ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসাছাত্রী ও আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহানকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যার ঘটনায় শোকসন্তপ্ত পরিবারের কাছে যান মাদরাসা শিক্ষকদের একমাত্র অরাজনৈতিক সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী।
এসময় তিনি বলেন, এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা দেশের মাদরাসা শিক্ষার ইতিহাসে অতীতে কখনো ঘটেনি। এটি মাদরাসা শিক্ষা ও শিক্ষকদের চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ ঘটনায় জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত লজ্জিত, মর্মাহত ও ব্যথিত। নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনা শুনে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। এ অবস্থা দেখে তিনি নিজেই কয়েকদিন অস্থির ছিলেন বলে মন্তব্য করেন।
মানুষের মৃত্যু একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এ ধরনের মৃত্যু কারো কাম্য নয়। নুসরাত হারানোর ব্যথা অনুভব করছে সারা দেশের মানুষ। তিনি এলাকাবাসী এবং পরিবারের সদস্যদের এ শোক সহ্য করার মতো নয় বলে মন্তব্য করেন।
মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, অভিযুক্ত প্রিন্সিপালের এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার কঠোর শাস্তি দাবি করেন তিনি। নুসরাতের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানান তিনি। নিহতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দেশের সকল মাদরাসা ও মসজিদে দোয়া করার জন্য জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়।
মাদরাসা প্রিন্সিপাল সিরাজউদ্দৌলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সদস্য নয়। সে জামায়াতের ইসলামের নেতা। জামাতের রাজনীতি করার কারণে সে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামাত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর সংগঠন ‘বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ’ এর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কখনো এ ধরনের অপরাধীদের প্রশ্রয় দেবে না। বর্তমান বা ভবিষ্যত কখনোই প্রশ্রয় দেবো না।
শিক্ষকরা নীতি নৈতিকতা শিক্ষা দেয়। তাদের মাঝে এরকম শিক্ষক তৈরি হলে তা জাতি ও শিক্ষকদের জন্য দুর্ভাগ্য। এদেরকে এখনই চিহ্নিত করতে হবে। এ ধরনের চরিত্রহীনকে শিক্ষকতা থেকে বিদায় করে দিতে হবে। না হয় তাদের অপকর্মে এদেশে মাদরাসা শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এসময় মৌকারা দরবার শরীফের গদীনশীন পীর ও কুমিল্লা জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি নেছার উদ্দিন ওয়ালী উল্লাহী বলেন, এ ঘটনায় মাদরাসা শিক্ষকরা সীমাহীন লজ্জিত ও হতাশাগ্রস্থ। শোকার্ত পরিবারকে সমবেদনা জানানোর কোন ভাষা তার জানা নেই। ইমান ও আমল থেকে অনেক দূরে সরে যাবার কারণে আজ এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আল্লাহর বিধান ও রাসুলের হাদীস মেনে জীবন পরিচালনা করলে এ সামজে এসব বিশৃঙ্খলা থাকতো না বলে তিনি মন্তব্য করেন। রাফির উপর বর্বরতা সারা বাংলাদেশকে চমকে দিয়েছে। বোরকা পরিহিত মাদরাসা ছাত্রীর এমন করুণ পরিণতিতে আজ সারাবিশ্বের বুকে বাংলাদেশ অপমাণিত। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিবের সাথে নুসরাতের বাড়িতে যান ফেনী জেলার নেতৃবৃন্দ। এসময় মহাসচিবের উপস্থিতিতে জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ, শোকগ্রস্থ পরিবারকে নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সহকারী মহাসচিব ও সিলেট বিশ্বনাথ কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নুমান আহমদ। সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আতিকুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ভবানীপুর কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাসান মাহমুদ ও অধ্যাপক কাজী ইসমাইল। কুমিল্লা জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও মৌকারা দরবার শরীফের পীর মাওলানা নেছার উদ্দিন ওয়ালী উল্লাহী, সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুল কুদ্দুছ, যুগ্ম সম্পাদক শাহ মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সলিম উল্লাহ, প্রচার সম্পাদক আনম মোখলেছুর রহমান নোমান, সদস্য মাওলানা মাকছুদুর রহমান, সদস্য মাওলানা নুরুল আলম ফারুকী, মাওলানা জাকারীয়া, মাওলানা আহছান উল্লাহ, আবদুর রব (বিপিএড), মাওলানা আবদুর রহমান। ফেনী জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি মাওলানা হোছাইন আহম্মদ ভূইয়া, সেক্রেটারী মাওলানা নুরুল আবছার ফারুকী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সদর উপজেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি মাওলানা এয়াকুব ফারুকী, সেক্রেটারী মাওলানা আবদুল লতিফ, সাইদকান্দি দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা নুরুন নবী, খাদিজাতুল কোবরা দাখিল মাদরাসা সুপার মাওলানা আবুল কাসেম, ওয়ালীয়াল হায়দায়রীয়া দাখিল মাদরাসা সুপার মাওলানা রফিক প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন