আজ (১০ আগষ্ট) মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ০১টা পর্যন্ত তিনঘন্টা ব্যাপী জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ আলহাজ্ব শাব্বীর আহমদ মোমতাজীর সঞ্চালনায় জমিয়াতের বরিশাল বিভাগের দায়িত্বশীলগণের এক ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার পরিজনের মধ্যে যারা শাহাদাৎ বরণ করেছেন তাঁদের রূহের মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি করোনা ভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী সকলের রূহের মাগফেরাত ও আক্রান্তদের সুস্থ্যতা কামনা করা হয়। জমিয়াতের ইন্তেকালপ্রাপ্ত দায়িত্বশীলগণের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের রূহের মাগফেরাত কামনা করা হয়। বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলা ও মহানগরীর সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকগণসহ নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাগণের মধ্যে বরিশাল বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ এ বৈঠকে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন।
বৈঠকে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পাশাপাশি কিছু দাবী তুলে ধরা হয়। দাবী গুলো হলো-
১। আগামী ১৫ই আগষ্ট সকল মাদরাসায় শিক্ষা মন্ত্রলাণয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালন করা হবে।
২। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাদরাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দাবী জানানো হয়েছে। বিশেষ করে হেফজখনাসমূহ খুলে দেয়া অতিব জরুরী, কেননা হেফজ খানার পাঠদান ধারাবাহিকতা বাধাগ্রস্থ হলে শিক্ষার্থীদের পূর্বের হেফজ হওয়া পাড়া/সূরাসমূহের ইয়াদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলশ্রুতিতে পুনরায় প্রথম থেকে শুরু করতে হয় বিধায় হেফজ সম্পন্ন করতে স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক সময় ব্যয় হয়।
৩। মাদ্রাসার স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদ্রাসা সমূহে প্রাইমারী স্কুলের মত সুযোগ-সুবিধা না দেয়ায় ইবতেদায়ী শাখায় ছাত্রশূণ্যতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, যুগের পর যুগ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকগণ সুবিধা বঞ্চিত ও অবহেলিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্যেও তাঁরা নিজেদের নূন্যতম সম্মানীটুকু পাচ্ছে না। এবং সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তিসহ দুপুরের টিফিন পাচ্ছেনা বিধায় মাদরাসার ফিডার ক্লাস তথা প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়ছে। এ বিষয়সমূহ নিয়ে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন বহুবার দাবী তুললেও আজ পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি। দ্বীনিশিক্ষা তথা মাদরাসা শিক্ষার মান উন্নয়ন ও যুগোপযোগী করণের লক্ষে স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসাসমূহের সমস্যাগুলো অতিদ্রুত সমাধান করা জরুরী।
৪। মাদরাসার গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিকদের প্রভাষক ও সহকারী প্রভাষক মর্যাদা দিয়ে NTRCA কর্তৃক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালুকরায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। সাথে সাথে যেসকল মাদরাসা কর্তৃপক্ষ গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগের জন্য জনবল কাঠামোর নির্দেশনা অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, তাঁদের পূর্বের নিয়মানুযায়ী নিয়োগ সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
৫। স্কুল ও কলেজের জনবল কাঠামোর সাথে মাদ্রাসা জনবল কাঠামোর বৈষম্যসমূহ দূর করার জোর দাবী জানানো হয়।
৬। মহিলা কোটার শর্তের কারণে আরবি প্রভাষক পদে মহিলা নিয়োগ চাপিয়ে দিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। বর্তমানে অনেক পদে উপযুক্ত মহিলা প্রার্থীর অভাবে শিক্ষাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাই সকলের আবেদনের সুযোগ উন্মুক্ত রেখে উপযুক্ত মহিলা আবেদনকারী না থাকলে উক্ত পদে মেধার ভিত্তিতে পুরুষ প্রার্থী নিয়োগ করা প্রয়োজন। তাছাড়া NTRCA এর প্রাথমিক বাছাই ও চূড়ান্ত পরীক্ষায় সাধারণ বিষয়সমূহ কমিয়ে আরবি বিষয়সমূহের উপর জোর দিলে মানসম্মত আরবি প্রভাষক পাওয়া যাবে। আর মহিলা মাদ্রাসায় শতভাগ মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগ দিয়ে পুরুষ মাদ্রাসায় মহিলা শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি শিথিল করার আহ্বান জানানো হয়। বিশেষ করে দেশের দরবার ভিত্তিক মাদরাসাসমূহে মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগ না দেয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানানো হয়।
ভার্চুয়াল সভায় অংশগ্রহণ করেন বরিশাল বিভাগীয় দায়িত্বশীলগণ, সর্বজনাব কেন্দ্রিয় সহ সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, সহ সভাপতি আলহাজ্ব অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দিক বিল্লাহ আল-মাদানী, পিরোজপুর জেলা সভাপতি আলহাজ্ব অধ্যক্ষ ড. মাওলানা সৈয়দ শরাফত আলী ও সাধারণ সম্পাদক সুপার মাওলানা ফারুক আহমদ হাওলাদার (পিরোজপুর), বরগুনা জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা শাহ মোঃ মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ হারুনুর রশীদ (বরগুনা), বরিশাল মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রব (বিভাগীয় সমন্বয়কারী) ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম (বরিশাল মহানগর), বরিশাল জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আবু সাইদ মোঃ কামেল কাওসার, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা ইলিয়াস ও সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা হাসান (বরিশাল জেলা), ভোলা জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক ও সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোবাশ্বিরুল হক নাঈম (বিভাগীয় সদস্য সচিব) (ভোলা), পটুয়াখালী জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হান্নান অজিজী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা শাহ মাহমুদ ওমর জিয়াদ (পটুয়াখালী), ঝালকাঠি জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা গাজী শহিদুল ইমলাম ও সাধারণ সম্পাদক সহঃ অধ্যাপক মাওলানা মাহবুবুর রহমান (ঝালকাঠী), এছাড়াও কেন্দ্রিয় কর্মকর্তা ও সদস্য বৃন্দের মধ্যে সভায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা আব্দুল হালিম মাদানী, ইবতেদায়ী প্রধান মাওলানা ফারুক আহমদ, সহকারী শিক্ষক মোঃ মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।
সভায় চলমান মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশ হেফাজতের নিমিত্বে নিজ নিজ অঙ্গনে থেকে এবং দেশের সকল মসজিদের ইমাম খতিবগণকে আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি তওবা-ইস্তেগফার, বেশী বেশী দরুদ-সালাম পেশ করে এ মহামারী থেকে মুক্তি কামনায় দোয়া অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়। সেইসাথে সরকারী নির্দেশনা মেনে স্বতঃস্ফূর্ত ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করণে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সকল মহানগরী, জেলা, উপজেলা ও থানা নেতৃবৃন্দকে অনুরোধক্রমে নির্দেশ দেয়া হয়। সভা শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবার পরিজনের মধ্যে যারা শাহাদাৎ বরণ করেছেন তাঁদের রূহের মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি করোনা ভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী সকলের রূহের মাগফেরাত, আক্রান্তদের সুস্থ্যতা ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীনসহ সকল নেতৃবৃন্দের সুস্থতা কামনা করে কেন্দ্রিয় সহ-সভাপতি ও ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আলহাজ্ব ড. মাওলানা সৈয়দ শরাফত আলী এর দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে এ সভার সমাপ্তি হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন