ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, পর্যটনশিল্প সমৃদ্ধ ও প্রাচীন নিদর্শণে ধন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে ইত্যাদি ধারণের ধারাবাহিকতায় এবার ধারণ করা হয়েছে পটুয়াখালী জেলার নৈসর্গিক লীলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটায়। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে কেবলমাত্র এই সৈকত থেকেই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। পেছনে সমুদ্র আর দু’পাশে অর্ধ শতাধিক মাছ ধরার নৌকা রেখে কুয়াকাটার ঐতিহ্য তুলে ধরে নির্মিত মঞ্চে হাজার হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ধারণ করা হয় এবারের ইত্যাদি। সব সময় রাতের আলোকিত মঞ্চে ইত্যাদি ধারণ করা হলেও কুয়াকাটার এই প্রাকৃতিক রূপ, সাগরের ফেনিল জলের ঢেউ রাতের বেলায় দেখানো সম্ভব নয় বলে সুন্দরবন, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজারের মত এখানেও গোধূলি লগ্নে ইত্যাদির ধারণ শুরু হয়। আশেপাশে তেমন কোন জনবসতি না থাকলেও অনুষ্ঠান শুরুর আগেই অনুষ্ঠানস্থল কানায় কানায় ভরে যায়। আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ আশেপাশের গাছ ও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মত উপভোগ করেছেন ইত্যাদির নান্দনিক সব পর্ব। শিকড় সন্ধানী ইত্যাদিতে সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষদের খুঁজে এনে তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়। যাতে তাদের কাজ দেখে অন্যেরাও অনুপ্রাণিত হতে পারেন। এছাড়াও গত প্রায় তিন দশক ধরে ইত্যাদি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে অনেক অচেনা-অজানা স্থানকে নিয়ে তথ্য ভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন করছে। এবারের পর্বে রয়েছে পটুয়াখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত-দর্শনীয় ও পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোর উপর তথ্য ভিত্তিক প্রতিবেদন। পটুয়াখালীর সদর উপজেলার নন্দীপাড়ার আবদুর রাজ্জাক বিশ্বাসের সাপের খামারের উপর রয়েছে একটি তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন। ১৯৯৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রচারিত ইত্যাদিতে পটুয়াখালী জেলার বাউফলের ধুলিয়া গ্রামের মোতালেবের বর্তমান গ্রাম উন্নয়ন কর্মকান্ডের উপর রয়েছে একটি তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন। সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া ও তাড়াশ উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম এবং যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার একটি গ্রামে কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক উপায়ে মধু আহরণের উপর রয়েছে একটি ব্যতিক্রমী প্রতিবেদন। কুয়াকাটার নবীনপুর গ্রামের মন্নান মাঝির নিঃস্বার্থ মানবিক কর্মকান্ডের উপর রয়েছে একটি মানবিক প্রতিবেদন। সাগরের মাঝিরা যার নাম দিয়েছেন সাগরবন্ধু। বিদেশি প্রতিবেদনে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার বিধানিক রাজধানী কেপটাউনে অবস্থিত পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য টেবিল মাউন্টেনের উপর একটি বিশেষ প্রতিবেদন।এবারের ইত্যাদিতে মুল গান রয়েছে একটি। যেহেতু ইত্যাদি এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে ধারণ করা হয় এবং সেই অঞ্চলের শিল্পীদের দিয়েই গান করানো হয়, সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ইত্যাদিতে একটি দেশাত্মবোধক গান গেয়েছেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। ‘আমি কথা বলি দেশের মাটির জন্যে, আমার কণ্ঠে গান আসে এই দেশের রূপ লাবন্যে’, খ্যাতিমান গীতিকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথায় গানটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ফরিদ আহমেদ। এছাড়াও পটুয়াখালীকে নিয়ে লেখা একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন পটুয়াখালীরই স্থানীয় নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। গানটির কথা লিখেছেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সুর করেছেন হানিফ সংকেত, সঙ্গীতায়োজন করেছেন মেহেদী। কণ্ঠ দিয়েছেন প্রতিক হাসান ও অনিকা। আর কোরিওগ্রাফি করেছেন মনিরুল ইসলাম মুকুল। দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান পটুয়াখালী ও কুয়াকাটাকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে হাজার হাজার দর্শকের মাঝখান থেকে ৩ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকরা আঞ্চলিক ভাষায় কুয়াকাটার বিভিন্ন দর্শণীয় স্থান নিয়ে লেখা একটি নাট্যাংশে অভিনয় করেন। যা ছিল বেশ উপভোগ্য। নিয়মিত পর্বসহ এবারও রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষè নাট্যাংশ। ভেজালের বেড়াজাল, সংগীতের সঙ্গীন অবস্থা, তথ্য ব্যবসার ব্যাপকতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কুপ্রভাব, তোষামোদে খোশ আমোদে, রান্নাবান্না ও কান্নাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। বরাবরের মত এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন যথারীতি রানা ও মামুন। গণমানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির এই পর্ব একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচার হবে ২৯ মার্চ, শুক্রবার রাত ৮ টার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কস্মেটিকস্ লিমিটেড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন