকছৈপাড়া ঝিরি হতে বলিপাড়া দাকছৈপাড়া, শিলা ঝিরি থেকে মেনরোয়া পাড়া, হৈকো খুমীপাড়া, পর্দা ঝিরির হাবরু হেডম্যানপাড়া, বোর্ডিংপাড়া, চমিপাড়া, লাকপাইক্ষ্যংপাড়া এর খাওয়ার পানির উৎস হতে পাথর উত্তোলন করছেন, পর্দা ঝিরির এর কাইতংপাড়া, কুংলাপাড়া সিংত্লাংপিপাড়া, এছাড়াও রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের চয়ক্ষ্যং ঝিরি, সালোকক্যা ঝিরি, থাংদয়পাড়া ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলন করেন। থানচি সদর ইউনিয়নের সেরকর পাড়া ঝিরি (তিন্দু ইউনিয়ন) চয়ক্ষ্যং ঝিরি হতে পাথর উক্তোলন করে যাচ্ছেন সিন্ডিকেট এর একটি দল।
থানচি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, পরিবেশ আইনকে অমান্য করে একটি সিন্ডিকেটচক্র এই অবৈধ কাজে সক্রিয় রয়েছে। ঝিরি-ঝর্ণা থেকে নির্বিঘ্নের পাথর উত্তোলনের কারণে ওইসব ঝিরির ও খালের পাথর শূন্য হয়ে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যপূর্ণ সৌন্দর্য্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। পাহাড়ে ভাসমান কোনো পাথর নেই। এসব পাথর পাহাড় কেটে ও মাটি খুঁড়ে পাথর আহরণ করা হচ্ছে। যার কারণে বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তবে যারা পাথর উত্তোলন করেন তাদের কাছে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র কিংবা বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। অপরদিকে পাথর উত্তোলনকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, পাথর উত্তোলনের কোন সরকারিভাবে বৈধ কাগজপত্র নেই। আমাদের পাথর ব্যবসায়ীদের একটি সমিতি আছে, সমিতির সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে আমরা পাথর উত্তোলন করে থাকি। তবে লকডাউনের কারণে পাথর গুলো কোথায়ও সরববরাহ করা যাচ্ছে না এবং কোন শ্রমিক ও কাজে লাগাতে পারছিনা। পাথরগুলো যেখান থেকে তোলা হয়েছে সেখানেই রয়েছে। লকডাউনের কারণে পাথরগুলো বাহিরে নেয়া যাচ্ছে না।
থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি থোয়াইহ্লামং মারমা বলেন, বর্তমান সরকার বান্দরবানে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন। স্থানীয় পাথর ও বালু দিয়ে কাজ করার নিয়ম না থাকলেও উন্নয়নের দোয়াই দিয়ে থানচির বিভিন্ন ঝিরি-ঝর্ণা থেকে যেভাবে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। ভবিষৎতে পাহাড়ের দুর্গম এলাকার মানুষগুলো পানি পানি করে মারা যাবে। কারণ ঝিরি-ঝর্ণা থেকে পাথর উত্তোলনের কারণে ঝিরি-ঝর্ণার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। যার কারণেই পাহাড়ের দুর্গম এলাকাগুলোতে পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তবে যারা পাথর উত্তোলন করে যাচ্ছে তাদের সরকারিভাবে কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। অবৈধভাবে তারা পাথর উত্তোলন করছে। যার কারণে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে।
বান্দরবান পরিবেশ অধিদফতরের সহকারি পরিচালক শ্রীরুপ মজুমদার বলেন, পাথর একটি গুরুত্বপুর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং এইটি আমাদের জনজীবনে প্রয়োজনও আছে। কেউ যদি অবৈধ পাথর আহরণ ও পরিবহন করে থাকে তা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পরিবেশের ভারসাম্য এবং অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যারা পাথর উত্তোলন করছে তাদের সকল কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে দেখবো। যদি অবৈধ পাথর উত্তোলন করে থাকেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে লকডাউনের পরে অভিযানে যাওয়ার কথাও জানালেন এই পরিবেশ কর্মকর্তা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন